Published : 16 Jun 2025, 08:38 PM
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত কাছারি বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় কলকাতায় বাংলাদেশ ডেপুটি হাই কমিশন অভিমুখে বিক্ষোভ মিছিল করেছে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি।
সোমবার শিয়ালদহ স্টেশন থেকে দুপুর ৩টায় বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন বলে পশ্চিমবঙ্গের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে।
বিক্ষোভের একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়েছে বিজেপির পশ্চিমবঙ্গ শাখার ফেইসবুকে পেইজে। সেখানে ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে দলটির নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মিছিল করতে দেখা গেছে। সেখানে প্রায় সাড়ে তিনশ থেকে চারশজন বিক্ষোভে যোগ দেন।
ভিডিওটির ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, “বিশ্ববন্দিত নোবেলজয়ী বাংলা ও বাঙালির সংস্কৃতির আত্মা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অস্তিত্ব মুছে ফেলার বিরুদ্ধে বিজেপির ডাকে বাংলাদেশ উপদূতাবাস চলো অভিযান।”
আরেকটি ভিডিওতে সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে মিছিল আটকে দিতে দেখা গেছে পুলিশকে। মিছিলে অংশ নেন কলকাতা দক্ষিণ জেলা বিজেপির সভাপতি অনুপম ভট্টাচার্য, কলকাতা উত্তর জেলা বিজেপির সভাপতি তমোঘনা ঘোষ, পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির মহিলা মোর্চার ফাল্গুনী পাত্র, আসানসোল দক্ষিণের বিজেপি এমএলএ অগ্নিমিত্র পাল ও হুগলির সাবেক এমপি লকেট চ্যাটার্জি।
কলকাতা ২৪/৭ লিখেছে, এদিন দিল্লিতেও বিজেপি একটি প্রতিবাদ কর্মসূচি করেছে। দিল্লি বিজেপির রাজ্য সভাপতি বীরেন্দ্র সচদেবা তিন মূর্তি চক থেকে বাংলাদেশ হাই কমিশনের দিকে একটি প্রতিবাদ মিছিলের নেতৃত্ব দিয়েছেন। বিজেপি নেতারা কাছারি বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনাকে ‘নৈতিকতার উপর আঘাত’বলে বর্ণনা করছেন।
গত ৮ জুন এক দর্শনার্থী পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কাছারি বাড়িতে বেড়াতে যান। সেখানে মোটরসাইকেল পার্কিং ফি নিয়ে গেইটের এক কর্মচারীর সঙ্গে তার বিতণ্ডা হয়। পরে সেই দর্শনার্থীকে অফিস কক্ষে আটকে রেখে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ ওঠে।
ওই ঘটনার প্রতিবাদে ১০ জুন উপজেলা সদরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ হয়। এরপর কাছারি বাড়ির পাশ দিয়ে মিছিল নিয়ে যাওয়ার সময় একদল উত্তেজিত লোকজন অডিটোরিয়ামে ভাঙচুর চালায় এবং কর্মীদের মারধর করেন।
এরপর ১১ জুন থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কাছারি বাড়িতে দর্শনার্থীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। সেদিন দুপুরে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের তিন সদস্যের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ দিনই কাছারি বাড়ির কাস্টোডিয়ান হাবিবুর রহমান ভাঙচুর ও মারধরের থানায় মামলা করেন। এজাহারে ১০ জনকে আসামি করেন। নাম ছাড়া আরও আসামি করা হয় ৫০-৬০ জনকে। এরপর ১৩ জুন দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয় কাছারি বাড়ি।
হামলা-ভাঙচুরের ঘটনাকে ‘উগ্রবাদীদের ধারাবাহিক প্রচেষ্টার’ অংশ বলে বর্ণনা করেছে ভারত।
গত ১২ জুন সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, “বাংলাদেশে এ ধরনের ঘটনা ‘পুনরাবৃত্তিমূলক বৈশিষ্ট্যে’ পরিণত হয়েছে। আমরা গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পৈত্রিক বাড়িতে ঘৃণ্য হামলা এবং ভাঙচুরের কঠোর নিন্দা জানাই।
“রবীন্দ্র কাছারি বাড়ি হিসাবে ঐতিহাসিকভাবে পরিচিত বাড়িটির অবস্থান বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জ জেলায়। এই সহিংস কর্মকাণ্ডে নোবেলজয়ীর স্মৃতি এবং বাংলাদেশে তিনি যে অন্তর্ভুক্তিমূলক দর্শন ও শিক্ষার প্রচার করেছেন, তার প্রতি অবমাননা। বাংলাদেশে সহনশীলতার প্রতীকগুলোকে মুছে দিতে এবং সমকালীন সংস্কৃতি ও সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারকে ধ্বংস করতে উগ্রবাদীদের পদ্ধতিগত যে প্রচেষ্টা, এই হামলা সেই বিস্তৃত ধারারই অংশ।”
আরও পড়ুন-
রবীন্দ্র কাছারি বাড়ির ঘটনাকে 'উগ্রবাদীদের' হামলা বলল ভারত
রবীন্দ্র কাছারি বাড়িতে ভাঙচুরের মামলায় গ্রেপ্তার ২
দর্শনার্থীদের জন্য আবার খুলে দেওয়া হলো রবীন্দ্র কাছারিবাড়ি