Published : 06 Sep 2024, 01:04 AM
যৌনকর্মীদের ওপর শারীরিক নির্যাতন বন্ধে সরকারের হস্তক্ষেপ চেয়েছে যৌনকর্মীদের সংগঠন 'সেক্সওয়ার্কার্স নেটওয়ার্ক'।
বৃহস্পতিবার বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের আব্দুস সালাম হলে 'যৌনকর্মীদের ওপর নির্যাতন বন্ধে চাই সরকারি হস্তক্ষেপ' শিরোনামে এক সংবাদ সম্মেলন হয়।
সেখানে সংগঠনটি একজন যুবকের ঢাকার শ্যামলীতে ভাসমান যৌনকর্মীদের ওপর নির্মমভাবে লাঠিপেটা করার একটি নির্মম ভিডিও সম্প্রতি ফেইসবুকে ভাইরাল হওয়ার ঘটনা তুলে ধরে।
সংগঠনটির ভাষ্য- তাদের সঙ্গে থাকা নগদ অর্থ এবং মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। ভাইরালকৃত ভিডিওটির কারণে একজন যৌনকর্মীর সন্তান ট্রমাটাইজড হয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। এতে মা-সন্তানের সম্পর্কের মাঝে তিক্ততা সৃষ্টি হয়েছে।
“যাত্রাবাড়ী, শ্যামলী, শহীদ মিনার, মিরপুর মাজার রোড, ফার্মগেট, আসাদগেট, উত্তরা, কুড়িল ও বাড্ডাসহ বিভিন্ন জায়গায় প্রতিদিন যৌনকর্মীদের শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে। এতে করে অনেক যৌনকর্মী শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।”
দেশের প্রচলিত আইনে যৌনপেশাকে নিষিদ্ধ করা হয়নি দাবি করে সেক্সওয়ার্কার্স নেটওয়ার্কের সভাপতি আলেয়া আক্তার লিলি হাইকোর্টের (রিট পিটিশন নং ২৮৭১/১৯৯৯) এক রায়ের উদাহরণ টেনে আনেন।
তিনি বলেন, “যৌনকর্মীরা স্বেচ্ছায় যৌনমিলনে সম্মতি প্রদান করে এবং সমাজ স্বীকৃত পেশা না হলেও আইনে কোথাও যৌনপেশাকে নিষিদ্ধ করা হয়নি।
“সাপ্রেসান অব ইম্মোরাল ট্র্যাফিক অ্যাক্ট ১৯৩৩ এভাবে প্রযোজ্য থাকা সত্ত্বেও তারা তাদের জীবিকা নির্বাহ করে যাচ্ছে। যা নিষেধাজ্ঞামূলক কোন আইনের অনুপস্থিতিতে রাষ্ট্র সংরক্ষণের দায়িত্বপ্রাপ্ত। সংবিধানের ১১ নং অনুচ্ছেদে স্বীকৃত মানবসত্তার মর্যাদা সংক্রান্ত অধিকারটি আদালতে বলবৎযোগ্য না হলেও যৌনকর্মীরা নাগরিক হিসেবে সংবিধানের ৩১ ও ৩২ অনুচ্ছেদে বর্ণিত বলবৎযোগ্য অধিকারগুলো ভোগ করবার অধিকারী।”
সমাজই তার প্রয়োজনে এই পেশার সৃষ্টি করেছে দাবি করে আলেয়া আক্তার বলেন, “নারীরা অভাবের তাড়নায়, পারিবারিক ও সামাজিকভাবে প্রতারিত হয়েই মূলত যৌনপেশা বেছে নিতে বাধ্য হয়।
“অনেকক্ষেত্রে অপ্রাপ্ত-অল্প বয়স্ক মেয়েদেরকে সমাজের প্রতারক শ্রেণি বিভিন্ন অপকৌশলে যৌনকাজে বাধ্য করে। পরে সামাজিক নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তারা সমাজের মূল স্রোতধারায় ফিরে যেতে পারে না। বাধ্য হয়েই তারা যৌনকাজকে পেশা হিসেবে বেছে নেয়।”
কোনো মেয়ে নিজের ইচ্ছায় যৌনপেশায় আসতে চায় না বলে মন্তব্য করে দুর্বার নেটওয়ার্কের পার্বত্য অঞ্চলের সভানেত্রী ডনাই প্রু নেলী বলেন, “এই যৌনপেশা আদি যুগ থেকে এসছে সমাজকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য। আপনারা বলেন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে কোন? কেন ঘুরবে না? তাদের ব্রথেল উচ্ছেদ কেন করল?
“আমরা নারী আন্দোলনের মাধ্যমে বলেছি, যে রিকশা চালায় সে রিকশাচালক, ট্রাক চালায় যে, সে ট্রাক ড্রাইভার, যে যৌন কাজ করে সে যৌনকর্মী। এটা তার অধিকার। এই অধিকার কেউ রোধ করতে পারবে না।”
সেক্সওয়ার্কার্স নেটওয়ার্কের দাবি, নির্যাতনকারীদের দ্রুত শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। যৌনকর্মীদের সন্তানদের সুস্থ, নির্বিঘ্ন ও মূল স্রোতধারার পরিবেশে বেড়ে উঠার সুযোগ দেওয়া, সামাজিক ব্যবস্থায় কবরের ব্যবস্থা করা, নির্বিঘ্ন জীবনযাপন এবং সার্বিক নিরাপত্তার প্রতি উপদেষ্টা মণ্ডলীর দৃষ্টি দেওয়া, যৌনকর্মী নয় বরং মানুষ হিসেবে নিপীড়ন বন্ধ করা এবং সকল ধরনের নারী নির্যাতন ও যৌন হয়রানি বন্ধে আইনের সঠিক বাস্তবায়ন করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলন শেষে নারীবাদী সংগঠন ‘অগ্নি ফাউন্ডেশন’ এর প্রতিনিধি তৃষান আকতারা বলেন, যৌনকর্মীদেরকে সংবাদ সম্মেলনে অনেকেই মুর্যাল পলিশিং করেছে। তারা আহত হয়ে, নির্যাতনের শিকার হয়ে সংবাদ সম্মেলন করতে এসেও এবার তাদের মুর্যাল পলিশিংয়ের শিকার হতে হল। আমাদের সমাজ আজ কোথায় গিয়েছে ভাবা যায়? তাদের নিরাপত্তা দেওয়াটা এখন খুবই জরুরি।
এ সময় নারীপক্ষের প্রতিনিধি জাহানারা খাতুন উপস্থিত ছিলেন।