Published : 27 Jun 2025, 12:38 PM
ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার পর প্রথম প্রকাশ্য ভাষণে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি বলেছেন, তেহরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা করে যুক্তরাষ্ট্র ‘কোনো কিছু অর্জন করতে পারেনি’।
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিতে বিঘ্ন ঘটানোর লক্ষ্যে চালানো ওই হামলাগুলোতে ‘উল্লেখ করার মতো কিছু অর্জিত হয়নি’ মন্তব্য করার পাশাপাশি বৃহস্পতিবার তিনি কাতারে মার্কিন বিমানঘাঁটিতে চালানোর পাল্টা হামলাকে ‘কঠোর আঘাত’ বলেও অভিহিত করেছেন।
বিবিসি লিখেছে, এমন এক সময় আয়াতুল্লাহ খামেনির এই মন্তব্য এল যখন মার্কিন হামলায় ইরানের পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে ওয়াশিংটন নিজেদের মূল্যায়নে বেশ জোরের সঙ্গে বলছে।
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ বলেছেন, তাদের অভিযানে যে ইরানের ‘পারমাণবিক কর্মসূচির ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, বহু বছর পিছিয়ে দিয়েছে’ তা যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের জোগাড় করা গোয়েন্দা তথ্য বলছে।
এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পও বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের হামলা ইরানের মূল তিন পারমাণবিক স্থাপনাকে ‘পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন’ করে দিয়েছে।
ক্ষয়ক্ষতি ধারণার চেয়ে কম হয়েছে, অনামা মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বিভিন্ন খবরে যে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, তার ব্যাপক সমালোচনাও করেছেন রিপাবলিকান এ প্রেসিডেন্ট।
ঊর্ধ্বতন জেনারেল ড্যান কেইনকে সঙ্গে নিয়ে পেন্টাগনে এক সংবাদ সম্মেলনে হেগসেথ বলেছেন, তাদের অভিযান ছিল ‘ঐতিহাসিকভাবে সফল’ যা ‘ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থাপনাগুলোকে অকার্যকর করে দিয়েছে’।
সাংবাদিকদের সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ের এক পর্যায়ে তিনি বলেন, এমন কোনো গোয়েন্দা তথ্যের কথা যুক্তরাষ্ট্র ‘জানে না’, যেখানে হামলার আগে ফরদো স্থাপনা থেকে ইরান সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম সরিয়ে নিয়েছে বলে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।
মাটির অনেক গভীরে অবস্থিত এ ফরদো স্থাপনাটি ‘অকার্যকর করে দিতে’ যুক্তরাষ্ট্র রোববারের ওই হামলায় খুবই শক্তিশালী ‘বাঙ্কার-বিধ্বংসী’ বোমা ব্যবহার করেছিল।
গত ১৩ জুন ইসরায়েল আচমকা ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা শুরু কররে খামেনি লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যান।
এরপর থেকে শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটির সর্বোচ্চ এ ধর্মীয় নেতা একটি বাঙ্কারে আছেন এবং তার সঙ্গে যোগাযোগ সীমিত বলে একাধিক অসমর্থিত খবরে বলা হলেও তার অবস্থান নিয়ে নানান জল্পনা-কল্পনা ছিল।
বৃহস্পতিবারও তিনি কোথা থেকে ভাষণ দিয়েছেন তা খোলাসা করেনি ইরানি কর্তৃপক্ষ। তিনি নিরাপদ আশ্রয়ে ছিলেন বলে দিনকয়েক আগে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা স্বীকার করে নিয়েছিলেন।
ভিডিও ভাষণে খামেনি ইরানে ফের হামলা হলে মধ্যপ্রাচ্যের মার্কিন ঘাঁটিতে আরও হামলা চালানোরও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সংঘর্ষে ‘ইরানই জয়ী হয়েছে’ বলেও দাবি করেছেন।
ইসলামি প্রজাতন্ত্রটির সর্বোচ্চ এ ধর্মীয় নেতা বলছেন, পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা নিয়ে ট্রাম্প যা বলছেন, তা ‘অতিরঞ্জিত’।
“তারা কিছুই অর্জন করতে পারেনি, তাদের যে লক্ষ্য তা পূরণ করতে পারেনি,” বলেছেন তিনি।
কাতারে মার্কিন ঘাঁটিতে হামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “(ইরানে) হামলা হলে এ ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতে আরও ঘটবে, তাতে নিশ্চিতভাবেই শত্রু ও আগ্রাসনকারীদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবে।”
কাতারের মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে ইরানের এ হামলায় কেউ নিহত হয়নি বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। হামলার ব্যাপারে ইরান আগেই জানিয়ে দিয়েছিল বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প। তেহরানের ক্ষেপণাস্ত্রে মার্কিন ঘাঁটিরও কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে দাবি পেন্টাগনের।
এখন ইরানকে আলোচনার টেবিলে ফেরাতে যুক্তরাষ্ট্র অনেকগুলো বিকল্পের কথা ভাবছে বলে সিবিএস নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এসব বিকল্পের মধ্যে তেহরানের বেসামরিক, উচ্চ মাত্রায় সমৃদ্ধ নয় এমন পারমাণবিক কর্মসূচির জন্য তহবিল দেওয়ার ভাবনাও আছে।
তবে বৃহস্পতিবার ইরানের রাষ্ট্রীয় টিভিতে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার পরিকল্পনা নেই তাদের।