Published : 15 Jun 2025, 11:37 AM
ষড়ঋতুর আবর্তে বাংলার প্রকৃতিতে এসেছে বর্ষা। দমকা হাওয়া তুলে মুষলধারে বৃষ্টি এই ঋতুর নিজস্ব ছন্দ হলেও প্রথম দিনে এসবের দেখা মেলেনি। তবে মেঘলা এই দিনে ধরিত্রীকে সবুজ করার আহ্বান রেখে গান-নাচ-আবৃত্তিতে বর্ষা বন্দনায় আষাঢ়ের প্রথম দিন বরণ করা হল নগরে।
রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় বর্ষা উৎসব আয়োজন করে জাতীয় বর্ষা উৎসব উদযাপন পরিষদ।
উৎসবের আয়োজকেরা বলেছেন, সংবেদনশীলতা ও সহমর্মিতা, জীবনযাপন ও প্রকৃতির মধ্যে সমঝোতা তৈরি ছাড়া মানবের মুক্তির ভিন্ন পথ নেই। উৎসবে বর্ষার জলধারায় সিক্ত হয়ে জীবন আনন্দময় ও কল্যাণব্রতী হওয়ার প্রত্যাশার বার্তাও এসেছে।
সোহানী মজুমদারের সেতার বাদনে 'রাগ আহীর ভৈরব' পরিবেশনের মধ্যদিয়ে শুরু হয় উৎসব। পরে একে একে গান, আবৃত্তি ও নাচ পরিবেশন করেন শিল্পীরা।
বর্ষা কথন পর্বে প্রতিকীভাবে ধরিত্রীকে সবুজ করার লক্ষ্যে শিশু-কিশোরদের মাঝে বনজ, ফলদ ও ঔষধি গাছের চারা বিতরণ করা হয়।
বর্ষা উৎসব উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী সুইট বলেন, "ধরিত্রী সবুজ হলেই পৃথিবী বাঁচবে। এজন্যই আমরা শিশু-কিশোরদের হাতে গাছের চারা তুলে দিয়েছি।"
উৎসবের ঘোষণাপত্র পাঠ করেন মানজার চৌধরী সুইট। ঘোষণায় বলা হয়, "ষড়ঋতুর দেশ বাংলার জীবনধারা পাল্টে যাচ্ছে দ্রুত, সেই সাথে বদলে যাচ্ছে ঋতুর চরিত্র। গ্রীষ্ম হয়ে উঠছে খরতর, বর্ষা অনেক রুষ্ট এলোমেলো, শীত একাধারে নরম ও চরম, বসন্ত ক্ষীয়মাণ। প্রকৃতির ওপর মানুষের সীমাহীন অনাচার জন্ম দিয়েছে বিশ্বজনীন সংকটের।
"ভূপৃষ্ঠ হয়েছে তপ্ততর, সমুদ্রজল স্ফীত, ওজন বলয় ক্ষতিগ্রস্ত। আধুনিক জীবনযাত্রা গড়ে তুলছে অপচয়ের পাহাড়, মাটি খুঁড়ে প্রকৃতির সম্পদ গোগ্রাসে গিলছে মানুষ, প্রয়োজনের সীমানা-ছাপানো অপ্রয়োজনের ভারে পিষ্ট ও বিপন্ন আজকের পৃথিবী।"
সভ্যতার দম্ভ ও প্রকৃতির ঔদার্য্যের মধ্যে বৈরিতা মানব-অস্তিত্বের জন্য হুমকি তৈরি করছে বলেও জানানো হয় উৎসবের ঘোষণায়।
মানজার চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "বর্ষাকে উদযাপন করা তো আমাদের শিখিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তবে বর্ষা উৎসব উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে গত ১৭ বছর ধরে বর্ষা উৎসব হয়ে আসছে। আমরা প্রতি বছর পহেলা আষাঢ় তথা আষাঢ়স্য প্রথম দিবসে এই উৎসবটি আয়োজন করি। এবার ১৮তম আয়োজন।"
অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার জন্য এরকম আয়োজনের গুরুত্বের কথা তুলে ধরে মানজার চৌধুরী বলেন, এবারেও তারা আয়োজনটি সাজিয়েছেন বর্ষার গান, কবিতা, নাচসহ নানা সাংস্কৃতিক পরিবেশনায়।
বাংলাদেশকে যে অসাম্প্রদায়িক করে গড়ে তোলার স্বপ্ন আমাদের সবার, সেখানে এ ধরণের আয়োজন বিশেষ ভূমিকা রাখে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
উৎসবের বর্ষা কথন পর্বে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদের সভাপতি কাজী মিজানুর রহমান। সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক নিগার চৌধুরী। সঞ্চালনায় ছিলেন নুসরাত ইয়াসমিন রুম্পা।
একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন ইয়াসমিন মুশতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, বিজন চন্দ্র মিস্ত্রী, নবনীতা জাইদ, অনিমা রায়, শামা রহমান, মকবুল হোসেন, ফেরদৌসী কাকলী, বিমান চন্দ্র বিশ্বাস, শ্রাবণী গুহ রায়, এস এম মেজবাহ, রত্না সরকার।
আবৃত্তি করেছেন নায়লা তারাননুম চৌধুরী কাকলী, আহসান উল্লাহ তমাল।
দলীয় সংগীত পরিবেশন করেছে- সীমান্ত খেলাঘর আসর (শিশু-কিশোর), সুর বিহার, বহ্নিশিখা, সুর নন্দন, সত্যেন সেন শিল্পী গোষ্ঠী।
দলীয় নৃত্য পরিবেশন করেছে- ধৃতি নর্তনালয়, নৃত্যাক্ষ, স্পন্দন, বেনুকা ললিতকলা কেন্দ্র, সিনথিয়া একাডেমি অফ আর্টস, নৃত্যম।
যন্ত্রশিল্পী ছিলেন- তবলায় তুলসী সাহা, গিটারে মো. নাসির উদ্দিন, কী-বোর্ডে রবীন্স চৌধুরী, মন্দিরায় বিশ্বজিৎ সেন বিষ্ণু।