Published : 29 May 2025, 06:50 PM
বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন বলেছেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র হিসেবে তার শপথগ্রহণের ব্যবস্থা না করে অন্তর্বর্তী সরকার ‘আদালত অবমাননা’ করছে।
তিনি এও বলেছেন, শপথ পড়ানোর শেষ সুযোগ দেওয়া হচ্ছে, না হলে শুক্রবার থেকে কঠোর আন্দোলন।
বৃহস্পতিবার দুপুরের পর নগর ভবনের সামনে সমর্থকদের অবস্থান কর্মসূচিতে উপস্থিত হয়ে ইশরাক এ কথা বলেন।
অবিভক্ত ঢাকা সিটির মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক বলেন, “একজন মেয়রকে শপথ গ্রহণ করাতে ব্যর্থ হয়েছে (অন্তর্বর্তী সরকার), তাহলে আগামীতে ৩০০ এমপিকে শপথ গ্রহণ করাতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারবে কি না- সেটা নিয়ে জনগণের যথেষ্ট সন্দেহ আছে।
“অতএব, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে শেষ সুযোগ দেওয়া হচ্ছে; নিজেদের সংশোধন করুন, আদালতের রায়কে মেনে নিন, জনগণের রায়কে মেনে নিন, কার্যকর পদক্ষেপ নিন।”
পাঁচ বছরের চড়াই-উতরাই পেরিয়ে মাস দুয়েক আগে আদালতের রায়ে মেয়র হওয়ার সুযোগ পান ইশরাক হোসেন। এরপর ইসি তাকে মেয়র ঘোষণা করলেও আইনি জটিলতার কথা বলে তার শপথগ্রহণের ব্যবস্থা নেয়নি স্থানীয় সরকার বিভাগ।
এ নিয়ে তার সমর্থকরা দুই সপ্তাহ ধরে নগর ভবনে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন। বৃহস্পতিবারের কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে ইশরাক বলেন, “বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি শেষবারের মত আহ্বান জানাব, আপনারা অবিলম্বে আমার শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের পদক্ষেপ নিন, অন্যথায় আগামীকাল থেকে ঢাকার নগরবাসীকে সাথে নিয়ে এই আন্দোলনকে আরও বেগবান করা হবে, আরও চূড়ান্ত করা হবে।
“অন্যথায়, জাতীয় নির্বাচনের আগে যাতে একটি সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হয়; যার অধীনে জনগণ ভোট দিতে পারবে, যেই ভোট দানের মাধ্যমে একটি নির্বাচিত সরকার গঠন করবে- সেই পদক্ষেপ আমরা গ্রহণ করব।”
২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটির সবশেষ নির্বাচন হয়। তাতে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেনকে পৌনে ২ লাখ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে মেয়র হন আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস।
ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর গেল ২৭ মার্চ ঢাকার নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল সেই ফল বাতিল করে অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে।
এরপর ২৭ এপ্রিল ইশরাককে ডিএসসিসি মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু তাকে যেন শপথ পড়ানো না হয় সেজন্য গত ১৪ মে হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বাসিন্দা ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মামুনুর রশিদ।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এখনো ইশরাককে শপথ পড়ানোর আয়োজন করেনি। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার পদত্যাগ দাবি করেন ইশরাক।
এর মধ্যে ২২ মে ইশরাককে শপথ পড়ানো থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা চেয়ে করা রিট মামলা খারিজ করে দেয় হাই কোর্ট। হাই কোর্টের ওই আদেশের বিরুদ্ধে সোমবার আপিল বিভাগে আবেদন করেন রিট আবেদনকারী মামুনুর রশিদ।
সেই লিভ টু আপিলের শুনানি করে আপিল বিভাগ বৃহস্পতিবার বিষয়টি পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি করে দিয়েছে। লিখিত রায় প্রকাশিত হলে আদালতের পর্যবেক্ষণ জানা যাবে।
ইশরাক বলেন, “বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতে বৈধতা দেওয়া হয়েছে, যারা আপিল করেছিল সেই আপিলকে খারিজ করে দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে আমাকে মেয়র ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশনের যে গেজেট প্রকাশিত হয়েছিল, সেই গেজেটকে বহাল রাখা হয়েছে।
“আজকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতে এই আপিল নিষ্পত্তির মাধ্যমে আমরা যে- শুরু থেকে আইনের শাসনে বিশ্বাসী, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল; বাংলাদেশে আইনের শাসনকে সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখে আদালতে যে মামলা করেছিলাম, পূর্ণাঙ্গ আস্থা আমরা রেখেছিলাম- সেটা আবারও প্রমাণিত হয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির নেতাকর্মীরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।”
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শপথ না পড়িয়ে আদালত অবমাননার শামিল কাজ করেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এটাও প্রমাণিত হয়, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কতিপয় উপদেষ্টা আমার প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করেছে এবং নির্বাচন কমিশন বিচার ব্যবস্থা এবং প্রশাসনের উপর হস্তক্ষেপ করে আমাকে মেয়র হিসেবে যে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, আমাকে শপথ পড়ানোর যে দায়িত্ব ছিল- সেই দায়িত্বটুকু পালনে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যর্থ হয়েছে।
“তারা যদি অনতিবিলম্বে আমার শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান সম্পন্ন করার পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে এটাই প্রমাণিত হবে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগের প্রতি তারা আদালত অবমাননায় শামিল হচ্ছেন। অবমাননা করার মতই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।”