Published : 01 Aug 2024, 09:38 PM
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে হতাহতের ঘটনা তদন্তে মাঠে নামছে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন, ঘটনাস্থল সরেজমিন পরিদর্শন ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য গ্রহণের মধ্য দিয়ে যাদের কাজ শুরু হচ্ছে রংপুর থেকে।
কমিশন পুনর্গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারির পরই বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের মেডিয়েশন সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসে কমিশনের সদস্যরা এ ঘোষণা দেন।
সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট বিভাগের বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের নেতৃত্বে পুনর্গঠিত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের সদস্য করা হয়েছে একই বিভাগের বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ার ও মোহাম্মদ শওকত আলী চৌধুরী।
সংবাদ সম্মেলনে কমিশনপ্রধান দিলীরুজ্জামান বলেন, আগামী ৪ অগাস্ট কমিশনের সদস্যরা রংপুর যাবেন। ৫, ৬ ও ৭ অগাস্ট তারা রংপুর সার্কিট হাউজে প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য নেবেন।
রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বামনপুরের জাফরপাড়া এলাকার মদন খালির মো. মকবুল হোসেনের ছেলে মো. আবু সাঈদ কোটা আন্দোলনের মধ্যে সহিংসতায় নিহত হয়েছেন। এ ব্যাপারে ৫ অগাস্ট সাক্ষ্য নেওয়া হবে তথ্য দিয়েছে কমিশন।
খোন্দকার দিলীরুজ্জামান বলেন, মঙ্গলবার রংপুরে সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে নিহত সাজ্জাদ হোসেন, মোসলেম উদ্দিন মিলন ও মো. মানিক মিয়ার মৃত্যুর ঘটনায়।
কমিশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সাজ্জাদ হোসেন রংপুর মহানগরের পূর্ব শালবন শিক্ষাঙ্গন রোডের প্রয়াত ইউসুফ আলীর ছেলে; মোসলেম উদ্দিন রংপুর মহানগরের পূর্ব গণেশপুরের প্রয়াত মোকলেসুর রহমান মন্টুর ছেলে এবং মানিক মিয়া রংপুর মহানগরের পূর্ব ঘাঘটপাড়ার প্রয়াত সেকান্দার মিয়ার ছেলে।
কমিশনপ্রধান বলেন, বুধবার সাক্ষ্য নেওয়া হবে মো. মেরাজুল ইসলাম ও মো. আব্দুল্লাহ আল তাহেরের মৃত্যুর ঘটনায়। মেরাজুল রংপুর মহানগরের নিউ জুম্মাপাড়ার প্রয়াত শামসুল হকের ছেলে এবং তাহের রংপুর মহানগরের পূর্ব শালবনের মো. আব্দুর রহমানের ছেলে।
বিচারপতি দিলীরুজ্জামান বলেন, রংপুরে গিয়ে মাইকিং করবেন তারা। বলা হবে যে, কেউ চাইলে তার দেখা ঘটনার বিবরণ দিতে পারবেন।
সাক্ষ্য দিতে আসা কাউকে কোনো ধরনের ভয়ভীতি দেখানো হলে তাকে ছাড় দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন কমিশনপ্রধান।
১৭ জুলাই জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৬ জুলাইয়ে আন্দোলনের মধ্যে হতাহতের ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠনের ঘোষণা দেন। সে অনুযায়ী, বিচারপতি দিলীরুজ্জামানকে প্রধান করে এক সদস্যের কমিশন গঠন করা হয়, যা পুনর্গঠন করে বৃহস্পতিবার প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু হওয়া আন্দোলন ১৫ জুলাই সহিংস হয়ে ওঠে। ১৬ জুলাই থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত আন্দোলনের মধ্যে সহিংসতায় অনেক মানুষ হতাহত হয়েছে।
সংবাদমাধ্যমে আসছে দুই শতাধিক নিহতের খবর, তবে সরকার বলছে তাদের কাছে ১৪৭ জনের মৃত্যুর তথ্য রয়েছে।
সহিংস এই আন্দোলনে হতাহতের ঘটনায় জাতিসংঘসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা, সংগঠন, জোট নিন্দা ও উদ্বেগ জানিয়ে এর নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেছে।
প্রধানমন্ত্রীও এসব ঘটনার তদন্তে বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিশনের আওতা বৃদ্ধির ঘোষণার পাশাপাশি জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাকে তদন্তে সহযোগিতার আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে স্বরাষ্ট্র সচিব মো. মাহবুব হোসেনের সই করা এক প্রজ্ঞাপনে কমিশন পুনগর্ঠন করার ঘোষণা এসেছে বৃহস্পতিবার।
২১ জুলাই পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে মৃত্যু, সহিংসতা, নাশকতা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা তদন্ত করবে পুনর্গঠিত কমিশন।
সেই সঙ্গে বিভিন্ন সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত দপ্তর বা সংস্থা, প্রতিষ্ঠান, সরকারি কোম্পানি, সংবিধিবদ্ধ কর্তৃপক্ষ, করপোরেশন ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও নিরূপণ করবে তারা।
তিন সদস্যের বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন ‘কমিশন অব ইনকোয়ারি অ্যাক্ট ১৯৫৬’ অনুযায়ী তদন্ত কাজ শেষ করে ৪৫ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে বলে প্রজ্ঞাপনে সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কমিশনকে সাচিবিক সহায়তার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহ করবে। কমিশনকে সহায়তার উদ্দেশ্যে প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত যে কোনো ব্যক্তিকে তারা নিয়োগও করতে পারবে।
গত ১৮ জুলাই এক সদস্যের যে কমিশন গঠন করা হয়, সেই প্রজ্ঞাপনটিও রহিত করা হয়েছে। তবে সেই প্রজ্ঞাপনের অধীন গৃহীত কার্যক্রম এই প্রজ্ঞাপনের অধীন গৃহীত হয়েছে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।
বৃহস্পতিবার কমিশনের সংবাদ সম্মেলনে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের অন্য দুই সদস্য উপস্থিত ছিলেন।