Published : 23 May 2025, 02:12 PM
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প শ্বেতাঙ্গ দক্ষিণ আফ্রিকানদের নির্বিচার হত্যার প্রমাণ হিসেবে যে ছবিটি প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার সামনে তুলে ধরেছিলেন তা মোটেও দক্ষিণ আফ্রিকার নয়, সেটি ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোতে রয়টার্সের ধারণ করা এক ভিডিও থেকে স্ক্রিনশট হিসেবে নেওয়া হয়েছে।
বুধবার হোয়াইট হাউজের ওভাল দপ্তরে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট রামাফোসার সঙ্গে বৈঠকে ট্রাম্প ওই ছবিসহ ছাপা একটি নিবন্ধ তুলে ধরে বলেন, “এরা সবাই শ্বেতাঙ্গ কৃষক যাদের কবর দেওয়া হচ্ছে।”
কিন্তু প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে, রয়টার্স এই ভিডিওটি ৩ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ করেছিল আর পরবর্তীকালে বার্তা সংস্থাটি ফ্যাক্ট চেক টিম এর সত্যতা নির্ধারণ করেছিল। এই ভিডিওতে কঙ্গোর গোমা শহরে মানবিক সাহায্যকর্মীদের লাশের ব্যাগ তুলতে দেখা যায়। রুয়ান্ডার সমর্থনপুষ্ট এম২৩ বিদ্রোহীদের সঙ্গে প্রাণঘাতী যুদ্ধের পর রয়টার্সের এই ভিডিওটি ধারণ করা হয়েছিল আর ওই ফুটেজ থেকেই ছবিটি নেওয়া হয়েছে।
রয়টার্স জানায়, হোয়াইট হাউজের বৈঠকে ট্রাম্প রামাফোসাকে যে ব্লগ পোস্টটি দেখিয়েছেন সেটি রক্ষণশীল অনলাইন সাময়িকী ‘আমেরিকান থিঙ্কার’ এ প্রকাশিত হয়েছিল। এই সাময়িকীটি দক্ষিণ আফ্রিকা ও কঙ্গোর সংঘাত ও জাতিগত উত্তেজনা নিয়ে নিবন্ধ প্রকাশ করে।
ওই ব্লগ পোস্টে এই ছবির কোনো ক্যাপশন দেওয়া হয়নি কিন্তু ‘ইউটিউবের ভিডিও থেকে নেওয়া’ লেখা রয়েছে এবং সঙ্গে ইউটিউবে কঙ্গো বিষয়ে একটি ভিডিও নিউজ প্রতিবেদনের লিঙ্ক দেওয়া আছে, যার ক্রেডিট রয়টার্সের।
রয়টার্স জানিয়েছে, এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য জানানো অনুরোধে হোয়াইট হাউজ সাড়া দেয়নি। ‘আমেরিকান থিঙ্কার’ সাময়িকীর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ও ওই ব্লগ পোস্টের লেখক অ্যান্ড্রিয়া ইউডবার্গ রয়টার্সের জিজ্ঞাসার লিখিত উত্তরে জানিয়েছেন, ট্রাম্প ‘ছবিটিকে ভুলভাবে শনাক্ত’ করেছেন।
তবে তিনি আরও জানিয়েছেন, ওই ব্লগ পোস্টটিতে যেটিতে রামাফোসার সরকারকে ‘অকার্যকর, বর্ণ-প্রভাবিত মার্কসবাদী সরকার’ বলা হয়েছে, তাতে ‘শ্বেতাঙ্গ দক্ষিণ আফ্রিকানদের উপর ক্রমবর্ধমান চাপের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে’।
যে ভিডিও থেকে ছবিটি নেওয়া হয়েছে তাতে গোমায় এম২৩ এর আক্রমণের পর একটি গণকবরের দৃশ্য ধারণ করা হয়েছে। রয়টার্সের ভিডিও সাংবাদিক জাফ্ফার আল কাতান্তাই ভিডিওটি ধারণ করেছিলেন।
আল কাতান্তাই বলেছেন, “ওই দিন সাংবাদিকদের জন্য সেখানে যাওয়া অত্যন্ত কঠিন ছিল। আমাকে ভিডিও করার অনুমতি পেতে এম২৩ এর সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করতে হয়েছিল আর রেডক্রসের সঙ্গে সমন্বয় করতে হয়েছিল।”
আল কাতান্তি জানান, ট্রাম্পকে তার ভিডিও থেকে নেওয়া ছবিসহ নিবন্ধটি ধরে থাকতে দেখে তিনি হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন।
কাতান্তি বলেন, “পুরো বিশ্বের সামনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আমার ছবি ব্যবহার করছেন যা আমি ডিআরসিতে ধারণ করেছিলাম, সেটি ব্যবহার করছেন প্রেসিডেন্ট রামাফোসাকে তর্কে পরাভূত করার চেষ্টায় যে তার দেশের শ্বেতাঙ্গ লোকজনকে কৃষ্ণাঙ্গ মানুষরা হত্যা করছেন।”
গত কয়েক মাস ধরে ট্রাম্প দক্ষিণ আফ্রিকার ভূমি আইন, পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ে অবিরাম সমালোচনা করে আসছেন আর দেশটির শ্বেতাঙ্গ সংখ্যালঘুদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকা এসব সমালোচনা ও অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করলেও এতে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক নাজুক হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক মেরামত করার আশা নিয়ে চলতি সপ্তাহে ওয়াশিংটন সফর করেন রামাফোসা।
টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত দুই প্রেসিডেন্টের ওভাল দপ্তরের বৈঠকে ট্রাম্প রামাফোসাকে একটি ভিডিও দেখান। এটি দেখিয়ে তিনি বলেন, ভিডিওতে দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের গণহত্যার প্রমাণ প্রদর্শিত হয়েছে।
ট্রাম্পের মন্তব্যে এক সময়ে অন্তত এক দশক ধরে বিশ্বব্যাপী অতি ডানপন্থি ডিজিটাল স্পেস ফোরামগুলোতে প্রচারিত ষড়যন্ত্র তত্ত্বের প্রতিধ্বনি শোনা যায়, যা মিথ্যা দাবির ওপর প্রতিষ্ঠিত। ট্রাম্পের মিত্র দক্ষিণ আফ্রিকান বংশোদ্ভূত ইলন মাস্ক এর সোচ্চার সমর্থক ছিলেন। ওভাল দপ্তরে বৈঠকটি চলাকালে মাস্কও সেখানে ছিলেন।
এই ভিডিও দেখানোর পর ট্রাম্প কিছু ছাপা নিবন্ধ হাতে নিয়ে একটার পর একটা উল্টে দাবি করেন, সেগুলোতে শ্বেতাঙ্গ দক্ষিণ আফ্রিকানদের হত্যার বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। এ সময় তিনি বলেন, “মৃত্যু, মৃত্যু, মৃত্যু, ভয়ানক মৃত্যু”।
আরও পড়ুন:
ট্রাম্পের ‘শ্বেতাঙ্গ গণহত্যার’ মিথ্যা দাবির মোকাবেলা করলেন রামাফোসা
ওভাল অফিসে ‘দ্বিতীয় অ্যামবুশ’, ট্রাম্পের মুখোমুখি হতে ‘দুইবার ভাববেন’ বিশ্বনেতারা