Published : 24 Dec 2023, 07:11 PM
চলমান ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের মধ্যে ফেসবুকের মূল কোম্পানি মেটা বিশ্বব্যাপী তার প্ল্যাটফর্মে ফিলিস্তিনপন্থী কনটেন্টকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে সেন্সর করছে। এমনকি ‘ফিলিস্তিনের সমর্থনে শান্তিপূর্ণ মতপ্রকাশ’সহ ফিলিস্তিনপন্থীদের শত শত পোস্ট এবং কনটেন্ট মেটা সরিয়ে নেয় বলেও অভিযোগ উঠেছে।
গাজায় আরোপিত ইসরায়েলের বেআইনি বিধিনিষেধ বিশ্বকে আরও একটি মানবিক বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এক প্রতিবেদনে। ৫১-পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ রয়েছে, এর মাধ্যমে গাজার ২০ লাখেরও বেশি মানুষের জীবন বিপদের মধ্যে পড়েছে, যাদের মধ্যে প্রায় অর্ধেক শিশু।
চলতি বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় এক হাজার দুইশ ইসরায়েলী নিহত হন, যাদের বেশিরভাগই ছিলেন অসামরিক নাগরিক। এরপর গাজায় পাল্টা আক্রমণ করে ইসরায়েল। ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় শিশুসহ ২০ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হন বলে দাবি করেছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
“নৃশংসতা ও নিপীড়ন এরইমধ্যে ফিলিস্তিনিদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে দমিয়ে রেখেছে। এর মধ্যে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে মেটার কঠোর কনটেন্ট সেন্সরশিপ আঘাতের পাশাপাশি অপমানও।” – বলে বিবৃতিতে জানায় হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।
“আর এটা ফিলিস্তিনিদের দুর্দশা মুছে ফেলার কাজকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।”
বিশ্বের ৬০টিরও বেশি দেশের অনলাইন সেন্সরশিপের এক হাজার ৫০টি কনটেন্ট মেটা পর্যালোচনা করার কথা বলেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। প্রতিবেদনে ফিলিস্তিনপন্থী পোস্টগুলোকে সেন্সর করেছে এমন অন্তত একশটি উদাহরণ রয়েছে। এসব ক্ষেত্রে কনটেন্ট অপসারণ, অ্যাকাউন্ট স্থগিত করা বা মুছে ফেলা, কনটেন্টর সঙ্গে জড়িত থাকতে না পারা এবং এ সম্পর্কিত পোস্ট অন্য কাউকে ট্যাগ করতে না পারার মতো ব্যবস্থা নিয়েছে মেটা।
এ বিষয়ে মেটার সঙ্গে যোগাযোগ করেও সাড়া মেলেনি বলে লিখেছে ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেন্ডেন্ট।
এদিকে, ফিলিস্তিনপন্থী কনটেন্ট সেন্সরশিপের অভিযোগ সম্পর্কে তথ্য চেয়ে মার্কিন সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন মেটার সিইও মার্ক জাকারবার্গকে চিঠি পাঠান। এর পরই হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এ প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হলো।
"সামাজিক মাধ্যমগুলো যেন সত্য ও বৈধ কনটেন্ট সেন্সর না করে সেটা আগের চেয়ে এখন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে, যখন সারা বিশ্বের মানুষ এ অঞ্চলের (গাজা) অগ্রগতি সম্পর্কে তথ্য শেয়ার করতে এবং খোঁজ নেওয়ার জন্য অনলাইন মাধ্যমগুলোতে আসেন।” – চিঠিতে লেখেন এলিজাবেথ ওয়ারেন।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এমন বিষয়ও নজরে এনেছে যেখানে ইনস্টাগ্রাম বা ফেইসবুক লাইভের কিছু ফিচারে ‘শ্যাডো ব্যানিং’ আরোপ করেছে মেটা। এতে করে নোটিফিকেশন বন্ধ করে দিয়ে একজন ব্যক্তির পোস্ট, গল্প বা অ্যাকাউন্টের ‘রিচ’ কমিয়ে দেওয়া হয়।
অন্যদিকে, মেটার প্ল্যাটফর্মে আপিল প্রক্রিয়া ত্রুটিপূর্ণ থাকায় একশ’র বেশি ব্যবহারকারী কনটেন্ট বা অ্যাকাউন্ট মুছে ফেলার জন্য আপিল করতে পারেননি। কনটেন্ট বা অ্যাকাউন্ট পুনরুদ্ধারে তাদের জন্য কোনো কার্যকর পথও মেটা খোলা রাখেনি বলে উল্লেখ রয়েছে প্রতিবেদনে।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাটির দাবি, ত্রুটিপূর্ণ কনটেন্ট নীতি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার টুলগুলোর উপর নির্ভরতা এবং ‘অযথা সরকারি প্রভাব’-এর কারণে ফিলিস্তিনিপন্থী পোস্টগুলোকে সরাতে বাধ্য হয়েছে মেটা।
এজন্য মেটা তার ‘ক্ষতিকর সংগঠন ও ব্যক্তি’ (ডিওআই) বিষয়ক নীতি আরোপ করেছে। ডিওআই তালিকাটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মনোনীত নাম অন্তর্ভূক্ত করার কারণে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে চলমান বৈরিতার মধ্যে ফিলিস্তিনপন্থী ন্যায়সঙ্গত বক্তব্যেও ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে মেটা।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, মেটা হিংসাত্মক ও গ্রাফিক কনটেন্টর উপর তার নীতির অপপ্রয়োগ করার পাশাপাশি অবিবেচকের মতো “সংবাদমূল্য” নীতি প্রয়োগ করে ফিলিস্তিনিদের উপর হামলা ও মৃত্যুর খবরের কনটেন্টকে সরিয়ে দিয়েছে। অথচ এসব তথ্যের সংবাদ মূল্য আছে।
প্ল্যাটফর্মে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও রাজনৈতিক আন্দোলনের মতো মতপ্রকাশের সুরক্ষা পাওয়া বক্তব্যে অনুমতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। পাশাপাশি মেটার ডিওআই ও সংবাদমূল্য নীতিকে নতুন করে পর্যালোচনার দাবি করেছে মানবাধিকার সংস্থাটি।