Published : 06 Apr 2025, 08:42 PM
আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ‘আয়নাঘরে’ যারা ‘গুমের’ তদন্ত করতে গিয়েছিলেন তাদের ‘টাইম বোমা’ দিয়ে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছিল বলে অভিযোগ করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলি মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
রোববার দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শুনানি শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
‘টিএফআই সেল’ এর নাম তুলে ধরে তিনি বলেন, ওই আয়নাঘরে তদন্ত দলের তদন্তের সময় তিনি নিজে সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
এদিন ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের চারটি মামলার শুনানি শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তাজুল ইসলাম। এসময় প্রধান কৌঁসুলির পরামর্শক টবি ক্যাডম্যানসহ অন্য কৌঁসুলিরা উপস্থিত ছিলেন।
তদন্ত সংস্থার আবেদনের প্রেক্ষিতে এদিন যাত্রাবাড়ীতে গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলে তিন মাস সময় মঞ্জুর করেছে ট্রাইব্যুনাল। এ মামলায় যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসানসহ দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে হাজির করা হয়।
অপরদিকে সাভারে পুলিশের ভ্যান থেকে আসহাবুল ইয়ামিনকে গুলি করে হত্যার পর লাশ ফেলে দেওয়ার মামলার আসামি এপিবিএন সদস্য সোহেল মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১৩ এপ্রিল এবং রাজধানীর চাঁনখারপুলে সাতজনকে হত্যার মামলায় পুলিশ কর্মকর্তা নাসিরুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ এপ্রিল দিন ধার্য করেছে ট্রাইব্যুনাল।
এছাড়া তেজগাঁওয়ে নাফিজ হত্যা মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ৬ জুলাই দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। বিচারপতি মো. গোলাম মূর্তজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এই আদেশ দেন।
যাত্রাবাড়ীর ঘটনায় ২০২৪ সালের অক্টোবরে এবং সাভার, চাঁনখারপুল ও তেজগাঁও এলাকায় হত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় চলতি বছরের জানুয়ারিতে ট্রাইব্যুনালে এসব মামলা করে প্রসিকিউশন।
এসব মামলার শুনানি শেষে তাজুল ইসলাম বলেন, ‘‘ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা গুমের মামলাগুলো তদন্ত করছে। তদন্তকারী সংস্থা আয়নাঘর নামে পরিচিত সবচেয়ে জটিল তিনটি গোপন বন্দিশিবির উদঘাটন করেছে। এর মধ্যে ‘টিএফআই সেল’ নামে একটি আধা-আন্ডারগ্রাউন্ড কেন্দ্র রয়েছে, যা সুপরিকল্পিতভাবে গোপন করে রাখা হয়েছিল। এই কেন্দ্রগুলো দেয়াল তুলে বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। দেয়ালগুলো তদন্তের সময় ভেঙে ফেলতে হয়। পুরো এলাকা গার্বেজ দিয়ে ভরে রাখা হয়েছে।
‘‘সেগুলো সরিয়ে ক্রাইম সিনগুলো বের করতে হয়েছে এবং আপনারা জানেন, এই কাজ করতে গিয়ে স্বয়ং চিফ প্রসিকিউটর তিনি এই ইনভেস্টিগেশন চলাকালে প্রেজেন্ট ছিলেন। আমরা যখন না বুঝে ঢুকে দেখা গেলাম… সেখানে বোমা ফিট করা ছিল। সেই বোমাগুলোর সঙ্গে টাইমার সেট করা ছিল। আমাদেরকে অ্যাপারেন্টলি বোঝা যায় যে, এই ইনভেস্টিগেশন করতে যারা গিয়েছেন তাদের হত্যা করারও চেষ্টা করা হয়েছিল।”
এমন জটিলতার মধ্যে তদন্ত কাজ এগোনোর কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “সেগুলো প্রতিদিন জনসমক্ষে আসেনি। সেই কারণে অনেকেই মনে করতে পারেন যে তদন্ত কাজ কিছু হয়নি।
‘‘আমি বলতে চাই, তদন্ত কাজ যা হয়েছে-যেদিন প্রথম দিন ফরমাল চার্জ দাখিল হবে সেদিন থেকে সবাই উপলব্ধি করতে পারবেন।”
এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘এ বিষয়ে আর মন্তব্য করছি না। সময় হলে জানতে পারবেন।”
‘দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল গঠন হচ্ছে’
তাজুল ইসলাম বলেন, ‘‘একটা বিষয় আমরা মনে করি যে, ট্রাইব্যুনাল একটা অবশ্যই যথেষ্ট নয়। এখানে আরও ট্রাইব্যুনাল হওয়া উচিত।
‘‘সরকারও সেই ব্যাপারে ইতিবাচক চিন্তাভাবনা করেছেন। খুব শিগগির অন্তত দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনালের যাত্রা শুরু হবে বলে আমরা আশা করছি।”
তদন্তের অগ্রগতির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “তিনটা মামলার চার্জসিটের ড্রাফট আমরা পেয়ে গেছি। একটা হচ্ছে- চাঁনখারপুল, আশুলিয়া এবং আরেকটা হচ্ছে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যেটা মানবতাবিরোধী কমান্ড রেসপনসেবিলিটির মামলা সেটারও ড্রাফট আমাদের হাতে এসেছে।
”খুব সহসাই দুইটার চূড়ান্ত রিপোর্ট আমরা পাব এবং এই মাসের মধ্যে অন্তত দুইটা মামলার ফরমাল চার্জ হয়ত দাখিল করা সম্ভব হবে।”
‘বিচার বানচালে যারা ষড়যন্ত্র’ করছে তাদের চিহ্নিত করা হচ্ছে তুলে ধরে তিনি বলেন, কোনো ধরনের ‘অপবাদ’ ছড়িয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার বিচার প্রক্রিয়াকে বাধাঁগ্রস্থ করা যাবে না। প্রসিকিউশন বিচারের ব্যাপারে শতভাগ নিরপেক্ষ আছে।
”আটলান্টিক মহাসাগর সেচতে পারবে তারা (ষড়যন্ত্রকারীরা)। এখানকার কোনো দুর্নীতির খবর বের করতে পারবে না তারা। কারণ এখানে কোনো দুর্নীতি নাই। প্রসিকিউশন কমিটেড এই বিচার জাতির সামনে তারা করে দেখাতে চায়। সেজন্য কাজ চলছে।”