Published : 30 Dec 2024, 01:05 AM
রাজধানীর শাহবাগে দিনভর সড়ক অবরোধ করে রাখার পর অবস্থান কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি চিকিৎসকরা; চলমান কর্মবিরতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবেন সোমবার।
রোববার রাত ১০টার দিকে অবস্থান কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়ে তারা শাহবাগ ছাড়তে শুরু করেন। এদিন বেলা ১১টা থেকে ভাতা বাড়ানোর দাবিতে সড়ক অবরোধে করে রেখেছিলেন তারা।
আন্দোলনে নামা চিকিৎসকদের সমন্বয়ক মো. নুরুন্নবী রোববার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দেশের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে অবস্থান কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়েছে। সোমবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতের কর্মসূচি ছিল, সেটাও থাকছে না।”
দাবি আদায়ে যে কর্মবিরতি চলছে, সেটিও আগামীকাল প্রত্যাহার করা হতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন নুরুন্নবী।
“আমরা সবাই মিলে আলোচনা করেছি। আগামীকাল প্রজ্ঞাপন হলে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আমরা সেটি (কর্মবিরতি) প্রত্যাহার করে নেব। রাতেই আমরা অনলাইনে সবার সঙ্গে বৈঠক করব। আগামীকাল সিদ্ধান্ত আপনাদের জানিয়ে দেব।”
জানুয়ারি থেকে ৩০ হাজার এবং জুলাই থেকে ৩৫ হাজার টাকা ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব মেনে নিয়েছেন কি না জানতে চাইলে নুরুন্নবী বলেন, "আমরা মিটিং করছি। মিটিংয়ের পর এই বিষয়ে জানাব।"
পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকদের ভাতা ২৫ হাজার টাকা বাড়িয়ে ৩০ হাজার টাকা করার প্রজ্ঞাপন প্রত্যাখ্যান করে রোববার সকাল থেকে বিক্ষোভ শুরু করেন চিকিৎসকরা। তারা শাহবাগে এসে বেলা ১১টার দিকে সড়ক অবরোধ শুরু করেন।
দুপুরের পর প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক সায়েদুর রহমানের সঙ্গে তার বাসায় আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের বৈঠক হয়।
ওই বৈঠকে জানুয়ারি মাস থেকে ৩০ হাজার টাকা এবং জুলাই মাস থেকে ৩৫ হাজার টাকা ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয় সরকারের তরফ থেকে।
বৈঠক থেকে শাহবাগে এসে সরকারের প্রস্তাবের কথা জানান সমন্বয়ক নুরুন্নবী। এসময় আন্দোলনকারীরা ‘মানি না মানি না’ বলে চিৎকার করেন।
তখন নূরুন্নবী বলেন, “আমাদের স্যারেরা বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সায়েদুর রহমান খসরু স্যার বলেছেন জানুয়ারিতে ৩০ হাজার আর জুলাই থেকে ৩৫ হাজার টাকা দেওয়া হবে।
“এর বাইরে কোনো চিন্তা করে লাভ হবে না। আমরা বলেছি আগামীকাল (সোমবার) দুপুর ১২টার মধ্যে প্রজ্ঞাপন দিতে হবে, পরে আমাদের সিদ্ধান্ত জানাব।”
তখনও আন্দোলনকারীরা ‘মানি না, মানি না’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন।
আন্দোলনে অংশ নেওয়া চিকিৎসক মোহাম্মদ তানভীর রহমান দীপ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের দাবি ছিল ৫০ হাজার টাকার ভাতা। আলোচনার মাধ্যমে সরকার বলেছে ৩৫ হাজার টাকা ভাতা দেবে, সেটাই আমরা মেনে নিয়েছি।
“কিন্তু ৩৫ হাজার টাকা দিতে হবে জানুয়ারি থেকে। এ বিষয়ে সোমবারের মধ্যেই প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে।”
সারাদেশে প্রায় ১০ হাজার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসক রয়েছেন। দেশের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে উচ্চতর শিক্ষার পাশাপাশি তারা হাসপাতালে রোগীদের সেবা দেন।
ভাতা বাড়ানোর দাবিতে ২০২২ সাল থেকে আন্দোলন চালিয়ে আসছে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকরা। তাদের আন্দোলনের পর আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে জুলাই মাসে মাসিক ভাতা পাঁচ হাজার টাকা বাড়িয়ে ২৫ হাজার টাকা করা হয়। ওই ভাতা ‘যৌক্তিক নয়’ দাবি করে আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন আন্দোলনকারীরা।
অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর আবারও ভাতা বাড়ানোর দাবিতে চিকিৎসকরা আন্দোলন শুরু করেন। ২২ ডিসেম্বর তারা শাহবাগে সড়ক অবরোধ করলে সেখানে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতা সারজিস আলমের কাছ থেকে দাবি পূরণের আশ্বাস পেয়ে তারা রাস্তা ছাড়েন।
এ অবস্থায় অর্থবিভাগ গত ২৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস (বিসিপিএস) এর এফসিপিএস প্রথম পর্ব পাস করা অবৈতনিক প্রশিক্ষণার্থীদের পারিতোষিক ভাতা পাঁচ হাজার টাকা বাড়িয়ে ৩০ হাজার টাকা করার প্রজ্ঞাপন জারি করে।
সে সময় ওই ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে ডক্টরস মুভমেন্ট ফর জাস্টিসের এক বিবৃতিতে বলা হয়, “পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি ডাক্তারদের সঙ্গে ওয়াদা বরখেলাপ করা নতুন কিছু না। কিন্তু এই নতুন বাংলাদেশে আর কোনো বৈষম্য মেনে নেওয়া হবে না।”
নতুন ভাতা দাবি জানুয়ারিতেই, শাহবাগ ছাড়েননি ট্রেইনি চিকিৎসকরা
জুলাই থেকে ট্রেইনি চিকিৎসকদের ভাতা ৩৫ হাজার টাকা করার প্রস্তাব