Published : 23 Feb 2023, 07:11 PM
তিন জায়গায় একসঙ্গে তিন ফাইবার কেবল কাটা পড়ার ঘটনাকে ‘অস্বাভাবিক’ বর্ণনা করে গ্রামীণফোন বলেছে, এগুলো ব্যাকবোন কেবল হওয়ায় নেটওয়ার্কে বিপর্যয় হয়েছিল।
বৃহস্পতিবার সকালে কাছাকাছি সময়ের এ ঘট্নায় অপারেটরটির গ্রাহকরা দুই ঘণ্টা নেটওয়ার্কের বাইরে ছিলেন।
বেলা পৌনে ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত বিভ্রাটের এ সময়ে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার গ্রামীণফোন ব্যবহারকারীরা মোবাইলে নেটওয়ার্ক পাচ্ছিলেন না। কথা বলার পাশাপাশি ইন্টারনেট সেবাও পাওয়া যাচ্ছিল না। জরুরি যোগাযোগ করতে না পেরে এ সময়ে ভোগান্তিতে পড়েন গ্রাহকরা।
বিকালে গ্রাহক সংখ্যায় শীর্ষ অপারেটর গ্রামীণফোনের পক্ষ থেকে অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে নেটওয়ার্ক বিভ্রাটের বিষয়ে জানানো হয়।
এর আগে বিপুল সংখ্যক গ্রাহক ভোগান্তিতে পড়ায় অপারেটরটির কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে টেলিযোগাযোগ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সড়কে কাটা পড়া দুটি ফাইবার কেবল জোড়া দেওয়া হয়েছে। রেললাইনে কাটা পড়া অপরটি সংযোগে আনতে কাজ চলছে।
একসঙ্গে তিনটি কেবল কাটা পড়ার ঘটনাকে অস্বাভাবিক বললেও সেটা নাশকতা কি না সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি কর্মকর্তারা।
তারা বলছেন, সব গ্রাহক সেবার বাইরে ছিলেন না। তবে কত সংখ্যক গ্রাহক সেবা পাননি সে বিষয়ে তারা এখনও তথ্য যোগাড় করতে পারেননি।
সংবাদ সম্মেলনে গ্রামীণফোনের হেড অব নেটওয়ার্ক সার্ভিস এ কে এম আল আমিন জানান, ঢাকা থেকে গাজীপুর সড়কে, অ্যালেঙ্গা থেকে জামালপুর সড়কের মধ্যে এবং টাঙ্গাইল থেকে সিরাজগঞ্জ রেলপথে কেবল তিনটি কাটা পড়ে, যেগুলোর তিনটিই ব্যাকবোন ফাইবার কেবল।
এদিকে বিকালে অপারেটরটির সিইও ইয়াসির আজমানের একটি ভিডিও বার্তা গ্রামীণফোনের ভেরিফায়েড ফেইসবুক পেইজে আপলোড করা হয়।
এতে তিনি বলেন, একসঙ্গে তিনটি জায়গায় ফাইবার কাটা পড়েছে, যা খুবই অস্বাভাবিক। এরকম ঘটনা গ্রামীণফোনের ২৬ বছরের ইতিহাসে কখনও হয়নি। বিষয়টি তাদের আয়ত্তের বাইরে চলে গিয়েছিল বলেও তিনি জানান।
তবে তাদের দক্ষ কর্মী বাহিনী খুব দ্রুততার সঙ্গে সেগুলো মেরামত করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে। তিনি এ ঘটনার জন্য গ্রাহকদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন।
ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়ে সিইও বলেন, “আমরা আমাদের গ্রাহকদের যে বিটিএস (সাধারণ অর্থে টাওয়ার) দিয়ে কানেক্টেড করে থাকি সেই বিটিএসগুলো যার সাথে কানেক্টেড থাকে সেটাকে আমরা ফাইবার দ্বারা কানেক্টেড রাখি। এই ফাইবারগুলো রাস্তা ও রেললাইন দিয়ে যায়। আমরা এগুলো ভাড়া নিয়ে থাকি। অনেক সময়ই বিভিন্ন কারণে এগুলো কাটা পড়ে থাকে। আমাদের যেই ডেটা সেন্টার আমরা কয়েকটা ফাইবার দিয়ে সংযুক্ত রাখি। যেন একটা কেটে গেলে আরেকটা দিয়ে আমাদের নেটওয়ার্ক আপ রাখা যায়।
