Published : 06 Jun 2025, 10:06 AM
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্কের কোম্পানিগুলোর সঙ্গে মার্কিন সরকারের করা চুক্তিগুলো বাতিল করার হুমকি দিয়েছেন, অপরদিকে ট্রাম্পকে অভিশংসিত করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন মাস্ক।
বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর প্রেসিডেন্ট এবং শীর্ষ ধনীর গভীর সখ্য এখন সামাজিক মাধ্যমে এক সর্বাত্মক ঝগড়ায় রূপ নিয়েছে।
বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউজের ওভাল দপ্তরে ট্রাম্প টেসলার প্রধান নির্বাহী মাস্কের সমালোচনা করার মধ্য দিয়ে এ শত্রুতা শুরু হয়। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই একসময়ের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কটি প্রকাশ্যে ভেঙে যায়, ট্রাম্প তার সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এবং মাক্স এক্স এ পরস্পরের প্রতি ব্যক্তিগত আক্রমণ শুরু করেন।
ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প বলেন, “আমাদের বাজেটে অর্থ সাশ্রয় করার (হাজার হাজার কোটি ডলার) সহজতম পথ হচ্ছে ইলনের সরকারি ভর্তুকি এবং চুক্তি বাতিল করা।”
এরপরই ওয়াল স্ট্রিটের ব্যবসায়ীরা মাস্কের বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাণ কোম্পানি টেসলার শেয়ার ছেড়ে দিতে শুরু করেন। এতে বৃহস্পতিবার দিন শেষ টেসলার দরের ১৪ দশমিক ৩ শতাংশ পতন ঘটে আর তাতে কোম্পানিটি ১৫ হাজার কোটি ডলার বাজার মূল্য হারায়।
এটি টেসলার ইতিহাসে একদিনে সবচেয়ে বড় দরপতন বলে রয়টার্স জানিয়েছে।
শেয়ার বাজার বন্ধ হওয়ার ঘণ্টা বাজার কয়েক মিনিট পর এক্স এ ‘ট্রাম্পকে অভিশংসিত করা উচিত’ লেখা এক পোস্টে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে মাস্ক বলেন, “হ্যাঁ”।
ট্রাম্পের রিপাবলিকান পার্টির মার্কিন কংগ্রেসের উভয়কক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় প্রেসিডেন্টকে অভিশংসিত করার সম্ভাবনা খুবই কম।
এই দুইজনের বিবাদ শুরু হয় কয়েকদিন আগে যখন ট্রাম্পের ব্যাপক কর কাটছাঁট ও ব্যয় সংক্রান্ত বিলের নিন্দা জানান মাস্ক। মাস্ক এই ব্যয় বিল বাতিল করার জন্য প্রচারণা চালাতে শুরু করেন এবং বলেন, এটি যুক্তরাষ্ট্রের ৩৬ লাখ কোটি ডলারেরও বেশি জাতীয় ঋণ আরও অনেক বেশি বাড়িয়ে তুলবে। মাস্ক যখন এসব বলছিলেন তখন প্রাথমিকভাবে ট্রাম্প তার মুখ বন্ধ রেখেছিলেন।
তিনি মাস্ককে নিয়ে ‘খুব হতাশ’, ওভাল দপ্তরে সাংবাদিকদের কাছে এমন মন্তব্য করে বৃহস্পতিবার ট্রাম্প তার এই নীরবতা ভাঙেন।
ট্রাম্প বলেন, “দেখেন, ইলন ও আমার মধ্যে দারুণ একটি সম্পর্ক ছিল। সেটি আর থাকবে কিনা আমি জানি না।”
ট্রাম্প এমন মন্তব্য করার পর মাস্ক এক্স এ বাড়তে থাকা তীব্র বিদ্রূপাত্মক মেজাজে জবাব দিতে থাকেন।
“আমি না থাকলে ট্রাম্প নির্বাচনে হারতেন। কেমন অকৃতজ্ঞ,” এক্সে লিখেন মাস্ক; যিনি গত বছরের নির্বাচনে ট্রাম্প ও অন্য রিপাবলিকানদের পেছনে প্রায় ৩০ কোটি ডলার ব্যয় করেছিলেন।
আরেক পোস্টে মাস্ক জোর দিয়ে বলেন, ট্রাম্পের স্বাক্ষরিত শুল্ক যুক্তরাষ্ট্রকে চলতি বছরের পরের দিকে মন্দার দিকে ঠেলে দেবে।
টেসলার পাশাপাশি মাস্কের ব্যবসার মধ্যে আছে রকেট কোম্পানি ও সরকারি ঠিকাদার স্পেসএক্স আর এর স্যাটেলাইট ইউনিট স্টারলিংক। মাস্কের মহাকাশ ব্যবসা মার্কিন সরকারের মহাকাশ কর্মসূচীতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
মাস্ক বলেছেন, ট্রাম্পের হুমকির একটি ফল হিসেবে তিনি স্পেসএক্সের ড্রাগন মহাকাশযান প্রত্যাহার করা শুরু করতে পারেন।
বর্তমানে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে মহাকাশচারী পাঠাতে সক্ষম যুক্তরাষ্ট্রের একমাত্র মহাকাশযান হল ড্রাগন।
এর কয়েক ঘণ্টা পর মাস্ক তার কথিত ওই পদক্ষেপের দিকে এগিয়ে না যেতে পারেন বলে ইঙ্গিত দেন। এক্স এ তার এক অনুসারি মাস্ক ও ট্রাম্পকে ‘শান্ত হতে ও কয়েকদিন এসব থেকে বিরত থাকার’ পরামর্শ দেন, এতে সাড়া দিয়ে মাস্ক লিখেন, “ভালো পরামর্শ। আচ্ছা, আমরা ড্রাগন প্রত্যাহার করবো না।”
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উত্তেজনা হ্রাসের আরেকটি সম্ভাব্য ইঙ্গিত দিয়ে পৃথক এক পোস্টে মাস্ক লিখেন, “আপনি ভুল বলেননি।”
ট্রাম্প ও মাস্কের শান্তি স্থাপন করা উচিত, হেজ ফান্ড ব্যবস্থাপক বিল অ্যাকম্যানের এমন পরামর্শে সাড়া দিয়ে মাস্ক ওই পোস্টটি করেন।
আরও পড়ুন: