Published : 17 Dec 2024, 05:38 PM
প্রাথমিক শিক্ষা শেষে মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি না হয়ে 'অনেক শিক্ষার্থী' কওমি মাদ্রাসায় চলে যাচ্ছে বলে তথ্য দিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব সিদ্দিক জোবায়ের।
সাধারণ ধারায় শিক্ষাজীবন শুরু করা শিশুরা যেন এ ধারাতেই শিক্ষাজীবন শেষ করতে পারে, সেদিকে নজর রাখতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার সকালে সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তির লটারির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি ওই পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে ওই অনুষ্ঠান আয়োজন করে।
এবার দেশের সব সরকারি স্কুল এবং মহানগর ও জেলা সদরের বেসরকারি স্কুলে প্রথম থেকে নবম শ্রেণিতে ভর্তির জন্য ৩ লাখ ৬ হাজার ৮৮ জন শিক্ষার্থী লটারিতে নির্বাচিত হয়।
৬৮০টি সরকারি স্কুলে ১ লাখ ৮ হাজার ৭১৬টি আসনের বিপরীতে ৯৮ হাজার ২০৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়।
অন্যদিকে মহানগর ও জেলা সদরের ৪ হাজার ৯৪৫টি বেসরকারি বিদ্যালয়ে ১০ লাখ ৭ হাজার ৬৭৩টি আসনের বিপরীতে ২ লাখ ৭ হাজার ৮৮৩ জন শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পেয়েছে।
অনুষ্ঠানে সিদ্দিক জোবায়ের বলেন, "গতকালকেই (সোমবার) কথা হচ্ছিল কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের সচিবের সঙ্গে। আমদের মাধ্যমিক পর্যায়ে এসে অনেক বাচ্চা ড্রপআউট (ঝরে পড়া) হয়ে যাচ্ছে এবং তারা মাদ্রাসায় চলে যাচ্ছে, বিশেষ করে কওমি মাদরাসায়।
"আমি বলছি না, মাদ্রাসায় শিক্ষার মান খারাপ। কিন্তু এসব শিক্ষার্থী প্রাইমারিতে শুরু করেছিল সাধারণ শিক্ষায়। কিন্তু যখনই সে মাধ্যমিকে যাচ্ছে তখন সেখানে ড্রপআউট হয়ে যাচ্ছে এবং তারা মাদ্রাসায় চলে যাচ্ছে।”
সচিব বলেন, “এটা আমাদের একটু চিন্তা করতে হবে। যেসব ছাত্র সাধারণ শিক্ষায় শুরু করেছিল, তারা যেন শেষ পর্যন্ত এটি ধরে রাখতে পারে। আমি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের আহ্বান জানাব এ বিষয়ে সদয় দৃষ্টি রাখতে।"
তিনি বলেন, "ভর্তি ফি নিয়ে একটা আলোচনা এসেছে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির ফি বিভিন্ন রকম। যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বেশি ফি নেন, সাধারণ মানুষের জন্য সেটি অনেক সময় কষ্টকর যায়। আমরা যদি এই জায়গাটায় সুশাসন নিশ্চিত করতে পারি তাহলে শিক্ষা পদ্ধতির প্রাথমিক স্তর হিসাবে এটি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।”
লটারির পদ্ধতি আপাতদৃষ্টিতে ভালো মন্তব্য করে সচিব বলেন, "পরীক্ষা বা মেধাভিত্তিক ভর্তি পদ্ধতি থাকলে অভিভাবকরা শিশু সন্তানকে নিয়ে কোচিংয়ে কোচিংয়ে ছুটতেন। আর্থিকভাবে যারা সামর্থ্যবান নন, তারা ভালো স্কুলে পড়ার কথা চিন্তাও করত না।
“আবার ভালো স্কুল, ভালো ছাত্র ছাড়া ভর্তি করত না। ভালো শিক্ষকের কাছে শেখার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হত সমাজের মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্ত পরিবারের শিশুরা। এটা স্পষ্টই বৈষম্য। লটারির মাধ্যমে কিছুটা হলেও তা দূর হচ্ছে।"
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (রুটিন দায়িত্ব) অধ্যাপক মোজাক্কার হোসেন চৌধুরী।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক ও মহানগর ভর্তি কমিটির সদস্য সচিব মোহাম্মদ আজিজ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক এম আমিনুল ইসলাম, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব খ ম কবিরুল ইসলাম, টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুল মাবুদ চৌধুরী ভর্তি লটারি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।