Published : 02 Jan 2024, 04:13 PM
জাপানে নতুন বছরের প্রথমদিনে শক্তিশালী ভূমিকম্পে অন্তত ৪৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। বহু ভবন উল্টে পড়েছে, রাস্তা, অবকাঠামো ধসে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ভূমিকম্পের পর থেকে হাজার হাজার ঘরবাড়ি বিদ্যুৎবিহীন হয়ে রয়েছে।
সোমবার স্থানীয় সময় বিকাল ৪টা ১০ মিনিটের দিকে (০৭:১০ জিএমটি) ৭ দশমিক ৬ মাত্রার ভূমিকম্পটি জাপানের মধ্যাঞ্চলে আঘাত হানে। তারপর থেকে আরও প্রায় ২০০ বারের মতো পরাঘাত অনুভূত হয়েছে। যেগুলোর মাত্রা ছিল ৩ থেকে ৬ দশমিক ১। আগামী অন্তত এক সপ্তাহের মধ্যে আরও বড় ভূমিকম্প হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছে দেশটির আবহাওয়া অধিদপ্তর।
ভূমিকম্পের পর জাপানের পশ্চিম উপকূলের কয়েকটি অংশে সুনামি হয়েছে। ভূমিকম্পের পর সুনামি সতর্কতা জারি করা হলে উপকূলীয় কিছু এলাকার বাসিন্দারা উঁচু স্থানে সরে যায়। পরে সুনামির ঢেউয়ে কিছু গাড়ি ও বাড়ি সাগরে ভেসে যায়, জানিয়েছে রয়টার্স।
ভূমিকম্পের কারণে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া এলাকাগুলোতে পৌঁছতে মঙ্গলবার জাপানের উদ্ধারকারী দলগুলোকে সংগ্রাম করতে হচ্ছিল। ভূমিকম্পে ইশিকাওয়া প্রিফেকচারের নোতো উপদ্বীপ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সারা দেশ থেকে সামরিক বাহিনীর সদস্য, দমকল কর্মী ও পুলিশ কর্মকর্তাসহ তিন হাজার উদ্ধার কর্মী ওই এলাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছে।
কিন্তু ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় ও রাস্তাগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় উদ্ধার তৎপরতা বিঘ্নিত হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ক্ষয়ক্ষতির সম্পূর্ণ পরিমাণ নির্ণয় করা কঠিন বলে মনে হচ্ছে তাদের।
মঙ্গলবার দুর্যোগ নিয়ে এক জরুরি বৈঠকে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা বলেছেন, “ভূমিকম্পে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের খুঁজে বের করা ও উদ্ধার করা সময়ের বিরুদ্ধে একটি যুদ্ধ।”
কিশিদা জানান, রাস্তাগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ায় নোতো উপদ্বীপের উত্তরপ্রান্তে পৌঁছনো উদ্ধারকারীদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। ওই এলাকায় চালানো হেলিকপ্টার জরিপে অনেক জায়গায় আগুন জ্বলতে দেখা গেছে আর ভবন ও অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি দৃশ্যমান হয়েছে।
তার সরকারের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, প্রায় ১২০ জনের মতো মানুষ উদ্ধার পাওয়ার জন্য অপেক্ষায় আছেন।
ইশকাওয়া প্রিফেকচারের বহু রেল পরিষেবা, ফেরি ও ফ্লাইট স্থগিত করা হয়েছে। নোতো বিমানবন্দরের রানওয়েতে বহু ফাটল দেখা দেওয়ায় সেটি বন্ধ রাখা হয়েছে। বিমানবন্দরে প্রবেশের রাস্তা ও এর টার্মিনাল ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিমানবন্দরটিতে ৫০০ জনেরও বেশি মানুষ আটকা পড়ে আছে।
ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলের কাছে ছোট শহর সুজুর পাঁচ হাজারের মতো বাড়ির মধ্যে প্রায় এক হাজার ধ্বংস হয়ে গেছে বলে মেয়র মাসুহিরো ইজুমিয়া জানিয়েছেন। পরিস্থিতিকে ‘বিপর্যয়কর’ বলে বর্ণনা করেছেন তিনি।
ইশিকাওয়ার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভূমিকম্পে ৪৮ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে এ পর্যন্ত নিশ্চিত হয়েছে তারা। এদের মধ্যে অনেকের মৃত্যু হয়েছে ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলের নিকটবর্তী শহর ওয়াজিমায়। এতে এটি ২০১৬ সালের পর থেকে জাপানের সবচেয়ে প্রাণাঘাতী ভূমিকম্পে পরিণত হয়েছে।
আরও বহু মানুষ আহত হয়েছে। মঙ্গলবার কর্তৃপক্ষ বেশ কয়েকটি শহরে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছিল। পাশাপাশি ধসে পড়া ভবনগুলো থেকে লোকজনকে উদ্ধারের চেষ্টা করছিল।
ওয়াজিমা শহরের বাসিন্দা শোইচি কোবায়েশি (৭১) মঙ্গলবার বলেন, “এর আগে কখনো এতো শক্তিশালী ভূমিকম্পের মুখে পড়িনি।”
ভূমিকম্প যখন শুরু হয় তখন কোবায়েশি তার স্ত্রী ও ছেলের সঙ্গে নতুন বছর উদযাপনের জন্য প্রস্তুত করা খাবার খাচ্ছিলেন। ভূমিকম্প শুরু হওয়ার পর তাদের খাবার ঘরের সব আসবাব ছিটকে পড়ে এলোমেলো হয়ে যায়।
তিনি বলেন, “পরাঘাতগুলোর কারণে সোজা হয়ে দাঁড়াতেও পারছিলাম না।”
তিনি জানান, তাদের বাড়ি খুব বাজেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সেখানে আর ফিরতে পারেননি তারা, সোমবার রাত তাদের গাড়িতেই ঘুমাতে হয়েছে।
আরও খবর:
জাপানে ভূমিকম্প: হাজারো মানুষ রাত কাটাচ্ছে আশ্রয়কেন্দ্রে