Published : 16 May 2025, 01:25 PM
বাজেট বাড়ানো এবং শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার তদন্ত ও দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করাসহ চার দফা দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনাসংলগ্ন কাকরাইল মসজিদ মোড়ে অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সাথে বর্তমান-সাবেক শিক্ষার্থীদের সমাবেশ সকাল ১০টায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা পিছিয়ে তা শুরু হয় বেলা সাড়ে ১১টা থেকে।
সমাবেশে যোগ দিতে বাসে করে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা আসছেন। মৎস্য ভবন থেকে কাকরাইল মোড় পর্যন্ত সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
আর পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী তাদের জুমার নামাজের পর কাকরাইল মসজিদ মোড়ে অনশনস্থলে গণঅনশনে বসার কথা রয়েছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার দিনের বেলা ‘কমপ্লিট শাটডাউনের’ পর বৃহস্পতিবার মাঝরাতের কিছু আগে নতুন এ কর্মসূচির ডাক দেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. রইছ উদ্দীন।
এদিন সকাল সাড়ে ১০টার পরে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক রইছ উদ্দীন জানান, টানা অবস্থানের কারণে শিক্ষার্থীদের অনেকে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। এ কারণে সমাবেশের সময় পিছিয়ে দেওয়া হয়।
সকালে কাকরাইল মসজিদের সামনে সমাবেশ শুরু আগে সংবাদ সম্মেলন করেন অধ্যাপক মো. রইছ উদদীন।
তিনি বলেন, “ঢাকা শহরের প্রাণকেন্দ্র এই তিনদিকের রাস্তাটি আমাদের শিক্ষার্থীরা জড়ো হওয়ায় জনদুর্ভোগের কারণ হয়েছে, সেটা জানি। আমাদের দাবি যদি যৌক্তিক হয়, সেটাতো প্রথমদিনই সরকার আন্তরিক হলে নিরসন করতে পারতো। কিন্তু সেটা এখনও নিরসন হয়নি।”
‘জগন্নাথ অবহেলিত, বঞ্চিত ও নিষ্পেষিত, এটা ঐতিহাসিকভাবে সত্য’ বর্ণনা করে এই অধ্যাপক বলেন, “ এই বৈষম্য নিরসনের জন্য শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে দলমত নির্বিশেষে সবাই একাট্টা। আমাদের দাবি পূর্ণাঙ্গরুপে মানতে হবে। আমরা এমন একটি পর্যায়ে উপনীত হয়েছি, আর পেছনে যাওয়ার সুযোগ নেই।”
টানা ৪৮ ঘন্টা আন্দোলনের কারণে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে জানিয়ে অধ্যাপক রইছ বলেছেন, কোনো ধরনের সুস্পষ্ট ঘোষণা ছাড়া তারা ‘রাজপথ থেকে একচুলও সরবেন না’।
“আমাদের রক্তের ওপর প্রতিষ্ঠিত যে সরকার আমাদের হুমকি ধামকি দেয় কিংবা স্টিমরোলারও চালানোর চেষ্টা করে, তাহলে আমরা রুখে দেব। যদি সরকারি কোনো এজেন্সির লোক তুলে নিয়ে যায় তবুও আন্দোলন চালিয়ে যাবো।”
তিন দফা দাবিতে শুরু হওয়া এ আন্দোলন পরে চার দফায় রূপ নেয়।
শিক্ষার্থীদের চার দাবির মধ্যে রয়েছে-
১. আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে আবাসন বৃত্তি কার্যকর করতে হবে;
২. জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট কাটছাঁট না করেই অনুমোদন করতে হবে;
৩. জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ পরবর্তী একনেক সভায় অনুমোদন করে অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়ন করতে হবে;
৪. শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার তদন্ত ও দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
যা ঘটেছে
