Published : 28 Mar 2025, 07:36 PM
এবারের ঈদে লম্বা ছুটি ঘিরে গত কয়েকদিন ধরেই ঢাকা ছাড়ছে মানুষ। ফলে সরকারি ছুটি শুরুর প্রথম দিন শুক্রবার ঈদযাত্রায় সড়কপথে যাত্রীদের বাড়তি চাপ দেখা যায়নি।
যারা অগ্রিম টিকিট কেটেছেন তাদের বেশিরভাগই কাউন্টারে এসে সঠিক সময়ে বাসও পাচ্ছেন। কাউন্টারে এসেও তাৎক্ষণিক টিকেট কেটে রওনা দিতে পারছেন গন্তব্যে।
এদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ঢাকার শ্যামলী, কল্যাণপুর ও মহাখালী বাস কাউন্টারগুলো ঘুরে যাত্রীদের বাড়তি উপস্থিতি দেখা যায়নি। বাড়তি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগও করেননি কোনো যাত্রী।
কল্যাণপুরে শ্যামলী পরিবহনের বগুড়া, নওগাঁ, রংপুরসহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকার বাস কাউন্টারের ম্যানেজার নাসিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলছিলেন, “এবার যাত্রীর চাপ নেই, দুই-একটা জায়গা বাদে সড়কের অবস্থাও ভালো। সঠিক টাইমেই গাড়ি ছাড়ছে।”
তিনি বলেন, “কয়েকদিন ধরেই লোকজন যাচ্ছে, বেশিরভাগই চলে গেছে। এবার ভিড় ছাড়াই মানুষ যেতে পারছে, সামনেও ভিড় হওয়ার সম্ভাবনা নাই।”
বগুড়া-নওগাঁ রুটে চলাচল করা শাহ ফাতেহ আলী পরিবহনের কাউন্টারে দায়িত্বরত ইউনুস আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই যাত্রী আসে, এই নাই। কেউ আসল টিকিট কিনল, চলে গেল। এইবার যাত্রীর কোন তাল নাই। কোনও বাড়তি ভাড়া নাই, তাও যাত্রী নাই।”
“অন্যবার ঈদের সময় এসে যাত্রী বলত, একটা টিকিট ম্যানেজ করে দেন। লাগলে ৫০-১০০ টাকা বখশিস দিব। সিট ফিলাপ হওয়ার পরে সামনে বসেও অনেকে যাইতে চাইতো। এইবার গাড়িই কোনওরকম ফিলাপ করে যাইতেছে।”
বাড়তি যাত্রীর চাপ না থাকায় এদিন যারা ঢাকা ছাড়ছেন স্বস্তি নিয়েই যেতে পারার কথা বলছেন।
মিরপুর এলাকায় নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করেন মো. শামীম। একসঙ্গে কাজ করা ৫৬ জন গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ যেতে হানিফ পরিবহনের টিকিট কেটে কাউন্টারের সামনে অপেক্ষা করছিলেন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গাড়ির টিকিট আগেই কাটা আছিল, বেলা দুইটায় গাড়ি ছাড়বে। ভিড়-টিড় চিন্তা করে আগে আগেই চইলা আসছি।”
মহাখালী বাস টার্মিনাল ঘুরেও অন্যান্যবারের মতো ভিড় বা বাসের জন্য যাত্রীদের দীর্ঘ অপেক্ষা দেখা যায়নি।
শুধু ময়মনসিংহগামী ‘ইউনাইটেড’ পরিবহনের কাউন্টারে অল্প ভিড় দেখা গেছে। তারপরেও তাদের পর্যাপ্ত গাড়ি থাকায় যাত্রীরা টিকিট কেটে উঠে পড়ছেন।
এই কাউন্টারে কর্মরত সোহেল নামে একজন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কোনো বাড়তি ভাড়া নাই। যারা আগে টিকিট কেটে রেখেছেন তারা আসছেন, গাড়ি আছে যেতে পারছেন। যারা এসে টিকিট কাটছেন তাদের এবং এসি বাসের যাত্রীদের হয়তো কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
“গাজীপুরের কোথাও কোথাও যানজট থাকায় অনেক গাড়ি আসতে দেরি হচ্ছে। তবে সব মিলিয়ে পরিস্থিতি ভালোই।”
