Published : 28 Jan 2024, 04:30 PM
ভয়াবহ আগুনে পুড়ে যাওয়া মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে অগ্নি নির্বাপণের কোনো ব্যবস্থা ছিল না বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশনস অ্যান্ড মেনটেইন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. তাজুল ইসলাম।
তিনি বলেছেন, “প্রাথমিক ফায়ার ফাইটিংয়ের কোনো ব্যবস্থাই ছিল না। ফুটপাত ও সড়কে দোকান থাকায় এবং মানুষের ভিড়ের কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সমস্যা হয়েছে। পানির পর্যাপ্ত ব্যবস্থাও ছিল না।”
বৃহস্পতিবার ভোর পৌনে ৪টার দিকে কৃষি মার্কেটের নতুন টিনশেড কাঁচাবাজারে আগুনের সূত্রপাত হয়। ফায়ার সার্ভিসের ১৭টি ইউনিটের চেষ্টায় সকাল ৯টা ২৫ আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর অগ্নি নির্বাপক দলও আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিস সদস্যদের সহায়তা করে।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন বলছে, ওই মার্কেটে বরাদ্দ দেওয়া দোকান ছিল ৩১৭টি। এরমধ্যে অন্তত ২১৭টি দোকান আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ফুটপাতে থাকা আরও কিছু দোকান পুড়েছে।
আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, আগুন লাগার খবর পাওয়ার ৯ মিনিটের মাথায় তাদের গাড়ি সেখানে পৌঁছায়। ১৭টি ইউনিটের ১৫০ জন ফায়ার ফাইটার আগুন নেভাতে কাজ করে।
“আমরা দেখেছি, এই মার্কেটে কোনো সেইফটি প্ল্যান ছিল না। এ বিষয়ে মার্কেট কর্তৃপক্ষকে বারবার নোটিস দেওয়া হয়েছে, বিভিন্নভাবে গণসংযোগ করা হয়েছে। সচেতনতার প্রোগ্রাম যেভাবে আমরা করেছি, সেভাবে তারা সাড়া প্রদান করেন নাই।
“এই মার্কেটটা কিছুটা বঙ্গবাজার টাইপের। এখানে ভিতরে অনেক সাবওয়ে ছিল, কিন্তু ছোট ছোট। ভিতরে যতগুলো রাস্তা এবং বাইরে যে ছোট ছোট রাস্তা, পুরোটাই বিভিন্ন মালামালে দিয়ে গাদাগাদি করে রাস্তাটা বন্ধ করা ছিল। পুরো মার্কেট টাইট কলাপসিবল গেইট দিয়ে আটকানো ছিল।”
তাজুল ইসলাম বলেন, "এখানকার নাইট গার্ড যারা ছিলেন, তারা বাইরে ছিলেন। তাদের খুঁজেই পাওয়া যায়নি তেমন একটা। আমাদেরকে বেগ পেতে হয়েছে ভেতরে ফায়ার ফাইটারদের প্রবেশ করাতে। তালা ভেঙে এবং কলাপসিবল গেইট ভেঙে আমাদেরকে ভেতরে গিয়ে তারপর আগুন নির্বাপণের চেষ্টা করি।”
তাছাড়া দোকানের সামনে ছোটখাটো আরো দোকান গড়ে তোলায় আগুন নেভানোর কাজ কঠিন হয়ে গিয়েছিল জানিয়ে ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা বলেন, “আমরা আসার পরই আগুনের মাত্রা অনেক বেশি দেখেছি। একটা পর্যায়ে মার্কেটের প্রায় চার ভাগের তিনভাগ সম্পূর্ণ আগুন ধরে যায় এবং আমরা চেষ্টা করি এই মার্কেটের ভেতরেই যেন আগুনটা আবদ্ধ থাকে। আমাদের ফায়ার ফাইটাররা সর্বাত্মক চেষ্টা করে আগুনটাকে একটা জায়গায় সীমাবদ্ধ রাখতে পেরেছে।”
এ মার্কেটে আগেও আগুন লেগেছে, ফায়ার সার্ভিস তারপর কী ব্যবস্থা নিয়েছে প্রশ্ন করলে তাজুল ইসলাম বলেন, “আমরা প্রতি সপ্তাহে শনিবারে গণসংযোগ করি। এছাড়া বিভিন্ন সময় মার্কেটের প্রতিনিধিদেরকে ডেকে আমরা অনেকবার আলোচনা করেছি, অনেক ওয়ার্কশপ করেছি। মার্কেটের যারা মালিকপক্ষ, তাদেরকে ডেকে আমরা বুঝিয়েছি, প্রাথমিক ফায়ার ফাইটিং উনাদেরকেই করতে হবে।
“এই মার্কেটে প্রাথমিক ফায়ার ফাইটিংয়ের কোনো ইকুইপমেন্টই ছিল না। কোন ধরনের পানির সোর্স ছিল না। আমরা সব থেকে বেশি বেগ পেয়েছি পানির সোর্স না থাকায়। এখানে বিভিন্ন ভবনে পানির সোর্স রয়েছে, কিন্তু তা পর্যাপ্ত নয়। আমরা পানিবাহী বিশেষ গাড়ি এনে এবং অন্যান্য বাহিনীর সহায়তায় কাজটা করেছি।”
আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে কেন সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা লাগল, তার ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, “আরেকটি বড় কারণ ছিল মানুষের ভিড়। মানুষের ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে আমাদের পুলিশ, বিজিবি, তারা খুবই হিমশিম খেয়েছে। এই ভিড়ের কারণে আমাদের এত সময় লেগেছে। যদিও মানুষ চেষ্টা করতে চায় আমাদেরকে সহযোগিতা করার জন্য। কিন্তু এটা আমাদের অনেক সময় সমস্যায় ফেলে দেয়।”
মার্কেটে কীভাবে আগুন লাগল, সেই প্রশ্নে ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা বলেন, “সেটা আমরা তদন্ত করে দেখার চেষ্টা করব। তবে যতটুকু বুঝেছি, মুদি দোকানের যেই অংশটি ছিল, ওই অংশ থেকে আগুনের সূত্রপাত। আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজে যারা ছিল, তাদের দুই একজন কিছুটা আহত হয়েছে। এর বাইরে কোনো বড় ধরনের হতাহতের তথ্য নেই।”
(প্রতিবেদনটি প্রথম ফেইসবুকে প্রকাশিত হয়েছিল ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে: ফেইসবুক লিংক)