Published : 29 Jul 2023, 08:05 PM
অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সামরিকবাহিনীর নাইজারের ক্ষমতা দখলের জেরে দেশটিতে সবধরনের নিরাপত্তা সহযোগিতা স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন-ইইউ।
ইইউর সহযোগিতা স্থগিতের ঘোষণা আসার কিছুক্ষণ আগে যুক্তরাষ্ট্র উৎখাত হওয়া দেশটির প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বাজোমের প্রতি তাদের ‘অবিরাম সমর্থনের’ ঘোষণা দিয়েছে।
পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোতে ইসলামপন্থি জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর অন্যতম প্রধান মিত্র ছিলেন প্রেসিডেন্ট বাজোম।
গত বুধবার রাজধানী নিয়ামে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে দেশটির প্রেসিডেন্সিয়াল গার্ড কর্তৃক প্রেসিডেন্ট বাজোমকে আটক করার মধ্য দিয়ে নাইজারে অভ্যুত্থানের সূচনা হয়। প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের সদস্যদের শুরু করা এ অভ্যুত্থানে পরে সমর্থন জানায় দেশটির সেনাবাহিনী।
তারপর সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে এক ভাষণে সংবিধান স্থগিত করে দেশের ক্ষমতা দখলের কথা জানানো হয়।
শুক্রবার প্রেসিডেন্সিয়াল গার্ডের প্রধান আবদুরাহমান চিয়ানি নিজেকে অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান হিসেবে ঘোষণা করেছেন। তিনি ওমর চিয়ানি নামেও পরিচিত।
নাইজারের অভ্যুত্থানের প্রশংসা রাশিয়ার ওয়াগনার প্রধানের
নাইজারের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হলেন জেনারেল চিয়ানি
ওই দিন টেলিভিশনে এক ভাষণে চিয়ানি বলেন, নাইজারে বেশ কিছু সমস্যার কারণে তার বাহিনী ক্ষমতার দখল নিয়েছে। এসব সমস্যার মধ্যে দুর্নীতি, নিরাপত্তাহীনতা, অর্থনৈতিক দুর্দশা ছাড়াও অন্যান্য কিছু বিষয় রয়েছে।
প্রেসিডেন্ট বাজোম পশ্চিমা মিত্র ছিলেন। কিন্তু জান্তা শাসক চিয়ানি কার পক্ষ নেবেন সেটা নিয়ে পশ্চিমারা খানিকটা উদ্বিগ্ন। কারণ, কয়েক মাস আগে নাইজারের প্রতিবেশী দুই দেশ বুরকিনা ফাসো ও মালিতে সেনাঅভ্যুত্থানের পর ক্ষমতার দখল নেওয়া জান্তা শাসকরা রাশিয়ার দিকে ঝুঁকে পড়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্স জানিয়েছে, তারা নাইজারের জান্তা সরকারকে স্বীকৃতি দেবে না। সেই দলে যোগ দিলো ইইউও। ইইউর বৈদেশিক নীতি বিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল বলেন, নাইজারের প্রতি ইইউর নিরাপত্তা সহযোগিতা এবং বাজেট বিষয় সব ধরনের সাহায্য তারা অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করছে।
আফ্রিকান ইউনিয়ন থেকে শনিবার নাইজারের সেনাবাহিনীকে ১৫ দিনের মধ্যে ঘাঁটিতে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। পশ্চিম আফ্রিকান আঞ্চলিক ব্লক (ইকোওয়াস) থেকেও এই অভ্যুত্থানের নিন্দা জানানো হয়েছে।
নাইজারের অভ্যুত্থানের নিন্দা, শৃঙ্খলা ফেরানোর আহ্বান বিভিন্ন দেশের
নাইজারে সামরিক অভ্যুত্থান, প্রেসিডেন্ট বন্দি
তবে রাশিয়ার ভাড়াটে সেনাদল ওয়াগনারের প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোজিন অভ্যুত্থানের প্রশংসা করে একে বিজয় বলে বর্ণনা করেছেন।
তিনি বলেন, “নাইজারে যা ঘটেছে তা তাদের ঔপনিবেশিকদের সঙ্গে নাইজারের জনগণের সংগ্রাম ছাড়া আর কিছুই না। ঔপনিবেশিকরা তাদের জীবনাচরণ ও শর্তাবলী নাইজারের জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে এবং কয়েকশত বছর আগে আফ্রিকা যে অবস্থায় ছিল সেখানেই তাদের রেখে দেওয়ার চেষ্টা করেছে।”
সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক এবং মালিসহ আফ্রিকার দেশগুলিতে ওয়াগনারের হাজার হাজার যোদ্ধা রয়েছে বলে মনে করা হয়। যেখানে ওয়াগনারের লাভজনক ব্যবসায়িক স্বার্থ রয়েছে। একইসঙ্গে ওয়াগনার ওই অঞ্চলে রাশিয়ার কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ককেও শক্তিশালী করতে ভূমিকা রাখছে।
অভ্যুত্থানের পর থমথমে ভাব কাটিয়ে নাইজারের রাজধানীতে জনজীবন পুনরায় অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। শনিবার বাজার ও দোকানপাট খোলা ছিল বলে জানিয়েছে বিবিসি। তবে সরকারি কর্মচারীদের বাড়িতে অবস্থান করতে বলা হয়েছে।
অভ্যুত্থান নিয়ে সাধারণ মানুষ মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে।