'বিচার বিভাগ কি এখন স্বাধীন': আজহারের খালাস নিয়ে বাম জোট

যুদ্ধাপরাধের মামলায় জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের খালাসে দেশের বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট।

বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে জোটের নেতারা বলেন, “১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতাকারী, আলবদর, আলশামস বাহিনী গঠন করে হত্যা, খুন, অগ্নিসংযোগ, নারী ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যায় জড়িত সবার বিচার এখনও সম্পন্ন হয়নি। দীর্ঘ সময় পরে হলেও যাদের বিচার হয়েছে, তাদের সবার রায় বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার রাজনৈতিক অসৎ উদ্দেশ্যে কার্যকর করেনি।

“গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকার বিগত আমলে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা আজহারুল ইসলামের সেই রায় বাতিল করে তাকে বেকসুর খালাস দেওয়ায় দেশবাসীর মনে প্রশ্ন, বর্তমান সরকারের সময়েও বিচার বিভাগ কি স্বাধীনভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছে?”

জোটের নেতারা একাত্তরের গণহত্যাকারী ও তাদের সহযোগীদের বিচার নিশ্চিত করা এবং চব্বিশের গণহত্যাকারীদের বিচার প্রক্রিয়া দৃশ্যমান করার দাবিও জানান।

মঙ্গলবার বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের সমন্বয়ক ও বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ, সিপিবির সভাপতি শাহ আলম, সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, বাসদের (মার্কসবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু এবং সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আব্দুল আলী এই বিবৃতি দেন।

দেশে চলমান বিভিন্ন আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে বিবৃতিতে তারা বলেন, “বিগত ফ্যাসিস্ট শাসনামলে বিচার বিভাগকে দলীয়করণ ও ফরমায়েশি রায়ের দরবারে পরিণত করে জনগণের আস্থাহীনতায় পর্যবসিত করা হয়েছিল। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর দেশবাসীর প্রত্যাশা ছিল, দেশে গণতান্ত্রিক আইনের শাসন ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা পাবে। কিন্তু সর্বত্র অরাজক পরিস্থিতি দেখে দেশবাসী এমনিতেই উদ্বিগ্ন ও হতাশাগ্রস্ত এই ভেবে যে, এত রক্তপাত, আত্মত্যাগের পরেও কি গণতন্ত্র, মানবাধিকার, ন্যায় বিচার অধরাই থেকে যাবে?”

আওয়ামী শাসনামলে বিচারের নামে প্রহসন হয়েছে দাবি করে তারা বলেন, “গণগ্রেপ্তার, গায়েবি মামলা, গণহারে আসামি করে ফরমায়েশি রায়ে নাগরিকদের হয়রানি করা হয়েছে। গণঅভ্যুত্থানের পর গণহত্যার জন্য প্রকৃত দায়ীদের চিহ্নিত করে সুনির্দিষ্ট অভিযোগে সুনির্দিষ্ট ব্যক্তির নামে মামলা না করে ঢালাও গণহারে মামলা দিয়ে বাস্তবে বিচার প্রক্রিয়াকে দুর্বল বা প্রকৃত অর্থে বিচারকে অস্বীকার করা হচ্ছে।

“অনেক ক্ষেত্রে ঢালাও মামলার আসামিদের কাছ থেকে পুলিশ ও কিছু রাজনৈতিক দলের লোকজনকে চাঁদাবাজির সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।”

এতে বলা হয়েছে, “বিগত আমলে, যেমন ২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা, ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় গণহারে সকলের শাস্তি দেওয়া হয়েছে। একইভাবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও বেশ কিছু মামলায় সকলকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে।

“এতে করে বিচার ও আইনের শাসন সম্পর্কে জনমনে অনাস্থা, অবিশ্বাস তৈরি হচ্ছে, যা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় উত্তোরণের পথে এক অশনি সংকেত।”