Published : 08 Jun 2025, 12:25 PM
এক বছর আগে ঢাকায় ফিলিস্তিনি দূতাবাসের সামনে সহকর্মীর গুলিতে কনস্টেবল মনিরুল হক খুনের মামলা রয়েছে অভিযোগ গঠনের শুনানির পর্যায়ে।
ঢাকার জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক উৎপল চৌধুরীর আদালতে অভিযোগ গঠনের শুনানির কথা রয়েছে আগামী ১৭ জুন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার এসআই রাজু আহমেদ গত বছরের ১০ ডিসেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দেন।
২০২৪ সালের ৮ জুন গুলশান-বারিধারা কূটনৈতিক এলাকায় ফিলিস্তিন দূতাবাসের সামনে দায়িত্ব পালনকালে সহকর্মীর গুলিতে নিহত হন কনস্টেবল মনিরুল। এ ঘটনায় মনিরুলের ভাই কনস্টেবল মাহাবুবুল হক গুলশান থানায় মামলা করেন। পরে মনিরুলের সহকর্মী কনস্টেবল কাউসার আহমেদকে গ্রেপ্তার ও রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ।
পুলিশ বলছে, ঘটনার রাতে কাউসার আলীর সঙ্গে ‘ডিউটি করা নিয়ে’ মনিরুলের বিতণ্ডা হয়েছিল। একপর্যায়ে কাউসার উত্তেজিত হয়ে অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি করে করেন। মনিরুলের মাথায়, চোখে, বাম ও ডান হাতে, বুকে, পিঠে ও পেটের বিভিন্ন জায়গায় গুলি লাগার তথ্য উঠে এসেছে পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রে।
অভিযোগপত্রে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, মনিরুল ও কাউসার ডিপ্লোমেটিক সিকিউরিটি বিভাগে কর্মরত ছিলেন। গত বছরের ৮ জুন রাত ১০টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত তাদের ডিউটি ছিল। আগের শিফটে দায়িত্বে থাকা কনস্টেবল শাকিল মোল্লা তার রাইফেল মনিরুলের কাছে এবং জাহিদুল তার অস্ত্রটি কাউসার আহমেদের কাছে হস্তান্তর করেন।
অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, রাত পৌনে ১২টার দিকে মনিরুল ও কাউসারের ‘ডিউটির বিষয় নিয়ে’ কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে কাউসার তার হাতে থাকা অস্ত্র দিয়ে মনিরুলকে গুলি করেন। মৃত্যু নিশ্চিত করতে এলোপাতাড়ি গুলি করলে মনিরুলের মাথায়, চোখে, বাম ও ডান হাতে, বুকে, পিঠে ও পেটে লাগে। ঘটনাস্থলেই মনিরুল মারা যান।
সেসময় পাশ দিয়ে সাইকেল চালিয়ে যাওয়ার সময় জাপান দূতাবাসের গাড়িচালক সাজ্জাদ হোসেন শাহরুখকেও গুলি করেন কাউসার। গুলি সাজ্জাদের বাম হাত ও পেটে লাগে। তখন ঘটনাস্থল থেকে দৌড়ে সরে যান। পরে তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। কূটনৈতিক এলাকায় মুহুর্মুহু গুলির শব্দে আতঙ্ক ছড়ায়। খবর পেয়ে গুলশান থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে কাউসারকে গ্রেপ্তার করে।
ঘটনার পরদিন গুলশান থানায় মামলা হয়। ওই হত্যাকাণ্ডের একটি ভিডিও পরে পুলিশের হাতে আসে। তাতে দেখা যায়, প্রথম গুলি লাগার পর মনিরুল উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন। তখন কাউসার আরও কয়েকটি গুলি করেন। এতে মাটিতে উপুর হয়ে লুটিয়ে পড়েন মনিরুল।
মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, “মামলাটা চার্জশুনানির পর্যায়ে আছে। আসামি কারাগারে আছে। চার্জগঠন হয়ে গেলে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সাক্ষী হাজির করে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির চেষ্টা করব।”
মনিরুলের ভাই মাহাবুবুল হক বলেন, “তিন ভাই আর তিন বোনের মধ্যে মনিরুল ছিল সবার ছোট, আদরের। এক বছর হয়ে গেল ভাইটা খুন হয়েছে। আমরা খুনির সর্বোচ্চ সাজা চই।
“ভাইকে হারিয়েছি, কীভাবে যে সময় যাচ্ছে সেটা তো আর ভেতরটা খুলে দেখাতে পারছি না। ওর তিন বছরের একটা ছেলে আছে। ছেলেটা আর বাবা বলে ডাকতে পারে না।”
কাউসারকে ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’ দাবি করে তার আইনজীবী সামছুল আলম বলেন, “কয়েক দফা ট্রিটমেন্টও করেছে। মামলাটা চার্জশুনানির পর্যায়ে আছে। চার্জগঠন হয়ে গেলে ট্রায়ালের বিষয় আছে। সাক্ষ্য, প্রমাণের মাধ্যমে তাকে নির্দোষ প্রমাণ করতে আইনি লড়াই করব।”
আরও পড়ুন-
পুলিশের গুলিতে পুলিশ নিহত: গ্রেপ্তার কনস্টেবল কাউসার রিমান্ডে
কনস্টেবলকে গুলি করে হত্যার ভিডিও পেল পুলিশ
এসএমজির গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যান কনস্টেবল মনিরুল
সহকর্মীর গুলিতে ঝাঁঝরা কনস্টেবল মনিরুলের মা বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন