Published : 08 Jun 2025, 08:28 PM
ফের অশান্ত ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় মণিপুর রাজ্য। অশান্তির কেন্দ্রবিন্দু রাজধানী ইম্ফল। শনিবার সন্ধ্যায় প্রতিবাদকারীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর মুখোমুখি সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে রাজধানী।
ঘটনার জেরে বিষ্ণুপুর জেলায় জারি করা হয় কারফিউ। পাশাপাশি, ইম্ফল পূর্ব, ইম্ফল পশ্চিম, থৌবাল ও কাকচিং জেলায় পাঁচ জনের বেশি মানুষের জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
ঘটনার পর রাত প্রায় ২টা নাগাদ মণিপুর পুলিশ তাদের এক্স অ্যাকাউন্টে জানায়, ইন্টারনেট ও মোবাইল ডেটা পরিষেবা সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে কারফিউ ও নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত নির্দেশিকার অনুলিপিও প্রকাশ করা হয়েছে।
পাঁচ দিনের জন্য পাঁচ জেলায় ইন্টারনেট ও মোবাইল ডেটা পরিষেবা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে মণিপুরের সরকার, যাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়।
‘দ্য হিন্দুস্তান টাইমস’ পত্রিকা জানায়, ঘটনার সূত্রপাত একটি গ্রেপ্তারকে কেন্দ্র করে। শনিবার মেইতেই গোষ্ঠীভুক্ত সংগঠন আরামবাই তেংগোলের পাঁচ স্বেচ্ছাসেবককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
খবর ছড়িয়ে পড়তেই একদল বিক্ষোভকারী জড়ো হয় পশ্চিম ইম্ফলের কোয়াকেইথেল পুলিশ পোস্টের সমানে। গুঞ্জন ছড়ায় ওই পোস্টেই আটকে রাখা হয়েছে গ্রেপ্তারকৃতদেরকে।
অবিলম্বে তাদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভকারীরা বিক্ষোভ শুরু করে। ভাঙচুর চালানো হয় ওই পুলিশ পোস্টে। বিক্ষুব্ধ জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কয়েক রাউন্ড গুলি চালিয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
দুই পক্ষের সংঘর্ষে দুই সাংবাদিক-সহ তিন জন আহত হন। এরপরই রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে অশান্তির আগুন ছড়ায়। কেবল ইম্ফল নয়, আশপাশের মেইতেই অধ্যুষিত এলাকায় শুরু হয় বিক্ষোভ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে র্যাফ, আধাসেনাও নামানো হয়।
সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসাবে মনিপুরজুড়ে ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যাতে কোনও রকম গুজব বা হিংসাত্মক বক্তব্য না ছড়াতে পারে সেজন্য সতর্ক পুলিশ ও প্রশাসন।
রোববার সকাল থেকে মণিপুরে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। নতুন উত্তেজনা ছড়ানোর আশঙ্কায় আগাম ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ।
ওদিকে, আরামবাই তেংগোল শনিবার রাতের ঘটনার প্রতিবাদে রোববার থেকে ১০ দিন মণিপুর বন্ধের ডাক দিয়েছে। রাস্তাঘাটে যান চলাচল বন্ধের হুঁশিয়ারিও দিয়েছে তারা।
২০২৩ সাল থেকেই কুকি ও মেইতেই গোষ্ঠীর দ্বন্দ্বে অশান্ত মণিপুর। অশান্তি ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছিলেন সেই সময়কার এন বীরেন সিংহ সরকার, এমন অভিযোগ বিরোধীদের। গত ফেব্রুয়ারি মাসে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান বীরেন।
ফলে মণিপুরে জারি হয় রাষ্ট্রপতি শাসন। বর্তমানে এই রাজ্যের অভিভাবকের ভূমিকা পালন করছেন রাজ্যপাল অজয় ভল্লা। রাষ্ট্রপতি শাসনে মণিপুরে শান্তি ফিরবে বলে অনেকেই আশা করলেও বাস্তবে তা হয়নি। বার বার রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে উত্তেজনা ছড়িয়েছে।