Published : 26 May 2025, 06:48 PM
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবিত সংস্কারের সুপারিশগুলোর মধ্য থেকে নির্বাচিত কিছু বিষয়ে জনগণের মতামত নিতে জরিপ চালাতে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলেছেন কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
সোমবার জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মাধ্যমে এ জরিপ চালানোর কথা তুলে ধরেন তিনি।
তবে কবে, কীভাবে জরিপ চালানো হবে, সে বিষয়ে কিছু জানাননি তিনি।
আলী রীয়াজ বলেন, “যে সুপারিশগুলো সম্পর্কে রাজনৈতিক দলের মতামত নেওয়া হয়েছে, সেগুলোর মধ্য থেকে অতি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলো সম্পর্কে জনগণের মতামত নেওয়ার উদ্দেশ্যেই জরিপ পরিচালনা করা হবে।”
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের বিষয়টি সরকারের। রাজনৈতিক দলগুলো নির্ধারণ করবে প্রক্রিয়াটা কী হবে।
সংস্কারের ব্যাপারে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠায় শিগগির দ্বিতীয় পর্বের আলোচনা শুরুর কথাও বলেছে ঐকমত্য কমিশন। এক্ষেত্রে মে মাসের শেষে বা জুনের শুরুতে দ্বিতীয় পর্বের আলোচনা শুরু হতে পারে। যে বিষয়গুলোতে ঐকমত্য হয়নি বা দলগুলোর অবস্থান কাছাকাছি সেগুলো নিয়ে ওই পর্বে আলোচনা হতে পারে বলে জানান আলী রিয়াজ।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রথম ধাপের সংলাপ এবং নাগরিক সমাজের সঙ্গে আলোচনা শেষে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাজের সবশেষ অগ্রগতি তুলে ধরতে সোমবার সংবাদ সম্মেলনে আসেন কমিশন সদস্যরা।
এতে আলী রীয়াজ ছাড়াও কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ইফতেখারুজ্জামান, বিচারপতি এমদাদুল হক, মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার এসময় উপস্থিত ছিলেন।
গণ আন্দোলনে ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ২০২৪ সালের অক্টোবরে ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। কমিশনগুলো ২০২৫ সালে ফেব্রুয়ারিতে তাদের সুপারিশ সম্বলিত প্রতিবেদন সরকারের কাছে পেশ করে।
পরে চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি সংবিধান, নির্বাচন, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন, পুলিশ ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধানদের নিয়ে একটি জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করে সরকার।
বিভিন্ন সংস্কার সুপারিশের বিষয়ে রাজনৈতিক দলসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে ঐকমত্যে পৌঁছানো ও ‘জাতীয় সনদ’ প্রণয়ন করা এ ঐকমত্য কমিশনের লক্ষ্য। ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করা এ কমিশনকে ছয় মাস সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়।
ঐকমত্য কমিশন ছয়টি কমিশনের প্রতিবেদনের প্রিন্ট কপি গত ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সব রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠায়। এরপর ৫ মার্চ পাঁচটি কমিশনের চূড়ান্ত প্রতিবেদন থেকে গুরুত্বপূর্ণ ১৬৬টি সুপারিশ নিয়ে স্প্রেডশিট আকারে ৩৮টি রাজনৈতিক দল ও জোটের কাছে তাদের মতামতের জন্য পাঠানো হয়। এর মধ্যে সংবিধান সংস্কার সংক্রান্ত সুপারিশ ছিল ৭০টি, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার বিষয়ে ২৭টি, বিচার বিভাগ সংক্রান্ত ২৩টি, জনপ্রশাসন সংক্রান্ত ২৬টি এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সুপারিশ ছিল ২০টি।
স্প্রেডশিট পাঠানোর পর ১৫ মার্চের মধ্যে মতামত দিতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি অনুরোধ জানায় ঐকমত্য কমিশন। তবে কিছু দল সময় বাড়ানোর অনুরোধ করে। পরে মোট ৩৫টি রাজনৈতিক দল ও জোটের কাছ থেকে মতামত পাওয়া যায়। কিছু কিছু দল স্প্রেডশিটে মতামত দেওয়ার পাশাপাশি বিস্তারিত মন্তব্য ও বিশ্লেষণ জমা দেয়।
মতামত পাওয়ার পাশাপাশি ২০ মার্চ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত ৩৩টি রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে ৪৫টি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনার সুবিধার্থে কয়েকটি দলের সঙ্গে একাধিক দিনও বৈঠক চলে। আলোচনার মধ্য দিয়ে বেশ কিছু বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য ও আংশিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে আগে কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল।