Published : 28 Jun 2025, 06:07 PM
বিভিন্ন দাবিতে এনবিআর কর্মীরা যে আন্দোলনে নেমেছেন, তা সমাধানে সরকারকে অতি দ্রুত আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছে বিজিএমইএ, বিটিএমএসহ ব্যবসায়ীদের ১১টি সংগঠন।
এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ী নেতারা বলেছেন, ‘‘উদ্ভূত সমস্যা নিরসনে মোটেও সময় ব্যয় না করে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের নেতৃত্বে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিডার যৌথভাবে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসা খুবই জরুরি।”
শনিবার ঢাকার একটি হোটেলে এ সংবাদ সম্মেলন হয়। সেখানে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোযার-উল-আলম চৌধুরী।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত করে দুটি বিভাগের মাধ্যমে কার্যক্রম চালানোর উদ্যোগ নেয় অন্তবর্তী সরকার।
জিডিপির তুলনায় কর আদায়ের অনুপাত বাড়ানো, কর ছাড় যৌক্তিক পর্যায়ে নেওয়া এবং আইএমএফের ঋণচুক্তির শর্ত পূরণ করতে গিয়ে এনবিআর সংস্কার কার্যক্রমে হাত দেয় সরকার।
কর্মচারীদের আন্দোলনে এনবিআর বিলুপ্তির অধ্যাদেশ স্থগিত হলেও সংস্থাটির চেয়ারম্যানের পদত্যাগসহ বিভিন্ন দাবিতে শনিবার সকাল থেকে কর্মচারীরা সারাদেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি শুরু করেন।
এতে বিভিন্ন বন্দরে খালাস ও রপ্তানির অপেক্ষায় থাকা পণ্যর শুল্কায়ন ও দাপ্তরিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে।
বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হোসেন খান বলেন, ‘‘এনবিআর কর্মচারীদের আন্দোলনে দৈনিক আড়াই হাজার কোটি টাকার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ব্যাহত হচ্ছে। আমি বলব না, এ পরিমাণ ক্ষতি হচ্ছে, ব্যাহত হচ্ছে।”
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ বলেন, ‘‘এনবিআরের লোকজন এতদিন আমাদের জ্বালাইছে, এখন সরকারকে জ্বালাইতাছে।”
বিসিআই সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী বলেন, ‘‘জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানের অপসারণ কোনোমতেই কাম্য নয় এবং তা কোনো প্রকার সফলতা নিয়ে আসবে বলে আমরা মনে করি না।”
লিখিত বক্তব্যে সংগঠনগুলো বলছে, ‘‘কলম বিরতিতে দেশের আমদানি-রপ্তানি মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। রপ্তানিকারকরা সময়মত আমদানির কাঁচামাল খালাস করতে পারছেন না।
“ফলে দেশের রপ্তানিতে বর্ধিত লিড টাইম আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাছাড়া সমুদ্র বন্দর ও বিমানবন্দরে পণ্য পড়ে থাকায় নষ্ট হচ্ছে। আংশিক কর্মঘণ্টার কারণে এক কর্ম দিবসের মধ্যে প্রত্যাশিত ইউপি পেতে ১০ থেকে ১৫ দিন সময় লেগে যাচ্ছে।“
চলমান সমস্যার সমাধান চেয়ে সংবাদ সম্মেলনে ব্যাবসায়িক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে সরকারের কাছে সাতটি সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—
>> জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আন্দোলনকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনা করে উক্ত প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন সেবা নিশ্চিত করা হোক।
>> উত্তম কর তথা রাজস্ব নীতি প্রণয়ন ও প্রণীত নীতি যথাযথভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের রাজস্ব নীতি প্রণয়ন ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমকে আলাদাকরণ সংক্রান্ত বিতর্কিত অধ্যাদেশ সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করা হোক। এরপর তা স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর প্রভাবমুক্ত রেখে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ও দেশের বাস্তবতার আলোকে বাস্তবায়ন।
>> জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ ব্যবসা বাণিজ্যের সার্বিক উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট সব জাতীয় প্রতিষ্ঠানে হয়রানিমুক্ত সেবা প্রদানের লক্ষ্যে এর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।
>> বিনিয়োগ, ব্যবসা-বাণিজ্য ও পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়নে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য রেগুলেটরি ও ফ্যাসিলিটেটিং প্রতিষ্ঠানগুলোর সামগ্রিক ও সমন্বিত উন্নয়নের লক্ষ্যে অংশীজনদের সাথে আলোচনা করে আধুনিকায়ন কর্মসূচি গ্রহণ করা।
>>অর্থ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে নিদের্শ দেওয়া।
সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনরত কর্মচারীদের কোনো ধরনের শর্ত ছাড়াই কর্মসূচি প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশের (আইসিসিবি) সভাপতি মাহবুবুর রহমান, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এলএফএমইএবি) সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, মেট্রো চেম্বার সভাপতি কামরান টি রহমান ও সিরামিক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিসিএমইএর সভাপতি মঈনুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।