Published : 03 Dec 2024, 12:37 AM
জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনে চলতি বছরের গত ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ১০৭ কোটি ৭৫ লাখ ৬১ হাজার ২৪০ টাকা জমা হয়েছে।
এর মধ্যে ৩৬৫ জন শহীদ পরিবারকে ১৮ কোটি ২৫ লাখ টাকা এবং ৭৭৫ জন আহতকে ৭ কোটি ৮৬ লাখ ৭০ হাজার ১৯০ টাকা দেওয়া হয়েছে সহায়তা হিসেবে।
অর্থাৎ, মোট ১১৪০ জনকে ২৬ কোটি ১১ লাখ ৭০ হাজার ১৯০ টাকা বিকাশ ও চেকের মাধ্যমে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে সোমবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের তৃতীয় কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের সভা হয়।
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম, সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ, জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ ও সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম সভায় উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, প্রায় আড়াই ঘণ্টার বৈঠকে ফাউন্ডেশনের দ্বিতীয় সভার কার্যবিবরণীর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের অগ্রগতির পর্যালোচনা করা হয়।
এছাড়া গণঅভ্যুথান সংক্রান্ত বিশেষ সেল ও ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম সম্পর্কিত আলোচনা, গুরুতর অসুস্থ রোগীদের সহায়তার জন্য মেডিকেল সাপোর্ট টিম, আইসিটি সাপোর্ট টিম, লিগ্যাল সাপোর্ট টিম গঠন নিয়ে আলোচনা হয়।
সভায় ফাউন্ডেশনের সংশোধিত গঠনতন্ত্রের অনুমোদন, নির্বাহী পরিষদ গঠন ও আয়-ব্যয়ের হিসাব অনুমোদন দেওয়া হয়।
গুরুতর অসুস্থ রোগীদের জন্য ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে একটি মেডিকেল সাপোর্ট টিম গঠন করা হয়েছে, যার চেয়ারম্যান করা হয়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক পরিচালক অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. জালাল উদ্দীনকে।
সভায় তিনি স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ে করণীয় সংক্রান্ত একটি বিশেষ প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন।
ডা. জালাল উদ্দীন বলেন, এখন পর্যন্ত জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের মধ্যে নয়জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হয়েছে। তাদের ছয়জনকে পাঠানো হয়েছে থাইল্যান্ডে, তিনজনকে সিঙ্গাপুরে।
কিছুদিনের মধ্যে আরো দুজন চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাবেন। এছাড়া আহত আরো ৭ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তুরস্কে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।
তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত আহতদের চিকিৎসায় বিদেশ থেকে কয়েকটি স্পেশাল মেডিকেল টিম এসেছে। এর মধ্যে নেপাল থেকে তিনজন বিশেষজ্ঞ, যুক্তরাজ্য থেকে দুইজন বিশেষজ্ঞ, ফ্রান্স থেকে একজন বিশেষজ্ঞ, থাইল্যান্ড থেকে ছয়জন বিশেষজ্ঞ ও চীন থেকে ১০ জন বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশে এসে বিশেষায়িত হাসপাতালগুলো পরিদর্শন, অস্ত্রোপচার ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টা আহতদের সুচিকিৎসার প্রয়োজনে বিদেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে দূতাবাসগুলোর সহযোগিতা চাওয়ার পরামর্শ দেন।
তিনি বলেন, “গুরুতর আহত যারা, তাদের বিস্তারিত মেডিকেল হিস্ট্রি তৈরি করে দূতাবাসগুলোর কাছে সাহায্য চাওয়া যেতে পারে। বিভিন্ন দূতাবাসের অনেক কর্মকর্তারা জুলাই-অগাস্ট মাসে বাংলাদেশে ছিলেন। আহতদের ব্যাপারে তাদের সহানুভূতি আছে। নিশ্চয় তারা আমাদের এ ব্যাপারে সাহায্য করবেন।”
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ মাহমুদুর রহমান সৈকতের বোন সাবরিনা আফরোজ সেবন্তি, শহীদ ফারহান ফাইয়াজের বাবা শহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া, শহীদ আনাসের বাবা সাহরিয়ার খান পলাশ, শহীদ তাহির জামান প্রিয়’র মা শামসী আরা জামানসহ শহীদ পরিবারের ১৪ জন সদস্য এদিন বৈঠকে অংশ দেন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অভ্যুত্থানে গুলিতে নিহত সন্তানের মরদেহ উদ্ধার থেকে দাফন পর্যন্ত দুর্বিষহ অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন শহীদ পরিবারের সদস্যরা। তারা মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি ‘পূর্ণ সমর্থন’ জানিয়ে আহতদের চিকিৎসায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার রাখার পরামর্শ দেন এবং জুলাই গণহত্যার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আপনাদের সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা আমার নেই। যারা শহীদ হয়েছে তারা একেকটি পরিবার থেকে এসেছে। আপনারা, আপনাদের পরিবার এমন একেকজন মানুষ তৈরি করেছেন, যারা এতখানি দুঃসাহস নিয়ে অধিকারের কথা বলেছে। আমি এই শহীদদের শ্রদ্ধা জানাই এবং একইসঙ্গে আপনাদেরও, শহীদদের পরিবারের সকলকে শ্রদ্ধা জানাই।
“জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের উদ্দেশ্য আহত ও নিহতদের দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে যেন পালন করা যায়। এটা আপনাদের ফাউন্ডেশন। আপনারা সরাসরি যুক্ত হন, পরামর্শ দেন, নিজের মত করে গড়ে নেন।”
সভায় ফাউন্ডেশনের একটি নির্বাহী পরিষদ গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ, সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মো. সারজিস আলম, অর্থ সম্পাদক হিসেবে মোহা. আহসান হাবীব চৌধুরী এবং নির্বাহী সদস্য হিসেবে অ্যাডভোকেট মোহা. মুজাহিদুল ইসলাম, সাবরিনা আফরোজ সেবন্তি ও ডা. তাসনিম জারাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
এছাড়া ফাউন্ডেশনের নির্বাহী সদস্য মুহা. মুজাহিদুল ইসলাম শাহীনকে প্রধান করে একটি লিগ্যাল সাপোর্ট টিম গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি ছয় সদস্যের একটি গভর্নিং বডি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস, কাজী ওয়াকার আহমাদ, নূরজাহান বেগম, শারমীন এস মুরশিদ, নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে সেখানে সদস্য হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।