Published : 03 Jul 2025, 02:35 PM
এক দশক আগে ঢাকার কূটনৈতিক পাড়া গুলশানে ইতালীয় নাগরিক চেজারে তাভেল্লাকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় তিন জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।
অভিযোগে সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত না হওয়ায় বিএনপি নেতা এম এ কাইয়ুম, তার ভাই আবদুল মতিনসহ চারজনকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ শেখ ছামিদুল ইসলাম বৃহস্পতিবার আলোচিত এ হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন।
এ মামলায় অভিযুক্ত সাত আসামির মধ্যে তামজিদ আহমেদ ওরফে রুবেল ওরফে শুটার রুবেল, মিনহাজুল আরেফিন রাসেল ওরফে ভাগনে রাসেল এবং রাসেল চৌধুরী ওরফে চাক্কি রাসেলকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি তাদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড, অনাদায়ে এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে রায়ে।
ঢাকা মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার এম এ কাইয়ুম, তার ভাই আবদুল মতিন, শাখাওয়াত হোসেন ওরফে শরিফ ও মো. সোহেল ওরফে ভাঙ্গারি সোহেলকে খালাস দিয়েছেন বিচারক।
৫১ বছর বয়সী তাভেল্লা নেদারল্যান্ডসভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা আইসিসিও কো-অপারেশনের প্রুফ (প্রফিটেবল অপরচুনিটিজ ফর ফুড সিকিউরিটি) কর্মসূচির প্রকল্প ব্যবস্থাপক ছিলেন। ২০১৫ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গুলশান-২ এর ৯০ নম্বর সড়কে জগিং করার সময় তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
লেখক, প্রকাশক ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের উপর জঙ্গি হামলার পর ওই ঘটনা আন্তর্জাতিক পর্যায়েও আলোড়ন তোলে। আইসিসিও এর কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ হেলেন ভন ডের বিক ওই দিনই গুলশান থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
আওয়ামী লীগের সময় ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় প্রথমে জঙ্গি সন্দেহের কথা বলা হলেও পরে বিএনপি নেতা কাইয়ুমকে মূল সন্দেহভাজন দেখিয়ে তদন্ত চলে। হত্যাকাণ্ডের প্রায় এক মাস পর কাইয়ুমের ভাই আব্দুল মতিন, শুটার রুবেল, চাকতি রাসেল, ভাগ্নে রাসেল ও শরীফকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
তাদের মধ্যে ভাগ্নে রাসেল, চাকতি রাসেল, শরীফ ও রুবেল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
তদন্ত শেষে ডিবি পুলিশের পরিদর্শক গোলাম রাব্বানী ২০১৬ সালের ২২ জুন আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। বিএনপি নেতা কাইয়ুমসহ সাতজনকে সেখানে আসামি করা হয়।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, “হামলাকারীদের একমাত্র লক্ষ্য ছিল একজন শ্বেতাঙ্গকে হত্যা করে দেশ-বিদেশে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেওয়া। দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে এই হত্যার পরিকল্পনা করা হয়।”
অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে ২০১৬ সালের ২৫ অক্টোবর সাত আসামির বিচার শুরুর আদেশ দেয় আদালত। বিচার চলাকালে রাষ্ট্রপক্ষের ৭০ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪২ জনের সাক্ষ্য শোনেন বিচারক।
রায়ের দিন ধার্য থাকায় কারাগারে থাকা চার আসামিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে আদালতে হাজির করা হয়। বিচারক ১টার দিকে এজলাসে ওঠেন রায় ঘোষণা করতে।
তিনি বলেন, “এটা একটা নিয়মিত মামলা। মিডিয়ার কাছে ভিন্ন রকম হলেও আমাদের কাছে ৮/১০টা মামলারই মত। তবে ভিকটিম ইতালীর নাগরিক। এ কারণে মামলাটা একটা স্পেশাল গুরুত্ব বহন করে।”
এরপর তিন আসামিকে খুনের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে তাদের সাজার রায় দেয় আদালত।
খালাস পাওয়া চার আসামির বিষয়ে রায়ে বলা হয়, “শাখাওয়াত হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, হত্যাকাণ্ডের সময় তার মোটর সাইকেল ব্যবহৃত হয়েছে। তবে হত্যার পরিকল্পনায় তার জড়িত থাকার বিষয়টি প্রমাণিত নয়। ভাঙ্গারী সোহেল মামলার শুরু থেকে পলাতক। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, হত্যাকাণ্ডে তার অস্ত্রই ব্যবহৃত হয়।
“অপর দুই আসামি, এম এ কাইয়ুম এবং আবদুল মতিন আপন দুই ভাই। তাদের নাম আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে আসে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা এখানে হত্যাকাণ্ডে প্ররোচিত করেন। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি।”