“এ রকম ফাইবার কাট অহরহই হয়ে থাকে বাংলাদেশে, যখন বিভিন্ন রকমের নির্মাণ কাজ চলে। শুধু বাংলাদেশে নয় পৃথিবীর সব জায়গাতেই। কিন্তু আমি বলেছি দুর্ভাগ্য কারণ একই সাথে তিনটা ফাইবার কেটে গিয়েছে। এরকম হওয়াটা খুবই অস্বাভাবিক, কিন্তু সেটাই হয়েছে। যার জন্যে নেটওয়ার্ক কানেকশনের বাইরে ছিল।”
বিকালে সংবাদ সম্মেলনে আসেন অপারেটরটির হেড অব কমিউনিকেশন্স খায়রুল বাশার, চিফ মার্কেটিং অফিসার সাজ্জাদ হাসিব এবং হেড অব নেটওয়ার্ক সার্ভিস আল আমিন।
এতে আল আমিন জানান, ‘ব্যাকবোন নেটওয়ার্কের’ তিনটি ফাইবার কেবল একসঙ্গে কাটা পড়ে। এর একটি ঘটে ঢাকা থেকে গাজীপুর সড়কে। সেখানে বিআরটি প্রকল্পের কাজের সময় কেবলটি কাটা পড়ে। কাছাকাছি সময় আরেকটি কেবল কাটা পড়ে অ্যালেঙ্গা থেকে জামালপুর সড়কের মধ্যে। ওই খানে ফোর লেন কাজ চলার সময় ট্রাক্টর দিয়ে কেবলের পোল তুলে ফেলা হয়েছিল। তৃতীয় কেবলটি কাটা পড়ে টাঙ্গাইল থেকে সিরাজগঞ্জ রেলপথে। এ পথে বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে কেবলটা গেছে। রেলওয়ের ভেন্ডররা কাজ করতে গিয়ে সেটি কেটে ফেলে।
একসঙ্গে তিনটি কেবল কাটার ঘটনা নাশকতা কি না জানতে চাইলে খায়রুল বাশার বলেন, “এটা স্যাবোটাজ কি না এটা আমাদের পক্ষে এখন বলাও সম্ভব না। কারণ সব জায়গায় আমাদের ক্যামেরা থাকে না। ধারণার ওপর এরকম মন্তব্য করা ঠিক না।”
কাটাপড়া ফাইবারগুলো গ্রামীণফোনের নিজস্ব জানিয়ে তিনি বলেন, “এটি আমাদের নিজস্ব ফাইবার ছিল। আমাদের যদি রেন্টে নেওয়া ফাইবার হত অন্যান্য অপারেটররাও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারত।”
তাদের কর্মীদের দক্ষতার কারণে অল্প সময়ে পরিস্থিতি আয়ত্তে এসেছে দাবি করে হেড অব কমিউনিকেশন্স বাশার বলেন, “এ ধরনের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে অন্তত আট ঘণ্টার প্রয়োজন। আমাদের টিম দুই ঘণ্টার মধ্যে তা ঠিক করেছে। যখন এরকম ফাইবার কাট হয়, তখন সেটা গ্রামীণফোন শুধু নয় যে কোনো অপারেটরের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। কারণ এর সাথে আট কোটি মানুষের জীবন জড়িত, তাদের ব্যবসা-চাকরি অনেক কিছু জড়িত।”
সব গ্রাহক ভোগান্তিতে পড়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “সেটা আমরা এখনি বলতে পারছি না। তবে অনেক গ্রাহকই এ সমস্যার বাইরে ছিলেন। কিন্তু তিনি যাকে কল করছিলেন তিনি হয়তো এ সমস্যায় ভূক্তভোগী, যার কারণে তাদের কলটি সম্পন্ন হয়নি।”
গ্রামীণফোনের প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের (টেকনোলজি সোয়াপ) ফলে এ বিভ্রাট- এমন প্রশ্নে সাজ্জাদ হাসিব বলেন, “টেকনোলজি সোয়াপের কারণে এটা হয়নি। আমরা দেখেছি সব জায়গায় এক্সপ্যানশন (নির্মাণ) কাজের জন্যই হয়েছে। ফাইবার কাট প্রতিদিনই হয়। এটা নতুন কিছু নয়। একটা কাট হলে আমরা ঠিক করি। তখন আমরা সেই ট্রাফিক এদিক-ওদিক শিফট করি। কিন্তু একসঙ্গে তিনটি কাট হওয়ার ফলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।”
অপারেটরটির কর্মকর্তারা বলছেন, এ অপটিক্যাল ফাইবার দেশেরই সম্পদ। এ বিষয়ে সকলকেই আরও সচেতন হতে হবে।