Published : 02 Sep 2024, 12:03 AM
১৯৪৭ বা পাকিস্তান আন্দোলন ছাড়া বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা হত না মন্তব্য করে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেছেন, তারা পাকিস্তানের সঙ্গে ১৯৭১ এর ‘প্রশ্নটির’ সমাধান করতে চান।
ঢাকায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে ঢাকায় পাকিস্তানের হাইকমিশনার সৈয়দ আহমদ মারুফের সঙ্গে সাক্ষাতে তিনি এ কথা বলেন বলে মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
এতে বলা হয়, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে আগ্রহের কথা জানিয়ে মুক্তিযুদ্ধ প্রশ্নে ‘সমাধানে’ আগ্রহের কথা জানিয়েছে পাকিস্তান।
আইসিটি মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে এই সাক্ষাতে আলোচনার বিষয়বস্তু তুলে ধরা হয়।
এতে বলা হয়, সাক্ষাতে উপদেষ্টাকে পাকিস্তানি হাইকমিশনার বলেন, “আমরা ১৯৭১ এর প্রশ্নটিকে সমাধান করতে চাই। কিন্তু গত সরকার আমাদেরকে আলোচনার কোনো সুযোগ দেয়নি এবং ইচ্ছে করেই ৭১ ইস্যুটাকে জিইয়ে রাখত।
“চাইলে বহু আগেই এটির সমাধান করা যেত। আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে আগ্রহী।"
নাহিদ ইসলাম বলেন, “আওয়ামী লীগের আদর্শে ১৯৭১ ছিল ‘ইতিহাসের শেষ অধ্যায়’। কিন্তু আমরা মনে করি এটি ইতিহাসের ধারাবাহিকতা।…আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে ৭১ এর প্রশ্নটির সমাধান করতে চাই।”
একটি গণতান্ত্রিক দক্ষিণ এশিয়ার জন্য পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করা প্রয়োজন বলে মত দিয়ে নাহিদ বলেন, “আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় স্বার্থকে সমুন্নত রেখে যে কোনো দেশের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে আগ্রহী।"
পাকিস্তান হাইকমিশনার বন্যা দুর্গতদের জন্য সহযোগিতার প্রস্তাব দিলে উপদেষ্টা বলেন, “বর্তমানে বাংলাদেশের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। আপাতত সাহায্যের প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন হলে তখন জানানো হবে।”
পাকিস্তানি পরাধীনতা থেকে মুক্ত হতে ১৯৭১ সালে নয় মাস ব্যাপী সশস্ত্র লড়াই করেছিল বাংলাদেশের জনগণ। তখন পাকিস্তান সেনাবাহিনী নির্যাতনে ৩০ লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটেছিল বলে ইতিহাসে লেখা রয়েছে।
সেই গণহত্যার জন্য পাকিস্তানকে ক্ষমা চাওয়া এবং আন্তর্জাতিক মহলের কাছে ওই গণহত্যার স্বীকৃতি দাবি করে আসছে বাংলাদেশ।
কিন্তু বিগত ৫৩ বছরে দেশটির সঙ্গে সম্পর্কের উত্থান পতন ঘটলেও এর কোনো সমাধান আজও আসেনি।
উপদেষ্টা নাহিদকে পাকিস্তানের হাইকমিশনার বলেন, ভিসা প্রদান ও বিমানবন্দরে ‘সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণে’ গত ১৫ বছর তাদের নানাভাবে হয়রানি করা হয়েছে।
নাহিদ ইসলাম বলেন, “ইন্দো-মুসলিম সভ্যতার অংশ হিসেবে উপমহাদেশে বাংলাদেশ-পাকিস্তানের সাংস্কৃতিক ও সভ্যতাগত সম্পর্ক রয়েছে। একটি গণতান্ত্রিক ও ভারসাম্যপূর্ণ দক্ষিণ এশিয়া গড়তে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার প্রয়োজন৷
