Published : 10 May 2025, 09:27 PM
পনের বছর পর দেশে ফিরেছেন ২১ অগাস্টের গ্রেনেড হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ড থেকে মুক্তি পাওয়া হানিফ এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. হানিফ।
লন্ডন থেকে শনিবার দুপুরে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেমে তিনি বলেন, মিথ্যা অভিযোগ নিয়ে দেড় যুগ দেশের বাইরে কাটিয়েছেন। ২১ অগাস্টে গ্রেনেড হামলার ঘটনার সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক ছিল না।
“পুরোটাই ষড়যন্ত্র। আমি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছি”, বলেন হানিফ।
বিমানবন্দরে তাকে ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা জানান শুভাকাঙ্ক্ষীরা। পরে শতাধিক গাড়ির বহর নিয়ে সাভারের আমিন বাজারে নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যান। সেখান থেকে বাবা মায়ের কবর জিয়ারত করেন।
বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা সেরে অল্প কথা বলেন এ পরিবহন ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, “দীর্ঘদিন পর দেশের মাটিতে পা রাখতে পেরে নিজেকে হালকা মনে হচ্ছে। এ এক আলাদা অনুভূতি। স্বজনদের ছেড়ে দীর্ঘ সময় বাইর থাকা অনেক কষ্টের।”
মামলার অভিযোগ মাথায় নিয়ে দেশের বাইরে থাকার কারণে মা-বাবার মৃত্যুর সময়ও দেশে ফেরেননি হানিফ। এ কারণে জুলাই আন্দোলনে পতিত আওয়ামী লীগের প্রতি ক্ষোভ ঝারেন তিনি।
হানিফ বলেন, “এক-দুটি নয়, প্রায় দেড় যুগ মিথ্যা অভিযোগ মাথায় নিয়ে আমাকে দেশের বাইরে কাটাতে হয়েছে। বাবার মৃত্যু হল, মায়ের মৃত্যু হল, তাদের মুখটি পর্যন্ত দেখতে পারিনি। জীবনের এই সময়টুকু বিগত সরকার আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে, যা কখনই পূরণ হওয়ার নয়।”
আওয়ামী লীগের পতনের পর গ্রেনেড হামলার মামলায় ফাঁসির দণ্ড থেকে মুক্তি পাওয়ায় সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘সত্যের জয় হবেই’।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে ২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে ২৪ জনকে হত্যার ওই ঘটনা আন্তর্জাতিক পর্যায়েও আলোড়ন তুলেছিল।
সে সময় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। আর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তখন বিরোধী দলীয় নেতা।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর অধিকতর তদন্ত শুরু হলে পরিবহন ব্যবসায়ী হানিফের নাম আসে। এরপরই তিনি আত্মগোপনে চলে যান।
হামলার ঘটনার ১৪ বছর পর ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর দণ্ডবিধি ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দায়ের করা দুই মামলার রায় দেন ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন। রায়ে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়, যাদের একজন ছিলেন হানিফ।
২০২৪ সালে জুলাই-অগাস্টের আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। এরপর গত ১ ডিসেম্বর হাই কোর্ট বেঞ্চ দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আসামিদের করা আপিল মঞ্জুর করার পাশাপাশি মৃত্যদণ্ড কার্যকরের আবেদন (ডেথ রেফারেন্স) খারিজ করে দেন।
যারা আপিল করেছেন, তাদের পাশাপাশি যারা করেননি, সবাইকে এ মামলা থেকে খালাস দেওয়া হয় হাই কোর্টের রায়ে।