Published : 04 Aug 2011, 08:57 AM
লেখার শুরুতেই সবাইকে আমার সালাম। ব্লগে এটাই আমার প্রথম প্রয়াস। আমি অন্য সবার মত এতটা জ্ঞানী কিংবা বিজ্ঞ না। হয়ত অনেক কিছুই না ভেবেই বলে ফেলি, করে ফেলি। আর আমার আর জ্ঞানীদের মধ্যে পার্থক্য হল আমি যা না ভেবে বলি তা তারা ভেবে বলেন। তবে মিল একটা জায়গায় তারাও এ পৃথিবীর একই বাতাসে নিঃশ্বাস নেন আমিও তাই।
ব্লগে আমার যাত্রাটা এভাবে হবে কখন ভাবিনি। কিসের একটা তাগিদে যেন আমার এই লেখা। যখন দেখি সবাই ধর্ম নিয়ে এত মাতামাতি করছে। যখন দেখি সবাই তর্ক-যুক্তি নিয়ে এত ব্যস্ত। তখন আমার মত নিরীহ পাঠকরা কিইবা করতে পারে শুধু নির্বাক পাঠক না হয়ে? যেখানে হাজারও জ্ঞানী-গুণীর সমাবেশ। আমি নিজে খুব একটা শিক্ষিত না, না সশিক্ষিত। তারপরও লেখার বিন্দুমাত্র সাহস করলাম। করাটাই আমার মানব সহজাত ধর্ম। যা… আবারও ধর্ম এসে গেলো। ধর্মটা আমাদের একেবারে দেহগত কিংবা প্রাণগত হয়ে আছে বলে বোধ হয় এরকমটা হয়। যেখানে সহজাত স্বভাব হওয়াটাই কাম্য।
এই ধর্ম বলতেই মনে পড়ে গেল, আমাকে একদিন কেউ বলেছিল এই ধর্মটা আমরা নাকি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। কথাটার মানে তখন আমি একদমই বুঝতে পারিনি। আদৌ কি তা উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া? চলার সূত্রে কিংবা ভাগ্যবশত আমি কিছু মানুষের সহচার্য পেয়েছিলাম যা আমাকে পরবর্তী জীবনে চলার গতি বৃদ্ধির সহায়ক হয়ে আছে থাকবে আজীবন। তাদের সেই উৎসাহ প্রেরণার দায়ভার এখনও বয়ে বেড়াচ্ছি আর সেই জন্যেই হয়ত লেখার সূচনা।
যাহোক আসল কথায় আসা যাক। কয়েকদিন আগে আমি কিছু লেখা পড়লাম ব্লগে। লেখাগুলো পড়ে আমার আত্মপ্রতিক্রিয়া কি হয়েছিল তা বলার চেয়ে ভাবনাগুলোকে ভাগাভাগি করাই সমিচিন হবে বলে মনে হয়। কখগচৌ (ছদ্ম নাম) সাহেব কিংবা টঠডতী (ছদ্ম নাম) সাহেবের মধ্যে যে কথাও যুক্তির লড়াই দেখলাম তার মাত্রা যে কোথায় ছড়িয়ে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাদের দুইজনের কথা সুত্র ধরে আমার কিছু কথা বলার সৎ সাহস জাগে স্বভাবতই। কারণ আমিইতো একজন মানুষ, নই কি?
ধর্মটাকে আপনারা যেভাবে যুক্তি তর্কের শেষ মাত্রায় নিয়ে যেতে চাইছেন তার আসল উদ্দেশ্য কি? জানতে চাই। আচ্ছা বলুনতো আমার কিংবা কারো যুক্তি-তর্কের জোরে কি সত্যকে অগ্রাহ্য করা সম্ভব? আমি যুক্তি দেখিয়ে পৃথিবীর সব কিছুকেই হয়তো কল্পনা রাজ্যে এক সৃষ্টিকর্ম বলে প্রতিষ্ঠা করতে পারব কিন্তু তাই বলে কি সত্য এই পৃথিবীটা মিথ্যা হয়ে যাবে?
প্রকৃত জ্ঞানী-গুণী তারাই যারা তাদের কর্মদ্বারা পৃথিবীকে মহিমান্বিত করেছেন, শ্রী বৃদ্ধি করেছেন। আর মুর্খ তারাই যারা যুক্তি তর্কের বেড়াজালে থেকে সৃষ্টকর্মকে বাধাগ্রস্থ করে। আমাদের পবিত্র বিশ্বাসকে আমরা খুবই শ্রদ্ধা করি। সেখানে যখন অনাকাঙ্খিত আঘাত আসবে তখন আমরা স্বভাবতই প্রতিবাদ করবো। না হলে কিসের মানুষ আমরা।
আমাদের মধ্যেই অনেকেই হয়তো মতাদর্শে বিভক্ত, বিশ্বাসেও। কিন্তু প্রকৃত সত্য তাতে কি মুছে যাবে। ধরুন, আজকে যদি পৃথিবীর সব পূর্ববর্তী জ্ঞানী-গুণীদের কর্মগুলিকে ধ্বংস করে ফেলা হয় কিংবা যায় তাহলে কি এটা মিথ্যে হয়ে যাবে যে তারা একদিন পৃথিবীতে তাদের পদাভারে কিছু একটা করে গিয়েছিলেন মানব সমাজের জন্য। কিংবা তাদের আবির্ভাব আদৌ হয়েছিল তার মুছে ফেলা যাবে বা অস্বীকার করা যাবে? প্রকৃতপক্ষে তারাতো এসেছিলেন কর্ম দিয়ে তার সাক্ষী রেখেও গিয়েছেন। আবার ধরুন, আপনি রাতে ঘুমিয়ে আছেন। ঘুম থেকে সকালে উঠে বাইরে বেড়িয়ে দেখলেন যে, বৃষ্টির পানি। কিন্তু আপনি বৃষ্টি হয়েছে বলে আদৌ দেখেননি যা অন্যকেউ হয়তো দেখেছে। তাহলে আপনি কি বৃষ্টি হয়নি বলে অস্বীকার করবেন? আপনি যদি যুক্তির কথা বলেন তাহলে বলা যায় অস্বীকার করাটাই সঠিক। যা আমিও একমত। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, বৃষ্টি কিন্তু হয়েছে যা ছিল সত্য কিন্তু আপনি তখন ঘুমিয়ে ছিলেন। তো এখন অন্য সবার সাথে একমত হওয়াটা কি অন্যভাবে যু্িক্তসঙ্গত নয়? যুক্তির কথা বলা বললে অনেক কিছু বলা যায় যেমন, আমি যে আমার মা-বাবার সন্তান তার প্রমাণ কোথায়? আমি কি দেখেছি কার গর্ভে কার বীজে কিভাবে জন্ম নিয়েছি? কুড়িয়ে পাওয়া কিংবা দত্তক নেওয়া সন্তাদেরকেও যদি না বলা হয় তাহলে তারাও মনে তারা ঐ পালিত মাতা-পিতারই সন্তান। আদৌ কি তাই? সত্য কি? সত্যটা আমরা আমাদের মা-বাবার উপর অন্ধ বিশ্বাস। এমন কেউ কি আছেন যিনি একটু বয়স হওয়ার পর তার মা-বাবাকে জিজ্ঞাস করেন আদৌ কি সে তাদের সন্তান কিনা? নাকি কখনও মনে প্রশ্ন জাগে? জাগে তখনই যখন আমাদের বিশ্বাসটা পোক্ত নয় কিংবা ভালবাসার বিষাক্ত সংমিশ্রণ আছে বলে মনে হয়।
আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা ধর্মকে ব্যারিষ্টার উকিলদের মত যুক্তি তর্ক দিয়ে মিথ্যা প্রমাণ করতে চান কিংবা করেন। তাতে কি সত্য মিথ্যা হয়ে যায় বা মিথ্যা সত্য হয়ে যায়? এমন মনে হয় তারা যে ঠিকাদারি পেয়েছেন ধর্মকে কলংকিত করতে। যারা সেটা করেন তাদের উদ্দেশ্য কি? হ্যাঁ উদ্দেশ্য একটা নিশ্চয়ই আছে। যেটা তারাই জানেন ভালভাবে। তারা তাদেরকে মুক্তমনা বলেন। আসলে আমি এটার অর্থ বুঝি না। মুক্তমনা মানে কি সত্যকে মিথ্যা প্রমাণ করা বা মিথ্যাকে সত্য বানানো।
যারা বিশ্বাস করেন না যে, সৃষ্টিকর্তা বলে কেউ আছেন তাদের উদ্দেশ্য করে আমার কিছু বলা আছে। হ্যাঁ অনেক যুক্তি-তর্ক দাড় করিয়ে হয়তো প্রমাণ করা যায় যে, সৃষ্টিকর্তা বলে কেউ নেই। তেমনি তাদের সেই যুক্তি-তর্কের খাতিরে এটাও বলা যায় তাদের সে কথার কোন ভিত্তি নেই। আমরা চোখের ক্ষমতার বলে যা দেখি তাকে বলি দৃষ্টিশক্তি। আমরা কি আদৌ কি তা দেখতে পেয়েছি সে ক্ষমতাকে। যেমন দেখা সম্ভব নয় সেই ক্ষমতাকে আপন চোখে তেমন সৃষ্টিকর্তার রূপকে আপন দৃষ্টিতে দেখা সম্ভব নয়, শুধু অনুভবের ব্যাপার। অনেক যুক্তি হয়তো দাড় করাবেন কেউ কেউ কিন্তু তাতে কি? সত্য সত্যই সর্বদা।
আবার অনেকে বলেন কৈ তোমাদের সৃষ্টিকর্তাকে ডাকলে তো সাড়া দেয় না, তার মানে কোন সৃষ্টিকর্তা নেই। যা আমার কাছে হাস্যকর ব্যাপার। আমিই তো আমাকে সারাদিন ডাকি, প্রশ্ন করি কৈ কোন সাড়াতো সেচ্ছায় পাওয়া যায় না তার মানে কি আমার কোন অস্তিত্ব নেই? কেউ কেউ আবার প্রশ্ন করেন, তোমাদের সৃষ্টিকর্তা যদি এতই দয়ালু হতেন তাহলে কেন পৃথিবীতে নিরীহ মানুষের উপর এত অত্যাচার, অবিচার? কেন বন্যা হয়, ভূমিকম্প হয়, কেনইবা নিরীহ মানুষের উপর অত্যাচারকে তিনি নিরবে সয়ে যান? এসব নানারকম ফালতু যুক্তি। আমি এ ব্যাপারে বিস্তারিত আমার আগামী লেখায় লিখবো।
আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে যতটুকো বুঝি তাতে মনে হয় ধর্মকে বাদ দিয়ে আপন অস্তিত্ব অস্বীকার করার সামিল। আমি সেটাই বুঝি সেটা আমার প্রাণ বলে, সেটা আমার মন বলে। কিন্তু আমি সেটা মানতে নারাজ সেটা আমার সত্যকে কলুষিত করে। আর গুটি কয়েকে মানুয়ের জন্য প্রকৃত সত্য কখন মিথ্যা হতে পারে না কিংবা চিরন্তন সত্য কখন মিথ্যা হতে পারে না। যেমন পারে না ধর্ম কখনও কলুষিত কিংবা বিতর্কিত হতে। আমি যদি কাউকে গালি দেই গালির কি আসলে দোষ নাকি আমার?
অনেক যুক্তি হয়তো দায় করা যায় আমার লেখার উপর কিন্তু প্রকৃত সত্য তারাও বুঝবেন যারা এর বিপক্ষে যুক্তি দাড় করাবেন। আশা রাখি আমার দোষগুলো ভুলগুলো শুভাকাঙ্ক্ষীরাই ধরিয়ে দেবেন। ধন্যবাদ।