“মুসলিম প্রধান দেশ হিসেবেও পাকিস্তানের জনগণের সঙ্গে বাংলাদেশের জনগণের গভীর বন্ধন রয়েছে। যদিও বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি বাংলাদেশকে বিশেষত্ব দিয়েছে।”
হাইকমিশনার পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট জয়ে অভিনন্দন জানান এবং তারা সিরিজ হেরে যাবেন বলেও আশঙ্কা করেন।
‘সংবিধান সংশোধন’
পাকিস্তানের দূত দেখা করে যাওয়ার পর তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করেন ঢাকায় অস্ট্রেলিয়ার ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার নাদিরা সিম্পসন এবং যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার সারাহ কুক।
অন্তর্বর্তী সরকারকে অভিনন্দন জানানোর উত্তরে অস্ট্রেলিয়া সরকারকে ধন্যবাদ জানান উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, “এটি ছাত্র জনতা সরকার এবং এই সরকারের মূল লক্ষ্য ‘নতুন বাংলাদেশকে’ পুনর্গঠন করা। এজন্য অস্ট্রেলিয়ার সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন।”
অস্ট্রেলিয়ার ডেপুটি হেড অফ মিশন ক্লিংটন প্রবক তাদের দুটি প্রকল্প এআই বেইজড সলিউশন এবং কেবল কানেক্টিভিটি অ্যান্ড রেজিলিয়ন্স সেন্টার এর কথা উল্লেখ করে বলেন, এ দুটো প্রকল্প নিয়ে তারা বাংলাদেশের সাথে কাজ করতে চান।
এআই বেইজড সলিউশন অনেকটা গুগল ট্রান্সলেট এর মত। বিশেষ করে পার্বত্য অঞ্চলে চাকমা, মারমা তাদের মাতৃভাষায় কথা বললে তা লিখিতভাবে স্ক্রিনে ভেসে উঠবে।
এ দুটি প্রকল্পে একসঙ্গে কাজ করতে সম্মত হন উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম।
ক্লিংটন প্রবক বাংলাদেশের সংবিধান সংশোধন বিষয়ে জানতে চান। এটা জাতীয় নির্বাচনের আগে হবে নাকি নির্বাচিত সরকারের কাছে একটা রূপরেখা দেওয়া হবে, সেই জিজ্ঞাসাও রাখেন তিনি।
জবাবে উপদেষ্টা নাহিদ বলেন, “যেহেতু আমরা দেশকে পুনর্গঠন করতে চাই তাই সংবিধান সংশোধন আবশ্যক। আমরা চাই জনগণের কথাই সংবিধানে উঠে আসুক।
“সংবিধান সংশোধনের বিষয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা শুরু হয়েছে । যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে গণপরিষদ আহ্বান করে আমরা সংবিধান সংশোধন করব।"
অন্য এক প্রশ্নে তিনি জানান, আগামী এক মাসের মধ্যেই সরকারের লক্ষ্য দেশবাসীর সামনে উপস্থাপন করা হবে।
ব্রিটিশ হাইকমিশনার আইসিটি ও সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। পাশাপাশি সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা, স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার বিষয়েও কথা বলেন।
ব্রিটিশ হাই কমিশনারকে উপদেষ্টা বলেন, “গত ১৫ বছরে বাংলাদেশে যে ‘ফ্যাসিস্ট’ সরকার ছিল, তাদের ‘অনিয়ম-দুর্নীতি’ এবং আন্দোলনের সময় যে ‘গণহত্যা’ চালিয়েছে এবং এর পরিণতি সম্পর্কের বিশ্ববাসীর কাছে প্রচার করতে চাই। এ বিষয়ে আমরা যুক্তরাজ্য সরকারের সহযোগিতা কামনা করছি।”
হাইকমিশনার ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা জিজ্ঞেস করলে নাহিদ বলেন, “বিগত সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশের নামে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি করেছে। আমাদের ডেটাবেইজ এবং ইনফরমেশন আপ টু ডেট রাখার মাধ্যমে সেই বিষয়ে স্বচ্ছতা আনার চেষ্টা করছি।”