Published : 12 Jun 2025, 02:43 PM
এ বছর মে মাসে সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত ৬১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের ৪২ শতাংশই মারা গেছেন বাইক দুর্ঘটনায়।
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে এই পরিসংখ্যান তুলে ধরেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত সমিতির মে মাসের দুর্ঘটনা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই সময়ে দেশের সংবাদমাধ্যমে ৫৯৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৬১৪ জন নিহত এবং ১১৯৬ জন আহত হওয়ার তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।
এছাড়া রেলপথে ৪৮টি দুর্ঘটনায় ৩৫ জন এবং নৌপথে সাতটি দুর্ঘটনায় নয় জনের মৃত্যুর তথ্য এ পরিসংখ্যানে এসেছে।
সড়ক, রেল ও নৌ-পথ মিলিয়ে মে মাসে দুর্ঘটনা ঘটেছে অন্তত ৬৫২টি। এসব ঘটনায় অন্তত ৬৫৮ জন নিহত এবং ১২১০ জন আহত হয়েছেন।
যাত্রী কল্যাণ সমিতি বলছে, এই সময়ে ২৩৩ টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ২৫৬ জন নিহত হয়েছেন, যা মোট দুর্ঘটনার ৩৯.০২ শতাংশ, নিহতের ৪১.৬৯ শতাংশ।
সবচেয়ে বেশি ১৩৯টি সড়ক দুর্ঘটনা হয়েছে ঢাকা বিভাগে, তাতে ১৪৮ জন নিহত এবং ২৭১ জন আহত হয়েছেন।
বরিশাল বিভাগে সবচেয়ে কম, ৩০টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩০ জন নিহত ও ৪৪ জন আহত হয়েছেন।
সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশের জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন সংবাদপত্রে প্রকাশিত সড়ক, রেল ও নৌ পথের দুর্ঘটনার সংবাদ মনিটরিং করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
সড়কে দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৪২ জন চালক। এছাড়া ৯৫ জন পথচারী, ৬৬ জন শিক্ষার্থী, ৫৯ জন নারী, ৫৪ জন শিশু এবং ৩৪ জন পরিবহন শ্রমিক রয়েছেন।
দুর্ঘটনায় পড়া যানবাহনগুলোর মধ্যে ২৯.৪১ শতাংশ মোটরসাইকেল, ২২.৫৩ শতাংশ ট্রাক-পিকাপ-কাভার্ডভ্যান ও লরি, ১২.৪৮ শতাংশ বাস, ১৪.১৭ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিক্সা ও ইজিবাইক, ৬.৬৬ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিক্সা, ৯.৩১ শতাংশ নছিমন-করিমন-মাহিন্দ্রা-ট্রাক্টর ও লেগুনা, ৫.৩৯ শতাংশ কার-জিপ-মাইক্রোবাস।
মোট দুর্ঘটনার ৪৯.০৭ শতাংশ গাড়ি চাপা দেওয়ার ঘটনা, ২৪.৯৫ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ২০.১০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে, চাকায় ওড়না পেছিয়ে ০.৩৩ শতাংশ, এবং ০.৫০ ট্রেন-যানবাহনের সংঘর্ষ।
বিভাগভিত্তিক সড়ক দুর্ঘটনার চিত্র: মে মাস
বিভাগ |
সড়ক দুর্ঘটনা |
নিহত |
আহত |
ঢাকা |
১৩৯ |
১৪৮ |
২৭১ |
চট্টগ্রাম |
১৩১ |
১২২ |
৪১৬ |
খুলনা |
৯৬ |
৯৬ |
১৮৩ |
বরিশাল |
৩০ |
৩০ |
৪৪ |
ময়মনসিংহ |
৩৭ |
৩৯ |
৪২ |
সিলেট |
৩২ |
৩২ |
৮০ |
রংপুর |
৬৬ |
৭৯ |
৮৬ |
রাজশাহী |
৬৬ |
৬৮ |
৭৪ |
মোট |
৫৯৭ |
৬১৪ |
১১৯৬ |
যাত্রী কল্যাণ সমিতি মে মাসে সড়ক দুর্ঘটনার কিছু কারণেও তুলে ধরেছে।
>> দেশের সড়ক-মহাসড়কে মোটরসাইকেল ও ব্যাটারিচালিত রিক্সা অবাধ চলাচল।
>> জাতীয় মহাসড়কে রোড সাইন বা রোড মার্কিং, সড়কবাতি না থাকায় হঠাৎ যাতায়াতকারী ব্যক্তিগত যানের চালকদের রাতে এসব জাতীয় সড়কে ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চালানো।
>>জাতীয়, আঞ্চলিক ও ফিডার রোডে টার্নিং চিহ্ন না থাকার ফলে নতুন চালকের এসব সড়কে দুঘটনায় পড়ছেন।
>>মহাসড়কের নির্মান ত্রুটি, যানবাহনের ত্রুটি, ট্রাফিক আইন অমান্য করার প্রবণতা।
>> উল্টোপথে যানবাহন চালানো, সড়কে চাদাঁবাজি, পণ্যবাহী যানে যাত্রী পরিবহন।
>>অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, অতিরিক্ত যাত্রী বহন, বেপরোয়া যানবাহন চালানো এবং একজন চালক অতিরিক্ত সময় ধরে যানবাহন চালানো।
এসব পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে দুর্ঘটনার প্রতিরোধে কিছু সুপারিশসও করেছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
১. জরুরি ভিত্তিতে মোটরসাইকেল ও ব্যাটারিচালিত রিকশা আমদানি ও নিবন্ধন বন্ধ করা
২. জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে রাতের বেলায় অবাধে চলাচলের জন্য আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা
৩. দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ নেওয়া এবং ডিজিটাল পদ্ধতিতে যানবাহনের ফিটনেস সনদ দেওয়া।
৪. ধীরগতির যান ও দ্রুতগতির যানের জন্য আলাদা লেইনের ব্যবস্থা করা।
৫. সড়কে চাদাঁবাজি বন্ধ করা, চালকদের বেতন ও কর্মঘন্টা সুনিশ্চিত করা।
৬. মহাসড়কে ফুটপাত ও পথচারী পারাপারের ব্যবস্থা রাখা, রোড সাইন, রোড মার্কিং স্থাপন করা।
৭. সড়ক পরিবহন আইন যথাযতভাবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রয়োগ করা।
৮. উন্নতমানের আধুনিক বাস নেটওর্য়াক গড়ে তোলা, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএর সক্ষমতা বৃদ্ধি করা।
৯. মানসম্মত সড়ক নির্মাণ ও মেরামত সুনিশ্চিত করা, নিয়মিত রোড সেইফটি অডিট করা।
১০. মেয়াদোর্ত্তীন গণপরিবহন ও দীর্ঘদিন যাবৎ ফিটনেসহীন যানবাহন স্ক্র্যাপ করার উদ্যোগ নেওয়া।