Published : 01 Jun 2025, 02:26 PM
সরকারি চাকরি আইন সংশোধনের অধ্যাদেশে ‘ত্রুটি’ থাকার কথা স্বীকার করলেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান।
রোববার সচিবালয়ে আন্দোলনরত কর্মচারীদের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি বলেন, “এখানে কিছু প্রভিশন আছে যেগুলো অপপ্রয়োগের সম্ভাবনা আছে। আপনাদের অবস্থান হচ্ছে এটা বাতিল করে দিতে হবে। বাতিল করার দাবি জানিয়ে আপনাদের যে বক্তব্য, সেটা উপদেষ্টা পরিষদে আমি আলাপ করব।”
এর আগে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ফাওজুল কবিরের কাছে স্মারকলিপি দেন কর্মচারী ইউনিয়ন নেতা নূরুল ইসলাম ও নজরুল ইসলাম।
তারা উপদেষ্টার সামনে দেওয়া বক্তব্যে আইনের বিভিন্ন ‘নিবর্তনমূলক ও দমনমূলক’ দিক তুলে ধরেন।
বক্তব্য শুনে উপদেষ্টা বলেন, “এই অধ্যাদেশের যে অপপ্রয়োগের সম্ভাবনা আছে সেগুলোকে চিহ্নিত করা যায় কিনা ভেবে দেখবেন। এটার যে ইনহেরেন্ট ডিফেক্ট আছে সে বিষয়ে আমরা সচেতন।”
কর্মচারী ইউনিয়নের নেতাদের দাবির বিষয়ে অনড় না থাকার পরামর্শ দিয়ে ফাওজুল কবির বলেন, “যে কোনো একটা অবস্থানে অটল থাকার একটা সমস্যা আছে। তাতে আলোচনার অগ্রগতি হয় না। কী কী সেইফগার্ড ইন্ট্রোডিউস করলে আপনাদের কাছে এটা গ্রহণযোগ্য হবে, সেটা ভেবে দেখবেন।’
সরকারি চাকরি নিয়ে জারি করা অধ্যাদেশের বিরুদ্ধে রোববারও সচিবালয়ের বাদামতলায় জমায়েত হয়ে বিক্ষোভ দেখান কর্মচারীরা।
রোববার সকাল ১১টায় কয়েকশ কর্মচারী মিছিল করে সচিবালয়ের বিভিন্ন এলাকা প্রদক্ষিণ করেন। এ সময় হ্যান্ডমাইকে অন্য সহকর্মীদের মিছিলে আহ্বান জানাতে থাকে।
উপদেষ্টা পরিষদগত ২২ মে সরকারি চাকরি আইন সংশোধন করে অধ্যাদেশ আকারে জারি করার প্রস্তাবে সায় দেয়।
এর প্রতিবাদে ২৪ মে সকাল থেকে দিনভর সচিবালয়ে বিক্ষোভ করেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাদের আপত্তির মধ্যেই রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে ২৫ মে রাতে অধ্যাদেশ জারি করা হয়।
সেখানে পুরনো আইনের সঙ্গে ‘৩৭ক’ নামের আরেকটি ধারা সংযোজন করা হয়।
নতুন ধারায় একজন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে দুই দফায় সাত দিন করে নোটিসের পর, দায়ী হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা রাখার বিধান রাখা হয়েছে।
অধ্যাদেশে ‘আচরণ বা দণ্ড সংক্রান্ত’ বিশেষ বিধানে বলা হয়েছে-
>> কেউ যদি এমন কাজ করে যা অনানুগত্যের সামিল এবং যা অন্য কর্মচারীদের মাঝে অনানুগত্য সৃষ্টি করতে পারে বা শৃঙ্খলা বিঘ্ন ঘটাতে পারে বা অন্যের কর্তব্য পালনে বাধার সৃষ্টি করতে পারে;
>> এককভাবে বা সম্মিলিতভাবে ছুটি ব্যতীত কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলে। কাউকে কর্মবিরতিতে বাধ্য বা উস্কানি দেওয়া, অন্য কর্মচারীকে কাজে বাধা দেওয়া হলে;
>> কোনো কর্মচারীকে তার কর্মস্থলে আসতে বা কাজ করতে বাধা দেওয়া হলে তা দণ্ডনীয় অপরাধ হবে।
এসব অপরাধের শাস্তি হিসেবে পদাবনতি বা গ্রেড অবনতি, চাকরি থেকে অপসারণ কিংবা চাকরি থেকে বরখাস্ত করার বিধান রাখা হয়েছে।
এসব অসদাচরণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অভিযোগ গঠন, সাত দিনের সময় দিয়ে কারণ দর্শানোর নোটিস, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কারণ জানিয়ে জবাব না দিলে আবার সাত দিনের নোটিস দেওয়ার পর তা বিবেচনা করে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবে।
তবে অভিযুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীর আপিল রাখার সুযোগ রয়েছে। দণ্ডের নোটিস হাতে পাওয়ার ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে আপিল করা যাবে।
নতুন এই অধ্যাদেশকে আন্দোলনকারীরা বলছেন ‘নিবর্তনমূলক কালো আইন’।
পুরনো খবর
প্রতিদিন এক ঘণ্টা কর্মবিরতির ঘোষণা সরকারি কর্মচারীদের
সরকারি চাকরি আইন: কর্মচারীদের দাবি প্রধান উপদেষ্টার কাছে তুলবেন
সচিবালয়ের বাইরে কড়া নিরাপত্তা, ভেতরে কর্মচারীদের বিক্ষোভ
সরকারি কর্মচারীদের আন্দোলন একদিনের জন্য স্থগিত
সচিবালয়ের কর্মচারীরা বললেন, অধ্যাদেশ বাতিল না হলে আন্দোলন চলবেই
দিনভর বিক্ষোভে অচল সচিবালয়, সরকার নিশ্চুপ
বিক্ষোভের মধ্যেই সরকারি চাকরি আইন সংশোধনের অধ্যাদেশ জারি
সরকারি চাকরি আইন সংশোধন: সচিবালয়ে দ্বিতীয় দিনের মত বিক্ষোভ
সচিবালয়ে বিক্ষোভ: আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, বললেন স্বরাষ্ট
সচিবালয়ের কর্মচারীরা বললেন, অধ্যাদেশ বাতিল না হলে আন্দোলন চলবেই