Published : 07 Apr 2023, 06:00 PM
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদের লেখা বইয়ে মুক্তিযুদ্ধের ‘ইতিহাস বিকৃতির’ অভিযোগ তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক সমিতি।
শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক নিজামুল হক ভূইয়া ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জিনাত হুদা স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়।
এতে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি তাকে অনতিবিলম্বে জেনোসাইড স্টাডিজ সেন্টারের পরিচালকের পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান ও তার ‘হিস্টোরাইজিং ১৯৭১ জেনোসাইড: স্টেট ভার্সেস পারসন’ শিরোনামের গ্রন্থে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির তদন্তের জন্য সিন্ডিকেট কর্তৃক মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের ইতিহাস বিষয়ে পণ্ডিত শিক্ষকদের সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি প্রণয়নের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দাবি জানাচ্ছে।
এ বইয়ের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের কাছেও জোর দাবি জানানো হয় বিবৃতিতে।
সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে একটি মতামত কলাম লেখেন। ওই লেখায় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের পরিচালক ইমতিয়াজের লেখা ২০০৯ সালে প্রকাশিত বইটিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অবমাননা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ তোলেন।
তবে অধ্যাপক ইমতিয়াজ ১৪ বছর আগে লেখা তার ওই বই নিয়ে তোলা অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন।
এ ধরনের অভিযোগে বিস্ময় প্রকাশ করে তিনি বলেছেন, তার বইটি ভুলভাবে পড়া হয়েছে।
গত ২ এপ্রিল এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, “যে বইটি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ ভূখণ্ডে সংঘটিত জেনোসাইডের বিচার এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জেনোসাইড স্টাডিজ সেন্টার প্রতিষ্ঠার আবেদন জানিয়ে রচিত, তাতে ১৯৭১ সালের জেনোসাইডকেই অস্বীকার কিংবা এর গুরুত্ব কমিয়ে দেখানো কীভাবে সম্ভব?
“প্রকৃতপক্ষে এ ধরনের অভিযোগ ওঠায় আমি আশ্চর্য হয়েছি। আমি মনে করি, কোথাও বইয়ের কোনো কোনো অংশ বুঝতে ভুল হয়েছে কিংবা ভুল ব্যাখ্যা হয়েছে।”
এ নিয়ে বাদ প্রতিবাদ দেখা দিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ৩ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর পিস অ্যান্ড লিবার্টির পরিচালক অধ্যাপক ফকরুল আলমকে প্রধান করে ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলেছে।
শুক্রবার শিক্ষক সমিতি বিবৃতিতে অধ্যাপক ইমতিয়াজের লেখা বইয়ে ইতিহাস বিকৃতির কিছু অংশও তুলে ধরে।
এতে বলা হয়, “বইয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ মার্চ ভাষণ শেষে 'জয় বাংলা'র সাথে 'জয় পাকিস্তান' বলেছেন বলে দাবি করেছেন (পৃ. ৪০), একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে অযথা বিতর্কের অবতারণা করেছেন (পৃ. ১৫ ও ১৬) ও ১৯৭১ এর গণহত্যার বিচার না হওয়ার পিছনে বিভিন্নভাবে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সরকারকে দায়ী করেছেন (পৃ. ১২, ১৩) এবং একাত্তরের গণহত্যার বিচারের ক্ষেত্রে ঐ সময়ে 'বাঙালীদের দ্বারা বিহারীদের হত্যার' বিচার করা উচিত বলে দাবি করেছেন (পৃ. ৪১, ৪২)।
"ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি তার এই ন্যাকারজনক ইতিহাস বিকৃতির তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে ও তার এই গ্রন্থটি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছে।"
বিবৃতিতে বলা হয়, শিক্ষক সমিতি মনে করে, উপরোক্ত বিষয়গুলো ইতোমধ্যে রাষ্ট্রীয় ও একাডেমিকভাবে সুরাহা হয়েছে। এগুলো নিয়ে অযথা বিতর্ক তৈরির সুযোগ নেই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ৭ মার্চের ভাষণ যেটি তিনি সমাপ্ত করেছিলেন 'জয় বাংলা' বলে সেই ভাষণটি ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্যের দলিল হিসেবে স্বীকৃত।
“সুতরাং জোনোসাইড স্টাডিজ সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ যে 'জয় পাকিস্তান' স্লোগানের কথা বলছেন তা একদিকে যেমন ইতিহাস বিকৃতির অকাট্য প্রমাণ ঠিক একইভাবে আন্তর্জাতিক পরিসরে স্বীকৃত 'জয় বাংলা' সম্বলিত বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণটিকে চ্যালেঞ্জ করণের অপচেষ্টা।“
বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়, অধ্যাপক ইমতিয়াজ ৭১ এর পরাজিত শক্তির দোসর হিসেবে কাজ করেছেন।