প্রথম তিনটি দাবি নিয়ে বুধবার দুপুরে আন্দোলনকারীরা ক্যাম্পাস থেকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ও দপ্তর যমুনা অভিমুখে ‘লং মার্চ’ শুরু করেন।
মিছিলটি গুলিস্তান গোলাপ শাহ মাজার, জিরো পয়েন্ট, সচিবালয়, শিক্ষা ভবন, হাই কোর্ট ও মৎস্য ভবন মোড়ে পুলিশের বাধার মুখে পড়লেও তা উপেক্ষা করে কাকরাইল মসজিদের সামনে আসে।
একপর্যায়ে মিছিলটি প্রধান বিচারপতির বাসভবনের সামনে এলে সেখানে পুলিশ টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে।
পরে পুলিশের সঙ্গে বৈঠক করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সেই আলোচনা ফলপ্রসূ না হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা যমুনায় যান।
সেখানে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের সঙ্গে বৈঠক করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষসহ শিক্ষক প্রতিনিধিরা। বৈঠক শেষে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে এলে শিক্ষার্থীরা ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে স্লোগান দেন। এক পর্যায়ে বোতল ছুড়ে মারা হলে তা উপদেষ্টার মাথায় লাগে।
মাথায় আঘাতের পরে মাহফুজ বলেন, “আপনাদের অপকর্মের মাধ্যমে আপনারা পুলিশের অবস্থানকে নায্যতা দিলেন।”
বিব্রতকর এ ঘটনার মধ্যে কাকরাইল মোড়ে অবস্থান নেওয়া জগন্নাথের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের দাবির বিষয়ে উপদেষ্টা সুনির্দিষ্ট কোনো আশ্বাস দেননি। তবে সরকার তাদের দাবি বিবেচনা করছে বলে জানান।
সরকারের তরফে ‘নিশ্চিত আশ্বাস’ না পেয়ে আন্দোলনকারীরা রাতভর কাকরাইল মসজিদ মোড়ের সড়কে অবস্থান করেন ও স্লোগান দিতে থাকেন।
পরদিন বৃহস্পতিবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক রইছ উদদীন ফেইসবুক লাইভে এসে আন্দোলনে যোগ দিতে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানান। তার ডাকে সাড়া দিয়ে দিনভর অন্তত ৪০টি একতলা ও দোতলা বাসে করে শিক্ষার্থীরা কাকড়াইল মোড়ে আসেন। আর শিক্ষকদের অন্তত আটটি মিনিবাস ঘটনাস্থলে আসে।
সকাল ১০পার পর থেকে কাকরাইল মসজিদ মোড়ে অবস্থান নেওয়া শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে শরিক হতে একের পর এক বাস নিয়ে আসেন সতীর্থরা। এ আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করে অংশ নেন বিপুল সংখ্যক শিক্ষকও।
সকাল থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ৩০টি একতলা ও দোতলা বাস যোগে শিক্ষার্থীরা এসেছেন।
এরপর দিনভর শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি মধ্যরাত পর্যন্ত গড়ালেও সরকারের পক্ষ থেকে আশানুরূপ কোন সাড়া না পাওয়ায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা তাৎক্ষণিক বৈঠক করেন।
বৈঠক শেষে রাত ১২টার কিছু আগে গণঅনশন কর্মসূচি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন অধ্যাপক রইছ উদদীন।
তারা সেখানে আগের রাতের মত বৃহস্পতিবার রাতেও অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেন।
জগন্নাথের শিক্ষার্থীদের গণঅনশনের ডাক
জগন্নাথের আন্দোলন: একের পর এক বাস আসছে কাকরাইলে
দাবি আদায়ে জগন্নাথে 'শাটডাউন'
দাবি আদায়ে কাকরাইল মসজিদ মোড়ের অবস্থানে অনড় জগন্নাথের শিক্ষার্থীর
জবির আন্দোলনকারীদের রাত কেটেছে সড়কে, বিক্ষোভ অব্যাহত
হঠাৎ উড়ে এল বোতল, মাথায় আঘাত পেয়ে উপদেষ্টা বললেন, 'যারা করেছে ভুল