Published : 13 May 2025, 08:29 PM
বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানকে `জাতীয় স্বার্থ’ অভিহিত করে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেছেন, “এটি দলীয় বা রাজনৈতিক স্বার্থের ঊর্ধ্বে ।”
রাজধানীতে মঙ্গলবার দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
টেকসই বিনিয়োগ পরিবেশ গড়তে নীতিগত ধারাবাহিকতা বজায় রাখা, চলমান সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন এবং এ বিষয়ে পরামর্শ ও সুপারিশ নিতে এ সভা আয়োজন করে বিডা।
আগারগাঁওয়ে বিডার প্রধান কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে হওয়া এ সভায় ১৬টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। সভাপতিত্ব করেন চৌধুরী আশিক বিন হারুন।
বাংলাদেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলতে বিডা নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে মন্তব্য করে আশিক চৌধুরী বলেন, “আমাদের দেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নানামুখী সংকট রয়েছে। এসব সংকট থেকে উদ্ধারের জন্য আমরা এখন কী করছি, সামনের ছয় থেকে আট মাসের মধ্যে কী করব, এসব বিষয়ে আপনাদের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হবে বলে প্রত্যাশা করি।”
সভায় বিডার সাম্প্রতিক কার্যক্রম, সংস্কার পরিকল্পনা, অগ্রগতি, বিনিয়োগ সম্মেলনের প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরেন সংস্থাটির হেড অব বিজনেস ডেভেলপমেন্ট নাহিয়ান রহমান রচি।
তিনি বলেন, দুই শতাধিক স্থানীয় বিনিয়োগকারী ও অংশীজনের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে বাংলাদেশে বিনিয়োগের পাঁচটি সমস্যা চিহ্নিত করেছে বিডা।
এগুলো হলো- সরকারি পরিষেবার মান, নীতির ধারাবাহিকতা না থাকা, ইন্ডাস্ট্রি কনসালটেশন, দুর্নীতি ও সম্পদ ব্যবহারের অপর্যাপ্ত সুযোগ।
এসব সমস্যা সমাধানে বিডা ইতোমধ্যে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে এবং ভবিষ্যতের জন্য দীর্ঘমেয়াদি যেসব পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে, সেসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে অবহিত করা হয় এবং তাদের মতামত জানতে চাওয়া হয়।
সভায় অংশগ্রহণকারী প্রতিটি রাজনৈতিক দল বিডার এমন উদ্যোগের প্রশংসা করে। তারা বিডার সংস্কার কার্যক্রমে পূর্ণ সমর্থন জানায় এবং দেশে একটি টেকসই বিনিয়োগ পরিবেশ গড়ে তুলতে বিডার ভূমিকার প্রশংসা করে।
দেশি বিনিয়োগকারীদেরও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দেন নেতারা। তারা বলেন, বিদেশি বিনিয়োগের পাশাপাশি দেশি উদ্যোক্তাদের জন্যও সহায়ক পরিবেশ তৈরি করা জরুরি।
এছাড়া রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা দক্ষ শ্রমিক গড়ে তোলার জন্য প্রশিক্ষণের উদ্যোগ, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, আইনি জটিলতা দূরীকরণ, শ্রমিকদের অধিকার রক্ষা এবং পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগকে উৎসাহিত করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয়ের পরামর্শ দেন বিডাকে।
তারা আরও বলেন, দেশের সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও জাতীয় স্বার্থের বিষয়গুলোতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
সবার পরামর্শ ও সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান সমাপনী বক্তব্যে বলেন, “আমাদের আগামী প্রেজেন্টেশনে সংস্কার পরিকল্পনায় স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের বিষয়ে আলাদাভাবে উপস্থাপন করা হবে।
“আমরা আপনাদের আশ্বস্ত করে বলতে চাই, জাতীয় স্বার্থের বাইরে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না। চট্টগ্রাম বন্দর আমাদের সমগ্র বাংলাদেশের বন্দর। এটাকে বিশ্বমানের একটি বন্দরে আমরা রূপান্তর করতে চাই। কিন্তু সবার আগে জাতীয় স্বার্থ, আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এ বিষয়ে কোনো আপস হবে না।”
বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, “নিয়মিতভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এ ধরনের ইতিবাচক আলোচনা অব্যাহত থাকবে “
সভায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিএম), বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), গণসংহতি আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদ, আমার বাংলাদেশ পার্টি, নাগরিক ঐক্য, বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) ও ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।