ওই কাউন্টারে টিকিটের জন্য অপেক্ষারত মনির হোসেন বলেন, “এসি বাসের টিকিটের জন্য অপেক্ষা করতেছি। গাড়ি নেই তাই টিকিট দিচ্ছে না। গাড়ি আসলে টিকিট দিবে বলেছে। দেখি আর কিছুক্ষণ, না পেলে নন এসিতেই চলে যাবো।”
সিলেট-সুনামগঞ্জ-হবিগঞ্জ রুটের ‘বিলাস’ পরিবহনের কাউন্টারে কর্মরত তৌহিদ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অনেকে শুক্র-শনিবারের অগ্রিম টিকেট কিনেছিল। কিন্তু দেখা গেছে তারা ছুটি পেয়ে গেছে ২৬ মার্চ থেকে। এমন অনেকে এসে বলছে, আগে যেতে চায়। আমরাও দিয়ে দিছি। যারা ছুটি ম্যানেজ করতে পারছে তারা আগেই চলে গেছে। এবার কোন ঝামেলা নাই।”
বাড়তি ভাড়া নিতে ‘কৌশল’
ঢাকার বাস কাউন্টারগুলোতে নজরদারির কারণে ‘সুবিধা’ করতে না পারা কিছু কিছু পরিবহন বাড়তি ভাড়া আদায়ে ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেছেন।
মহাখালী বাস টার্মিনালে সিরাজগঞ্জগামী ‘এসআই এন্টারপ্রাইজ’ পরিবহনের টিকেট কাউন্টারে ছোটখাটো জটলা দেখে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, কাউন্টার থেকে বলা হচ্ছে ‘বাস আছে, নামাজের পরে ছাড়বে’। কাউকে টিকেট দেওয়া হচ্ছিল না। কাউন্টারে দায়িত্বরত একজন বলছিলেন, ‘গাড়ি ছাড়ার সময় টিকিট দেওয়া হবে।’
কিন্তু যাত্রীদের জটলা বাড়তে থাকলেও টিকেট সরবরাহ করতে দেখা যায়নি। একপর্যায়ে লোকজন অধৈর্য হয়ে বলতে থাকেন, ‘বাড়তি কিছু টাকা লাগলে নেন তাও টিকেট দেন।’
স্বাভাবিক সময়ে এ বাসের ভাড়া ৩৫০ টাকা।
বেলা ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত অপেক্ষার পরেও টিকিট না পাওয়া আতিকুল ইসলাম নামে এক যাত্রী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শুধু বাস আছে বলে আমাদের অপেক্ষা করায়ে রেখেছে। এখনও টিকেট দিচ্ছে না। আসলে তারা এখনও ঠিক করতে পারছে না কত করে নেবে। সেজন্যই এমন তালবাহানা করছে।”
আমিনুল ইসলাম নামে একজন বলেন, “সকালে এই বাসে করেই ৫০০ টাকা করে আমার পরিচিত কয়েকজন গেছেন। এখানে যাত্রী জমা করে টিকেট না দিয়েই রাস্তার ওপারে নিয়ে যায়। সেখানে বাসে তুলে বাড়তি ভাড়া নেয়। টিকেট নাই, কোনো প্রমাণও নাই।”
“আর এখন শুরু করেছে আরেক নাটক, মানুষ অপেক্ষা করতে করতে অধৈর্য হয়ে এমনিতেই কিছু টাকা বাড়িয়ে দিয়ে হলেও যেতে রাজি হবে। ঈদে বাড়িতো যেতেই হবে, যাত্রীর চাপ না থাকলেও তাদের বাহানার শেষ নাই, তারা বাড়তি ভাড়া নেবেই।”
এ বিষয়ে কাউন্টারে গিয়ে কথা বলতে চাইলে দায়িত্বরত একজন ‘বাস ছাড়লে টিকেট দেওয়া হবে’ বলে কাউন্টার থেকে বেরিয়ে যান।
জামালপুরের মাদারগঞ্জগামী ‘মাদারগঞ্জ স্পেশাল’ পরিবহনের কাউন্টারে কর্মরত আবু তাহের বলেন, “টার্মিনালে গাড়ি ঢুকলে বাড়তি ভাড়া নেওয়া যাচ্ছে না। এইজন্য কোম্পানি গাজীপুরের বাইপাইলসহ আশেপাশের এলাকাতেই গাড়ি ঘুরায়ে দিতেছে।
“ওইখানে যাত্রীও আছে ৩৫০ টাকা ভাড়া নিতে পারতেছে ৫০০-৮০০। ২-৩ হাজার টাকার তেল খরচও হইলো না, যানজটেও পড়ল না। এজন্য কোম্পানির বেশিরভাগ গাড়িই ওইদিক দিয়া ঘুরায়ে চলে যাইতেছে।”