Published : 27 Apr 2025, 09:41 PM
পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে দেশে ফেরাতে ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির অনুমতি দিয়েছে আদালত।
রোববার ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিব দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন।
দুদকের আইনজীবী মীর আহামেদ আলী সালাম বলেন, সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি রয়েছে। তিনি দেশের বাইরে থাকেন। দুদক ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিস অ্যালার্ট জারি করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করে।
প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগের দুদকের করা এ মামলায় গত ১০ এপ্রিল শেখ হাসিনা, সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা উপপরিচালক আকতারুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তার বিরুদ্ধে আগে থেকেই গ্রেপ্তারে আদালতের পরোয়ানা ছিল। সেই আদেশই পুনরায় ‘ইস্যুর’ আবেদন করেছিল দুদক, যাতে ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করা হয়েছিল। সেটিই মঞ্জুর করেছে আদালত।
”পরোয়ানা তামিলের বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগে থেকেই আগামী ৪ মে দিন ধার্য করা আছে।''
পরোয়ানা জারি হওয়া অপর আসামিরা হলেন- জাতীয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার, জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব পুরবী গোলদার, অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন, সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যানের পিএ মো. আনিছুর রহমান মিঞা, রাজউকের সাবেক সদস্য মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, কবির আল আসাদ, তন্ময় দাস, মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, মেজর (ইঞ্জি.) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী (অব.), মো. নুরুল ইসলাম, পরিচালক শেখ শাহিনুল ইসলাম, উপপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান, হাবিবুর রহমান, মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন এবং শরীফ আহমেদ।
‘ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়মের’ মাধ্যমে রাজউকের পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ছয়টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে পুতুল ও তার মা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণ করে আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।
হাসিনাসহ পরিবারের সদস্যদের নামে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ছয়টি প্লট বরাদ্দে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে গত ডিসেম্বরে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। পরে কয়েক ধাপে ছয়টি মামলা করা হয়, যার মধ্যে পুতুলের প্লট নিয়ে মামলাটি করা হয় চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি।
প্লট দুর্নীতি: হাসিনা-রেহানা-টিউলিপ-ববিদের গ্রেপ্তার সংক্রান্ত প্রতিবেদনের সময় পেছাল
মামলার এজাহারে বলা হয়, পুতুলের নিজের বা তার পরিবারের অন্য সদস্যদের মালিকানায় ঢাকা শহরে রাজউকের এলাকায় বাড়ি বা ফ্ল্যাট বা আবাসন সুবিধা রয়েছে। এ তথ্য ‘গোপন’ করে রাজউকের আরেক প্রকল্প পূর্বাচল নতুন শহরের ২৭ নম্বর সেক্টরের ২০৩ নম্বর রাস্তার ১৭ নম্বর প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন পুতুল। প্লটের বাস্তব দখলসহ রেজিস্ট্রি মূলে প্লট গ্রহণ করেন তিনি।
সরকারের সর্বোচ্চ পদে থাকাকালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীদের ‘প্রভাবিত ও ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন’।
এজাহারে বলা হয়, আসামিরা একে অন্যের সঙ্গে ‘যোগসাজশ করে নিজেরা লাভবান হয়ে ও অন্যকে লাভবান করার জন্য’ পুতুলের নামে প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন। এক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগও আনা হয়েছে।
মামলাটি তদন্ত করে গত ১০ মার্চ কমিশনে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। এজাহারের ১৬ আসামির সঙ্গে আরও দুজনের নাম যোগ করে মোট ১৮ জনের বিরুদ্ধে ওই অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেওয়া হয়।
বাকি পাঁচ মামলাতেও অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে দুদক। আগামী ১৩ এপ্রিল দুটি এবং ১৫ এপ্রিল তিনটি অভিযোগপত্র আদালতে তোলা হবে গ্রহণযোগ্যতার শুনানির জন্য।
শেখ হাসিনাকে এই ছয় মামলাতেই আসামি করা হয়েছে। এছাড়া তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, বোন শেখ রেহানা, ভাগ্নি ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিক, আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তী ও ভাগ্নে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকের নাম রয়েছে আসামির তালিকায়।