Published : 23 Nov 2024, 09:17 PM
বৈষম্য, নিপীড়ন ও আধিপত্যমুক্ত সর্বজনের বাংলাদেশ গড়ার আহ্বান তুলে ধরে 'বৈচিত্রের ঐক্য' শিরোনামে এক অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি।
শনিবার রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন শ্রেণি, পেশার মানুষের পাশাপাশি বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর শিল্পী ও সাধারণ জনতা অংশ নেন।
সমাবেশের স্লোগান ছিল, "দিকে দিকে আওয়াজ তুলুন: বৈষম্য, নিপীড়ন ও আধিপত্যমুক্ত সর্বজনের বাংলাদেশ চাই।"
সমাবেশে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, "পৃথিবী টিকে আছে, কারণ প্রকৃতির মধ্যে বৈচিত্র আছে এবং ঐক্য আছে। এই বৈচিত্রের বার্তা ছড়িয়ে দিতেই বৈচিত্রের ঐক্য গড়তে হবে।
”বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে হলে সব ধরণের সাংস্কৃতিক বৈচিত্রকে ধারণ করতে হবে।"
সমাবেশের শুরুতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও নাট্যকার সামিনা লুৎফা আয়োজকদের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান।
তিনি বলেন, "আমরা বাংলাদেশের সকল ধর্ম জাতি লিঙ্গ শ্রেণি বয়স আর পেশা তথা নানা বৈচিত্র্যের মানুষেরা মিলেই ’ভয়ংকর অত্যাচারী দুর্নীতিবাজ লুটেরা’ হাসিনা সরকারের পতন ঘটিয়েছি। আমরা চাই আগের অবস্থার পরিবর্তন করে বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে। মানুষ জীবন দেবে অথচ কতিপয় গোষ্ঠী লুট করবে আর খবরদারি করবে এই অবস্থা আর চলতে দেওয়া যাবে না।
"কিন্তু রক্তক্ষয়ী গণ অভ্যুত্থানের পরেও দেখছি আগের মতো শ্রমিক মার খাচ্ছে, দখল চাঁদাবাজি জুলুম হচ্ছে; ধর্ম, জাতি, লিঙ্গীয় বা পেশাগত-সাংস্কৃতিক পরিচয়ের নামে বিভাজন তৈরি করার চেষ্টা চলছে।”
এরপর ম্রো জনগোষ্ঠীর ভাষায় গান পরিবেশন করেন মেনথাপ ম্রো। নাচ পরিবেশন করেন আকরামুল হিজড়া।
সমাবেশে বটতলা পরিবেশন করে নাটক 'আবার ফাল্গুন'। এটি নির্দেশনা দিয়েছেন কাজী রোকসানা রুমা। পরে একে একে পরিবেশিত হয়- মিরঞ্জিল্লার দাদরা গান।
এছাড়া বাউল গান শোনান সুনীল কর্মকার, চাকমা গান শোনান সংজোয়ার। কাওয়ালী শোনান নাজিম কাওয়াল।
আরও গান শোনান রামিসা চৌধুরি, কৃষ্ণকলি, কফিল আহমেদ, ইভান তাহাসিফ কথা। বক্তব্য দেন জয়া শিকদার ও নাট্যনির্দেশক মোহাম্মদ আলী হায়দার। আবৃত্তি পরিবেশন করেন দীপক সুমন।
সমাবেশে বক্তব্য দিতে মঞ্চে উঠে রিকশা ভ্যান ও ইজি বাইক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কুদ্দুস বলেন, "আমাদেরকে বলা হইল, তিন দিনের মধ্যে ব্যাটারি রিকশা উচ্ছেদ কইরা দিব। ক্যান দিব? এই আন্দোলনে তো ২৪ জন রিকশাওয়ালাও নিহত হইছে। কেউ তো আমাগোর কথা কয় না। আন্দোলনে যখন কেউ আহত হইছে, তাগো হাসপাতালে নিছে আমাগোর মত রিকশাওয়ালারা। প্রাইভেট কারওয়ালারা তো আহে নাই।
"আমরা সরকারের কাছে এই বার্তা দিয়ে দিছি, আমাগোরে যতদিন রোড পারমিট না দিব, আমরা রাস্তা ছাড়ুম না। আমরা ট্যাক্স দিতে রাজি আছি। আমাগো রোড পারমিট দেন।"
বিগত সরকারের সময় 'আয়নাঘরে নিপীড়নের’ শিকার হওয়ার দাবি করা মাইকেল চাকমা বলেন, "আমার জাতিস্বত্তার পরিচয় আপনি ঠিক করে দেওয়ার কে? চাকমা, ম্রো, মারমাসহ আমাদের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীকে সংবিধানে স্থান দেয়া হয়নি। আমরা বৈচিত্রের যে বাংলাদেশকে গড়তে চাই, সেখানে আমাদের আত্মপরিচয় নিয়েই মাথা উঁচু করে থাকতে চাই।"
পাহাড় থেকে সেনাশাসন প্রত্যাহারের দাবি করে তিনি বলেন, "অনেকে আমাদের ভুল বোঝেন, আমরা কিন্তু সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে না। আমরা সেনাশাসন প্রত্যাহারের দাবি করছি। অনেকে এটা সেনাবাহিনী প্রত্যাহারের সাথে মিলিয়ে ফেলেন।"
সংগীত শিল্পী অরূপ রাহী বলেন, "অভ্যুথান পরবর্তী সময়ে আমরা নানা রকম চ্যালেঞ্জের মুখে আছি। এই দেশ সবার হবে, সাম্যের হবে। তার অধিকার আমরা পাইনি বলেই এ সমাবেশ করতে হচ্ছে।"