Published : 11 Jan 2017, 11:43 AM
বাংলার ঋতুবৈচিত্র উপভোগ করতে হলে গ্রামই উত্তম। সেখানে প্রকৃতির রূপ রস গন্ধ আপন মহিমায় উদ্ভাসিত হয়। আমরা অনুভব করি পরিবর্তিত বাতাসের ছোঁয়া। দেখি বদলে যাওয়া রূপ। কিন্তু তাই বলে কি নগর প্রকৃতি আমাদের শূণ্য হাতে ফিরিয়ে দিবে? না, মনের চোখ দিয়ে দেখলে আমরা শহরেও ঋতুর পালাবদল অনুভব করতে পারি। যদিও এখানে হেমন্তের নবান্ন আয়োজনকে একান্তে পাওয়া যাবে না, তাতে কি, এখানে আছে কার্তিক-অগ্রহায়ণের অনন্য পুষ্পসম্ভার।
ক্যালেন্ডারের পাতায় শরত বিদায় নিলেই যে, কাশ-শিউলির স্নিগ্ধতা হারিয়ে যাবে, এমনটা নয়। শরতের পুষ্পবৈচিত্র হেমন্ত অবধি ছড়িয়ে থাকে। এরই মধ্যে দুএকটি করে হেমন্তের ফুল ফুটতে শুরু করে। হেমন্তের সবচেয়ে দূরবাহী ও তীব্র গন্ধের ফুল ছাতিম। হেমন্তে রাতের নিস্তব্ধতায় নরম বাতাসের সঙ্গী হয়ে ছাতিমের গন্ধ ভেসে বেড়ায়। ঢাকায় বেশ কিছু ছাতিম দেখা যায়। আবদুল গণি রোড, সিরডাপ মিলনায়তন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উদ্ভিদউদ্যান, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, রমনা পার্ক ও তেজগাঁও চ্যানেল আই প্রাঙ্গণসহ বিভিন্ন পথপাশে দেখা যাবে ছাতিমের উচ্ছ্বাস।
কার্তিকের কয়েকটা দিন গেলেই দেবকাঞ্চনের ফুলগুলো ফুটতে শুরু করে। ঢাকায় রমনা পার্ক, কার্জন হল প্রাঙ্গণ এবং সংসদ ভবন লাগোয়া খেজুর বাগান এলাকায় সড়ক বিভাজকে বেশ কয়েকটি দেবকাঞ্চন দেখা যায়। তা ছাড়া ধানমন্ডিসহ ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্তভাবে আরো কিছু দেবকাঞ্চন আছে। হেমন্তের নিশিপুষ্প হিমঝুরির সবচেয়ে বড় গাছটি আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান গ্রন্থাগারের গেইটে। টিউবের মতো সুগন্ধি ফুলগুলো রাতের অন্ধকারেই ঝরে পড়ে। দুর্লভ এই গাছ আরো কয়েকটি পাওয়া যাবে বলধা গার্ডেন লাগোয়া খ্রিস্টান কবরস্থানের ভেতরে। এগাছের আরেক নাম আকাশনীম। কথাসাহিত্যিক ও নিসর্গী বিপ্রদাশ বড়–য়া একটি গাছ লাগিয়েছেন বাংলাদেশ শিশু একাডেমীর বাগানে। হেমন্তের অন্যতম নিশিপুষ্প পীতপাটলা পাওয়া যাবে রমনা নার্সারীর ভেতর। ফুলের বাহিরের আবরণ তামাটে রঙের হওয়ায় এরা তাম্রপুষ্প নামেও পরিচিত। জানামতে দেশে পীতপাটলার আর কোনো গাছ নেই। ফলে দুষ্প্রাপ্য এফুলের নান্দনিক শোভা উপভোগ করার জন্য হেমন্তেই প্রকৃত সময়।
হেমন্তের প্রকৃতিতে নীল রঙের উপস্থিতি নেই বললেই চলে। এই শূণ্যতা ঘোচাতেই ফোটে রসুন্দি বা লতাপারুল। নজরকাড়া এই ফুলের বর্ণশোভা উপভোগ করতে হলে যেতে হবে রমনা পার্ক, বোটানিক্যাল গার্ডেনসহ উত্তরা ও ধানমন্ডি আবাসিক এলাকায়। কারো কারো ব্যক্তিগত সংগ্রহেও আছে এই গাছ। মেডলা বা বগুই চা-বাগানের ছায়াবৃক্ষ হলেও ঢাকায় মিরপুর বোটানিক্যাল গার্ডেনের অফিস প্রাঙ্গণে গোলাপ বাগানের ধারে এদের বেশ কিছু গাছ পাওয়া যাবে। হেমন্তে মেডলা ফুলের স্নিগ্ধতা চারপাশের প্রকৃতিকে অনন্য সুষমা দান করে। পরশপিপুল শরতে ফুটতে শুরু করলেও হেমন্তে এর পরিপূর্ণ শোভা উপভোগ করা যায়। ঢাকায় এগাছ খুব বেশি নেই। সেগুনবাগিচায় স্থাপত্য অধিদপ্তর প্রাঙ্গণ এবং রমনা পার্ক ও বোটানিক্যাল গার্ডেনে এগাছ দেখা যায়।
পরজীবী ধাইরা এবং বকফুলও হেমন্তেরই ফুল। তবে ধাইরা বছরের অন্যান্য সময়েও অল্পস্বল্প দেখা যায়। কিন্তু হেমন্তে এফুল বেশ সতেজ এবং প্রাণবন্ত থাকে। ঢাকার বিভিন্ন পার্ক, উদ্যান ও পথপাশে এদের দেখা মিলবে। স্থলপদ্ম শরতে ফুটতে শুরু করলেও হেমন্তের স্নিগ্ধ সকালে ঝলমলে আলোয় এফুলের প্রকৃত সৌন্দর্য ফুটে ওঠে। আমাদের নগর উদ্যানে এফুল দুর্লভ নয়। লজ্জাবতী ফুলের অপরূপ শোভাও এই মৌসুমে উপভোগ করা যাবে।