Published : 18 Jun 2024, 04:53 PM
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে একটি মালবাহী ট্রেন পেছন দিক থেকে সজোরে ধাক্কা দেওয়ার পর যাত্রীবাহী ট্রেন কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের চারটি বগি লাইনচ্যুত হয়েছে আর এ ঘটনায় অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন।
সোমবার স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটের দিকে নিউ জলপাইগুড়ির কাছে দুর্ঘটনাটি ঘটে বলে জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম।
প্রাথমিক অনুসন্ধানে এই দুর্ঘটনার মূল কারণ হিসাবে নির্দেশ করা হয়েছে ‘মানুষের ভুল এবং সংকেতের ব্যর্থতাকে’।
ভারতীয় রেল বোর্ডের সোমবারের প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, মালবাহী ট্রেনটি একটি ত্রুটিপূর্ণ স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল পদ্ধতির অধীনে চলছিল আর কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসকে ধাক্কা দেওয়ার আগে ট্রেনটি গতিসীমাও নির্দিষ্ট সীমার চেয়ে বেশি ছিল।
যখন স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি কাজ করে না, তখন রেলওয়ে প্রটোকল অনুযায়ী টিএ৯১২ বলে পরিচিত একটি লিখিত আদেশ দিতে হয়। এই আদেশ ট্রেন চালকদের ত্রুটিপূর্ণ সিগন্যাল পদ্ধতির সব রেড সিগন্যাল পার হয়ে যাওয়ার কর্তৃত্ব দেওয়া হয়।
দেশটির গণমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, এ বিষয়ে ভারতের রেলওয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
রেলওয়ে প্রোটোকল টিএ ৯১২ নামে পরিচিত দস্তাবেজটি ট্রেন চালকদের সিগন্যালিং ত্রুটির কারণে সমস্ত লাল সংকেত পাস করার অনুমতি দেয় যদি তারা কঠোরভাবে অন্যসব নিরপত্তা ব্যবস্থা মেনে চলে। এক্ষেত্রে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস ও মালবাহী ট্রেন, উভয়কেই টিএ৯১২ ইস্যু করা হয়েছিল। ইস্যু করা এই টিএ৯১২-র ছবিও গণমাধ্যমে এসেছে।
রেলওয়ের পদ্ধতি অনুযায়ী, টিএ ৯১২ এর অধীনে চালকদের প্রতিটি ত্রুটিপূর্ণ সিগন্যালে এক মিনিটের জন্য থামতে হবে তারপর সর্বোচ্চ ১০ কিলোমিটার গতিতে এগিয়ে যেতে হবে। উপরন্তু, পূর্ববর্তী ট্রেনটি সিগন্যাল ক্লিয়ার না করলে পর্যাপ্ত থামার দূরত্ব নিশ্চিত করতে তাদের অবশ্যই পূর্ববর্তী ট্রেন থেকে ১৫০ মিটার ব্যবধান বজায় রাখতে হবে। কিন্তু এ ঘটনায় মালবাহী ট্রেনটির চালক এসব গুরুত্বপূর্ণ শর্ত লঙ্ঘন করেছেন।
টিএ ৯১২ অনুযায়ী কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস নয়টি স্বয়ংক্রিয় সংকেত অতিক্রম করার অনুমতি পেয়েছিল। এ ট্রেনটি নয়টি সংকেত অতিক্রম করার পরে আরও এগিয়ে যাওয়ার জন্য নতুন ছাড়পত্রের অপেক্ষায় থেমেছিল।
রেলওয়ে বোর্ড জানায়, ত্রুটিপূর্ণ স্বয়ংক্রিয় সিগন্যালিং ব্যবস্থার কারণে রাঙাপানি ও চত্বরহাট রেলস্টেশনের মধ্যে মালবাহী ট্রেনের চালককে রেড সিগন্যাল পার করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এই ট্রেনের গতি এমন পরিস্থিতিতে নির্ধারিত সীমা ছাড়িয়ে গেছে।
মালবাহী ট্রেনের চালককে রাঙাপানির স্টেশন মাস্টার টিএ ৯১২দিয়ে ৯টি রেড সিগন্যাল অতিক্রম করার অনুমতি দেন।
দুর্ঘটনার দিন সোমবার ভোর ৫টা ৫০ মিনিট থেকে স্বয়ংক্রিয় সিগন্যালিং ব্যবস্থায় ত্রুটি দেখা দেওয়ায় এই অনুমোদন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
সকাল ৮টা ৪২ মিনিটে মালবাহী ট্রেন জিএফসিজে রাঙাপানি থেকে ছেড়ে গিয়ে সকাল ৮টা ৫৫ মিনিটে সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের পেছনে ধাক্কা দেয়।
ফলে যাত্রীবাহী ট্রেনটির গার্ডের বগি, দুটি মালবাহী বগি ও একটি সাধারণ যাত্রীবাহী বগি লাইনচ্যুত হয়।
নিহতদের মধ্যে মালবাহী ট্রেনের চালকও আছেন, যিনি বাধ্যতামূলক গতির বিধিনিষেধ অনুসরণ করেননি আর তার ফলে ঘটে এই দুর্ঘটনা ।
কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের চালক সিগন্যালিং ত্রুটির সময় প্রয়োজনীয় সুরক্ষা নিয়ম মেনে চলেন। তিনি এক মিনিটের জন্য সমস্ত লাল সংকেত থামেন এবং প্রতি ঘন্টায় নির্ধারিত ১০ কিলোমিটার গতিতে এগিয়ে যান।
কিন্তু নিয়ম না মান মালবাহী ট্রেনের চালক অনুমোদিত সীমার চেয়ে বেশি গতিতে এগিয়ে গিয়ে যাত্রীবাহী ট্রেনটিকে ধাক্কা মারেন।
টিএ ৯১২ কর্তৃপক্ষের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে স্বয়ংক্রিয় সিগন্যালিং ব্যবস্থা ব্যর্থ হয়েছে।
রেলওয়ে বোর্ড বলেছে যে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে, লাল সংকেতের মুখোমুখি হওয়া ট্রেনটিকে দিনের বেলা এক মিনিট এবং রাতে দুই মিনিটের জন্য থামতে হবে, ভাল দৃশ্যমানতা পরিস্থিতিতে ১৫ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা এবং কম দৃশ্যমানতায় ১০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা গতিতে চরম সতর্কতার সাথে এগিয়ে যেতে হবে।
এই নিয়ম সত্ত্বেও, মালবাহী ট্রেনটি অনুমোদিত গতি ছাড়িয়ে যায়, যার ফলে বিপর্যয়কর সংঘর্ষ ঘটে। মালবাহী ট্রেনটি ঠিক কত গতিতে চলছিল তা রেলওয়ে বোর্ডের পক্ষ থেকে প্রকাশ করা হয়নি।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যাত্রী সুরক্ষায় অবহেলা এবং সংঘর্ষ বিরোধী ব্যবস্থা কার্যকরভাবে প্রয়োগ করতে ব্যর্থতার জন্য রেল মন্ত্রাণালয়ের সমালোচনা করেছেন।
তার অভিযোগ, রেলওয়ে সুরক্ষা ব্যবস্থার উন্নতির চেয়ে ভাড়া বৃদ্ধির দিকেই বেশি মনোযোগ দিয়েছে।
আরও পড়ুন: