Published : 30 Jun 2023, 02:21 PM
ক্ষমতাসীন সরকারের ‘দুঃশাসনের’ বিরুদ্ধে ‘গণতান্ত্রিক বিশ্ববিবেক’ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো সোচ্চার হয়েছে মন্তব্য করেছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেছেন, “এবারে আর যেনতেন নির্বাচন করতে পারবে না (সরকার)। চারিদিক থেকে সরকারের বিরুদ্ধে ঘন অন্ধকার ধেয়ে এসেছে, সরকারের জন্য ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত চলছে। শেখ হাসিনার হুংকার আর কাজে আসবে না।”
ঢাকার নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে শুক্রবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে এসে এসব কথা বলেন এই বিএনপি নেতা।
রিজভী বলেন, “আজকে অবহেলিত, বঞ্চিত, নির্যাতিত, নিপীড়িত জনগণ গ্রাম থেকে শহরে সকল পর্যায়ে নানা শ্রেণিপেশার মানুষ জেগে উঠতে শুরু করেছে। স্বৈর রুদ্রশাসনের যাঁতাকলে পিষ্ট হয়েও জনগণ নিপীড়কদের প্রতিহত করতে শুরু করেছে। দেশের মানুষ অধিকার ঐক্যবদ্ধ। বাংলাদেশের দুঃশাসনে বিশ্ববিবেকও জাগ্রত হয়েছে।”
বিভিন্ন সময়ে গ্রেপ্তার হওয়া বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার করে অবিলম্বে তাদের মুক্তি দেওয়ার দাবি সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন রিজভী।
ঈদের মধ্যেও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হাতে আক্রমণের শিকারও হওয়ার অভিযোগ করে তিনি বলেন, “ঈদের মধ্যে আওয়ামী সন্ত্রাসের কোনো কমতি নেই। সশস্ত্র মহড়া থেকে শুরু করে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর আক্রমণ চালাচ্ছে।
“গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে দলের সহসাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিমের ঈদ শুভেচ্ছা পোস্টার-ব্যানার-ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলে। সংবাদ পেয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা সেখানে গেলে তাদের ওপর যুব লীগ, ছাত্রলীগ সশস্ত্র হামলা চালায়। এতে বেশ কয়েকজন দলের নেতাকর্মী আহত হয়।
“পাশাপাশি দলের সদস্য সচিব হাবিরুর রহমান রনি, মৃণাল মাতবরসহ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে এবং মিথ্যা মামলা দায়ের করে পুলিশ। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। গ্রেপ্তারদের মুক্তির জোর দাবি করছি।”
কারাবন্দি বিএনপির হাবিবুল ইসলাম হাবিব, শেখ রবিউল আলম রবি, মিয়া নূর উদ্দিন অপু, যুব দলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, সাবেক সহসভাপতি আলী আকবর চুন্নু, এসএম জাহাঙ্গীর, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোনায়েম মুন্না, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা শাহিন, স্বেচ্ছাসেবক দল উত্তরের সদস্য সচিব আজিজুর রহমান মোসাব্বির, সিরাজুল ইসলাম সিরাজসহ গ্রেপ্তারদে মুক্তির দাবি জানান রিজভী।
তিনি বলেন, “যেসব গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের কথা বললাম এদের প্রত্যেকের জামিন হয়ে গেছে। কিন্তু তাদের জোর করে আটকিয়ে রাখা হচ্ছে, তার প্রমাণ ‘নো হেরাজ, নো অ্যারেস্ট’ এই যে বিধি করা হয়েছিল হাই কোট থেকে সেটাকে উপেক্ষা করে অগ্রাহ্য করে একটি পুরনো প্যান্ডিং মামলায় ব্যাক ডেট দিয়ে তাদের নাম ঢুকিয়ে তাদেরকে আটকিয়ে রাখা হচ্ছে।
“শেখ হাসিনা আপনি বলেন, জনগণ নাকি আপনাকে রায় দিয়েছে দেশ চালাতে। তাহলে এত ভয় কেন হাবিব (হাবিবুল ইসলাম হাবিব) নিয়ে, এত ভয় কেনো নিরবকে (সাইফুল আলম নিরব) নিয়ে, মুন্নাকে (আবদুল মোনায়েম মুন্না) নিয়ে…এত ভয় কেন আপনাদের? যে মামলায় তাদের নাম নেই তারপরও তাদেরকে আপনারা আটকিয়ে রেখেছেন।”
কোভিড মহামারী মোকাবিলা ও ডেঙ্গু প্রতিরোধে সরকার ব্যর্থ হয়েছে বলেও সংবাদ সম্মেলন অভিযোগ করেন এই বিএনপি নেতা।
“রাজধানীসহ দেশের কয়েকটি স্থানে ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিদিনই এইডিস মশা বাহিত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা বাড়ছে…এটা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক।
“অথচ বরাবরের মত এখনও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ভোটারবিহীন আওয়ামী সরকার সবসময়ই মানুষের বেঁচে থাকার নিরাপত্তাকে উপেক্ষা করেছে।”
কোভিড মোকাবিলায় সরকারের ভূমিকা সম্পর্কে রিজভী বলেন, “ওরা করোনা মোকাবেলায় শুধু ব্যর্থই হয়নি বরং করোনার টিকাকে কেন্দ্র করে মানুষের জীবনকে বিপন্ন করে নিজেদের লোককে প্রচুর অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে, করোনার টিকারকে কেন্দ্র করে তেলেসমাতি করেছে সরকারের ঘনিষ্ঠজনরা। এখন ডেঙ্গু নির্মূলেও তারা কোনো কাজ করছে না।”
সংবাদ সম্মেলন দলের যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, ঢাকা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক খন্দকার আবু আশফাকসহ প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।