Published : 02 Jul 2025, 08:06 PM
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের ‘রূপরেখা’ দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি।
দলটি বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলো মিলে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার সমাধান চায় তারা।
বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপের অষ্টম দিনের সংলাপ শেষে ক্ষমতা হস্তান্তরের রূপরেখা দেওয়ার কথা সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরে এনসিপি।
এ বিষয়ে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব বলেন, “বাংলাদেশে যখনই ক্ষমতা হস্তান্তরের সময় হয়, তখন সরকারি দল, বিরোধী দল ও অন্যান্য দলের মধ্যে একটা সংঘাতপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
“এ কারণে আমরা এনসিপির পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে এবং ঐকমত্য কমিশনের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের সুস্পষ্ট রূপরেখা দিয়েছি।”
রূপরেখা তুলে ধরে দলটির কেন্দ্রীয় সদস্য জাবেদ রাসিম বলেন, “ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়েছিল, সেখানে বিচারালয়কে টেনে এনে বিচারালয়কে রাজনীতিকরণ করার ব্যবস্থা করা হয়েছিল, আমরা এটার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছি।
“আমরা বলেছি, রাজনৈতিক দলগুলোর মাধ্যমেই এই তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার প্রশ্নের সমাধান করতে হবে।”
এনসিপির রূপরেখা তুলে ধরে তিনি বলেন, সংসদের উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষ নিয়ে একটি ১১ সদস্যের সংসদীয় সর্বদলীয় কমিটি গঠন হবে। এই কমিটি সরকারি দল, বিরোধী দল ও অন্য সংসদ সদস্যদের তিনজন করে নাম প্রস্তাব করতে বলবে, যারা প্রধান উপদেষ্টা হতে পারেন।
প্রস্তাবিত মোট নয়জনের নাম জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে। সর্বদলীয় কমিটির ১১ জন সদস্য এই নয়জনের মধ্য থেকে প্রধান উপদেষ্টা বেছে নিতে ভোট দেবেন। আট/তিন ভোটে যিনি পাস করবেন তিনিই প্রধান উপদেষ্টা মনোনীত হবেন।
জাবেদ রাসিম বলেন, এই পদ্ধতিতে প্রধান উপদেষ্টা মনোনীত করা সম্ভব না হলে আনুপাতিক ভোট পদ্ধতিতে সংসদের উচ্চকক্ষ গঠিত হলে ‘র্যাংক চয়েজ’ ভোট পদ্ধতিতে সেই নয়জন প্রার্থীর মধ্য থেকে একজনকে প্রধান উপদেষ্টা হিসেব বেছে নেওয়া যাবে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে ‘মৌলিক’ সংস্কারের প্রস্তাব দেওয়া এনসিপির এই নেতা বলেন, “আমরা একটা পদ্ধতি দাঁড় করাতে চাই, শান্তিপূর্ণ উপায়ে ক্ষমতা হস্তান্তরের একটা প্রক্রিয়া আমরা ঠিক করতে চাই। ক্ষমতা হস্তান্তরের সময় যে যুদ্ধাবস্থা, গৃহযুদ্ধের মত অবস্থা সৃষ্টি হয়, সেই অবস্থা যেন বিরাজ না করে সেই প্রস্তাব আমরা দিয়েছি। তারা (ঐকমত্য কমিশন) বিবেচনা করবে বলেছেন।”
সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের জন্য নিজেদের প্রস্তাব তুলে ধরে এনসিপি নেতা আরিফুল ইসলাম আদিব বলেন, “সীমানা নির্ধারণের জন্য একটি স্বাধীন সীমানা পুনর্নির্ধারণ কমিশনের বিষয়ে প্রস্তাব রেখেছি।
“তার পরেও সকল রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে নির্বাচন কমিশনের অধীনে একটি বিশেষায়িত কমিটি হবে। যেটি সংবিধানের ১১৯ (১)গ এর অনুচ্ছেদে যুক্ত করা হবে। সে বিষয়টা ঐকমত্যের স্বার্থে পুনর্বিবেচনা করবো।”
তিনি বলেন, “সকল দলই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে একমত হয়েছে।”
দুই দিন বিরতি দিয়ে বুধবার আবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসে ঐকমত্য কমিশন।
এদিনের বৈঠকে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা এবং রাষ্ট্রপতির ক্ষমার নিয়মে পরিবর্তনের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে কমিশনের সহসভাপতি জুলাই সনদ নিয়ে আশার পাশাপাশি হতাশা থাকলেও জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে ‘একটা সনদের জায়গায়’ পৌঁছানো সম্ভব হতে পারে বলে মন্তব্য করেন।
অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতাদের গড়া নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ইতোমধ্যে জুলাই সনদ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের ‘প্রতিশ্রুতি’ রক্ষা করতে না পারার অভিযোগ এনেছে।
দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, “কোনো একটি পক্ষ যদি দলীয় স্বার্থে ঐকমত্য প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে তাহলে সরকারের উচিত ভয় না করে অন্য সকল পক্ষ ও সাধারণ জনগণকে সাথে নিয়ে এ ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করা।”
এমন প্রেক্ষাপটে আলী রীয়াজ বলেন, “কখনো কখনো আমরা অগ্রসর হই। কখনো কখনো আমরা যতটা অগ্রসর হতে চাই, ততটা না পারায় খানিকটা হতাশ হই। কিন্তু তারা পরেও আমরা চেষ্টা করলে জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে হয়ত একটা সনদের জায়গায় যেতে পারব। এটা আপনাদের সকলের প্রচেষ্টা, সকলের আন্তরিক সহযোগিতাটা হচ্ছে সবচেয়ে বড় জিনিস।”
জুলাই সনদ হবে রাজনৈতিক দলগুলোর এক ধরনের অঙ্গীকারনামা যেখানে ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট, অভ্যুত্থান পরবর্তী জনআকাঙ্ক্ষার বয়ান থাকবে এবং সে অনুযায়ী রাষ্ট্র সংস্কারের যেসব বিষয়ে একমত্য হবে, ত এগিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেবে রাজনৈতিক দলগুলো।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গত অক্টোবরে গঠিত ছয়টি সংস্কার কমিনের প্রতিবেদন জমা পড়ে ফেব্রুয়ারি মাসে। এসব প্রতিবেদনের সুপারিশের বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৫ ফেব্রুয়ারি যাত্রা করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
সংবিধান সংস্কার কমিশন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশন এবং জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ১৬৬টি সুপারিশের বিষয়ে ৩৮টি রাজনৈতিক দল ও জোটের মতামত চাওয়া হয়। যাদের মধ্যে ৩৩টি দল মতামত জানায়।
এরপর ২০ মার্চ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত তাদের সঙ্গে ৪৫টি অধিবেশনের মাধ্যমে প্রথম পর্বের সংলাপ সম্পন্ন করে ঐকমত্য কমিশন।
আরও পড়ুন: