Published : 26 May 2025, 10:25 PM
সরকারি সব সেবা এক ঠিকানায় পৌঁছে দিতে অনলাইনে যাত্রা শুরু করল ‘নাগরিক সেবা বাংলাদেশ’, যার স্লোগান—‘এক ঠিকানায় সকল নাগরিক সেবা’।
সোমবার রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এক অনুষ্ঠানে এই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের পাইলট প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
তার দপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের নির্দেশনায় এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের তত্ত্বাবধানে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
পাইলট প্রকল্পের আওতায় রাজধানীর গুলশান, উত্তরা ও নীলক্ষেত এলাকায় নাগরিক সেবা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এরমধ্যে গুলশান ও উত্তরার কেন্দ্র ইতোমধ্যে কার্যক্রম শুরু করেছে এবং স্বল্প সময়ের মধ্যে নীলক্ষেত কেন্দ্রও কার্যক্রম শুরু করবে।
প্রশিক্ষিত নাগরিক সেবা উদ্যোক্তোরা এ সেবাগুলো নাগরিকসেবা কেন্দ্র থেকে সাধারণ নাগরিকদের দেবেন।
অনুষ্ঠানে ইউনূস বলেন, “এমন ব্যবস্থা আমাদেরকে অবশ্যই দাঁড় করাতে হবে যাতে জন্ম গ্রহণ করা মাত্র শিশুরা জন্ম নিবন্ধন সনদ পেয়ে যায়। এটাই যেন হয় তার নাগরিক স্বীকৃতি।”
দালাল চক্রের দৌরাত্ম্য কমাতে, নানাবিধ হয়রানি রোধে ও ভোগান্তিমুক্ত নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে এই উদ্যোগ ‘যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করবে’ বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
প্রবাসীদের জন্যও একইভাবে ‘এক ঠিকানায় সব সেবা’ ধারণা বাস্তবায়নে বিশেষ সেবা কেন্দ্র গড়ে তুলতে প্রধান উপদেষ্টা আইসিটি বিভাগকে নির্দেশ দেন।
তিনি বলেন, “সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে ইতিবাচক প্রতিযোগিতা তৈরি করা আমাদের লক্ষ্য। আমাদের চেষ্টা হচ্ছে প্রতিটি মন্ত্রণালয় থেকে যতগুলো সেবা এর আওতায় আনা যায় সবগুলোকে দ্রুত নিয়ে আসা।”
নাগরিক সেবা কেন্দ্র পরিচালনা এবং এর মালিকানা নিয়ে তিনি বলেন, উদ্যোক্তারা জায়গার মালিকদের সঙ্গে চুক্তি করে ভাড়া পরিশোধ করবেন। প্রাথমিক পর্যায়ে ভাড়া হ্রাসকৃত হারে নির্ধারিত হবে। উদ্যোক্তারা নিরাপত্তা, রক্ষণাবেক্ষণ ও ইউটিলিটির দায়িত্ব নেবেন। সেবার মান বজায় না রাখলে লাইসেন্স বাতিল হতে পারে।
“নাগরিক সেবা বাংলাদেশ শুধুমাত্র একটি সেবা প্রদানের প্ল্যাটফর্ম নয়, এটি সরকার ও জনগণের মধ্যে সেতুবন্ধন গড়ে তোলার একটি আন্দোলন—যার ভিত্তি প্রযুক্তি এবং চালিকা শক্তি স্থানীয় উদ্যোক্তাবৃন্দ। অন্তর্ভুক্তিমূলক, টেকসই ও সম্প্রসারণশীল এই উদ্যোগ সারাদেশে নাগরিক সেবার আকর্ষণীয় রূপান্তর ঘটাতে সক্ষম হবে।”
আইসিটি বিভাগের পক্ষে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, “শূন্য বাজেটে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে দেশের বিদ্যমান সম্পদ ব্যবহার করেই সামনে এগিয়ে চলা সম্ভব।”
তিনি বলেন, ‘নাগরিক সেবা বাংলাদেশ’ উদ্যোগের মাধ্যমে পোস্ট অফিসসহ অব্যবহৃত সরকারি স্থাপনাগুলোকে রূপান্তর করে আধুনিক কো-ওয়ার্কিং স্পেসে পরিণত করা হবে এবং সেগুলো স্থানীয় উদ্যোক্তা দ্বারা পরিচালিত হবে।
নাগরিকদের জন্য হাঁটা-দূরত্বের মধ্যে অবস্থিত এই নাগরিক সেবা কেন্দ্রগুলোতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্থানীয় উদ্যোক্তারা জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট, কর ফাইলিংসহ বিভিন্ন সরকারি ডিজিটাল সেবা দেবেন।
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, “এই মডেলটি যেমন সরকারি সেবা নাগরিকদের জন্য সহজলভ্য করবে, তেমনি দেশের যুবসমাজ ও নারীদের জন্য অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভর হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করবে। সামাজিক ব্যবসার নীতিমালায় অনুপ্রাণিত ও সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের ভিত্তিতে চালিত এই উদ্যোগ হবে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন এবং নাগরিক ক্ষমতায়নের প্রতিচ্ছবি।”
তিনি বলেন, এই সেবার লক্ষ্য হচ্ছে একটি জাতীয় নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা, যা নাগরিকদের জন্য কার্যকর এবং সহজলভ্য ডিজিটাল সেবা নিশ্চিত করবে এবং একই সাথে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের ক্ষমতায়নের মাধ্যমে সামাজিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখবে।
নাগরিক সেবা কেন্দ্রে মিলবে যেসব সেবা
নাগরিক সেবা কেন্দ্রে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত উদ্যোক্তারা জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট, কর ফাইলিংসহ বিভিন্ন ডিজিটাল সরকারি সেবা দেবেন। সেন্টারগুলো নাগরিকদের হাঁটা দূরত্বের মধ্যে স্থাপন করা হবে।
দেশজুড়ে সেবা নেটওয়ার্ক গঠনের লক্ষ্য
এই উদ্যোগের মাধ্যমে সারাদেশে একটি কার্যকর ও সহজলভ্য ডিজিটাল সেবা নেটওয়ার্ক তৈরি করা হবে, যা একইসঙ্গে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের ক্ষমতায়নের মাধ্যমে সামাজিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতিতেও অবদান রাখবে বলে সরকার আশা করছে।
প্রশিক্ষিত উদ্যোক্তাদের দিয়ে শুরু
প্রথম ধাপে ২০০ আবেদনকারীর মধ্য থেকে বাছাই করে ১০০ জনকে (৫০ জন নারী এবং ৫০ জন পুরুষ) প্রশিক্ষণ ও সনদ দেওয়া হয়েছে। তারা এখন নাগরিক সেবা কেন্দ্র থেকে বিভিন্ন ডিজিটাল সেবা দেবেন।
পাইলট প্রকল্পে তিনটি সেবা কেন্দ্র
প্রথম ধাপে গুলশান, উত্তরা ও নীলক্ষেতে নাগরিক সেবা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এরমধ্যে গুলশান ও উত্তরা ইতোমধ্যে কার্যক্রম শুরু করেছে, নীলক্ষেত কেন্দ্রও দ্রুত চালু হবে।
নির্বাচন কমিশনের সচিব আখতার আহমেদ, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এস এম সালেহ আহমেদ, আইসিটি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী, পুলিশের মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. নূরুল আনোয়ার এবং জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ এস এম হুমায়ুন কবীর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।