Published : 06 Oct 2024, 06:37 PM
সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় উপকারভোগীর তালিকায় প্রতি ১০ জনের মধ্যে চার জনই ‘ত্রুটিপূর্ণ’ জেনে বিষয়টি খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ। তালিকা যাচাই বাছাই শেষেই টাকা ছাড় দেওয়ার কথাও বলেছেন তিনি।
রোববার দায়িত্ব পাওয়ার দুই মাস পূর্তিতে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, তিনি দায়িত্বে আসার পর একবার ভাতা ছাড় দেওয়া হয়েছে। কারণ, তিনি খতিয়ে দেখার সুযোগ পাননি।
তালিকায় কী ত্রুটি আছে- এই প্রশ্নে শারমীন মুরশিদ বলেন, “ইউনিসেফ আমাদের কাছে একটা জরিপ প্রতিবেদন পাঠিয়েছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে নির্বাচিত উপকারভোগীদের মধ্যে ৪৩ শতাংশই ত্রুটিপূর্ণ। অর্থাৎ যারা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে তারা হওয়ার মত না। এখানে অন্য লোক ক্রাইটেরিয়ায় আসার কথা। ডিভিয়েশন বা এরর মানে হচ্ছে ভুল জায়গায় যাচ্ছে।
“আমরা এটা এখন রিভিউ করব। তারপর টাকা ছাড় দেওয়া হবে।”
“আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর একবার ভাতা ভাতার একটা ইনস্টলমেন্ট চলে গিয়েছে আগের নিয়মে। আমি এটা খতিয়ে দেখার সুযোগ পাইনি”, বলেন উপদেষ্টা।
‘সঠিক লোক নির্বাচনের আগে’ ভাতা ছাড় না করার বিষয়ে তিনি বলেন, “ত্রুটিগুলো আমাদের খতিয়ে দেখতে হবে। জলদি করে শুধু দিয়ে দিলে হবে না। যাকে দিতে চাচ্ছি সে পাচ্ছে কি না সেটা আমাকে বুঝতে হবে। এখানে কোনো অস্বচ্ছতা থাকতে পারবে না।”
বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, স্বামী পরিত্যক্তা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতাসহ বিভিন্ন শ্রেণিতে সরকার হতদরিদ্র মানুষের মাঝে ভাতা বিতরণ করে থাকে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর প্রথমে বয়স্কভাতা চালু হয়। ধীরে ধীরে চালু হয় অন্যান্য ভাতা।
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ধীরে ধীরে এই ভাতার উপকারভোগীর পরিমাণও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছিল। তবে উপকারভোগী নির্বাচনের ক্ষেত্রে অনিয়মের বিষয়টি আলোচিত হয়েছিল বার বার।
বর্তমানে ১ কোটি ২০ লাখ উপকারভোগীর মধ্যে যারা বয়স্ক ও বিধবা ভাতা পান, তারা মাসে ৫০০ টাকা এবং যারা প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীরা পান ৮৫০ টাকা। এই অর্থ উপকারভোগীদের মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবে সরাসরি পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
চলতি অর্থবছরের ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা খাতে ১ লাখ ৩৬ হাজার ২৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে যা মোট বাজেটের ১৭ শতাংশের বেশি।
নারী-শিশু নির্যাতন: ‘ছয় মাসে পরিবর্তন’
সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা বলেন, “নারী ও শিশু নির্যাতন কমানোর জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টায় নামব, আগামী ছয় মাসের মধ্যে আপনারা পরিবর্তন দেখতে পাবেন।
“আগে মন্থর ছিল, আমরা এখন হাই গিয়ারে পরিকল্পনা নিয়েছি। স্যার সলিমুল্লা এতিমখানার ৪০ কাঠা জমি উদ্ধার করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই জমির রেকর্ড সংশোধনের আবেদন করা হয়েছে।”
মন্ত্রণালয়ের অধীন শিশু পরিবারসহ সব নারী ও শিশুর আবাসস্থলের নিরাপত্তা পরিবেশ উন্নয়নে একটি ব্যবহার নির্দেশিকা তৈরি করা হচ্ছে বলেও জানান উপদেষ্টা। বলেন, “নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনাসহ বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণার জন্য পাঁচটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।”
সরকারিভাবে দেশে ১২টি শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র আছে জানিয়ে শারমীন মুরশিদ বলেন, “সরকারি প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে ডে কেয়ারের জন্য একটি কর্নার দাবি করছি। বেসরকারি খাতেও ডে কেয়ার সিস্টেম চালু করার চেষ্টা করছি।
“আগামী জুন ২০২৬ সালের মধ্যে আমরা ডে কেয়ার সেন্টার চালুর একটা লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে সক্ষম হব বলে আশা করছি।”
গণঅভ্যুত্থানে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সরকার কী করেছে
এই প্রশ্নে সহায়তা, পুনর্বাসনসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের হিসাব তুলে ধরেন উপদেষ্টা। আরও কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়টিও জানান।
তিনি বলেন, “জুলাই-অগাস্ট গণঅভ্যুত্থানে ১০৫ জন শিশু নিহত হয়েছে। তাদের পরিবারকে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ৫০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হবে। সোমবার এই অনুদান হস্তান্তর হবে। আন্তর্জাতিক শিশু দিবস উপলক্ষ্যে ওসমানি স্মৃতি মিলনায়তনে এই অনুষ্ঠান হবে।”
গুরুতর আহত পরিবারদেরকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকাসহ বিভিন্ন রকম নগদ সহায়তা আমরা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
“আপনাদের জানা মতে এ রকম কেউ থেকে থাকলে আমাদের জানাবেন।“
আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবারকে সমাজসেবা কার্যালয় ও উপজেলা রোগী কল্যাণ সমিতির মাধ্যমে ৮২ লাখ টাকার সেবা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “আহত ছাত্র-শ্রমিকদের পুনর্বাসনের জন্য ৫ মিলিয়ন ডলার অনুমোদন পেয়েছি। আনুষ্ঠানিকতা শেষ পর্যায়ে আছি, অচিরেই আপনারা বিষয়টি জানতে পারবেন। বিশ্বব্যাংক থেকে এই সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।”
আহত ও নিহতদের পরিবারকে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নগদ অর্থসহ বিভিন্ন ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে বলেও জানান শারমীন মুরশিদ।
অনুষ্ঠানে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমা মোবারেকও উপস্থিত ছিলেন।