Published : 10 Nov 2022, 06:38 PM
জ্বালানি ও আর্থিক সংকটের এই সময়ে সরকার বায়োগ্যাসের জোর দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল।
তিনি বলেছেন, "বর্তমান যে বৈশ্বিক সংকট চলছে, ডিজেল সমস্যা, গ্যাসের সমস্যা, এগুলোর প্রভাব বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর পড়ে। এখানে কিছুটা সাশ্রয় করার জন্য আমরা কিছু বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট করার উদ্যোগ নিয়েছি। এরই মাঝে প্রধানমন্ত্রী এ কাজে ১১২ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন।"
ব্র্যাকের দক্ষতা প্রশিক্ষণ কার্যক্রম অ্যাডভান্সিং রিসোর্সেসের (স্টার) দশ বছর পূর্তি উপলক্ষে বৃহস্পতিবার মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে এক অনুষ্ঠানে কথা বলছিলেন প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, "৬৪ জেলায় মোট ৬৪ হাজার বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট করা হবে। প্রাথমিক কাজ শুরু হয়ে গেছে। এটা করতে পারলে আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখবে৷"
জৈব পদার্থ পচনের ফলে যে গ্যাস পাওয়া যায় তার মিশ্রিত রূপ হলো বায়োগ্যাস। জৈব সার, পৌর বর্জ্য, নর্দমার আবর্জনা, খাদ্যবর্জ্যের কাঁচামাল থেকে বায়োগ্যাস তৈরি করা যায়।
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অধীন ‘যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর’ দেশের ৬৪ জেলায় বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপনের এই কাজ তদারক করবে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে খামার করে মোট ১ লাখ ২৮ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি (প্রতি খামারে ন্যূনতম দুজন) করা হবে।
তাছাড়া এ প্রকল্পের মাধ্যমে ১ লাখ ৪৭ হাজার ৬০০ জনকে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। রিভলভিং ক্রেডিট ফান্ড পরিচালনা করা হবে ১২৫ কোটি টাকার। গতবছর এ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়।
‘আমার গ্রাম, আমার শহর’ শীর্ষক কর্মসূচির আওতায় প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নাগরিক সুবিধা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বায়োগ্যাস প্লান্টের মাধ্যমে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি করা হবে। দেশের ৪৯২টি উপজেলায় ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন হবে। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নের এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২০৯ কোটি ১৭ লাখ টাকা।
জাহিদ আহসান রাসেল অনুষ্ঠানে বলেন, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠার পর থেকে ৬৭ লাখ যুবককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১০ লাখ যুবককে উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য ঋণের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু মন্ত্রণালয়ের একার পক্ষে এত বড় জনগোষ্ঠীকে প্রশিক্ষণ ও মূলধন দিয়ে কর্মজীবনে প্রবেশের সুযোগ দেওয়া সম্ভব নয় মন্তব্য করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, "বেশ কিছু ব্যাংকের সাথে আমরা সমঝোতা চুক্তিতে গিয়েছি। আমাদের চেয়ে এসব ব্যাংক আরও বেশি সহায়তা দিতে পারছে। এসব ব্যাংক থেকে যুব জনগোষ্ঠী উদ্যোগ শুরু করার জন্য সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জামানতহীন ঋণ পাচ্ছে৷"
তরুণদের কর্মমুখী প্রশিক্ষণের আওতায় আনতে আগামী জানুয়ারি থেকে বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গেও পাঁচ বছর মেয়াদী একটি প্রকল্প শুরু হবে জানিয়ে জাহিদ আহসান রাসেল বলেন, “শিক্ষা বা প্রশিক্ষণ পায়নি এমন ২০ লাখ যুব জনগোষ্ঠীকে এই প্রজেক্টের আওতায় আনা হবে।"
বাংলাদেশের যুব জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের জন্য আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সাথেও কাজের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, "কক্সবাজারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী আসার ফলে স্থানীয় যুব জনগোষ্ঠীর ওপর চাপ পড়েছে৷ এ কারণে সেখানে আমরা একটা বিশেষ প্রজেক্ট নিয়েছি। সেখানকার যুব নারী পুরুষদের নিয়ে আইএলওর সাথে ১০৫ কোটি টাকার প্রজেক্ট নেওয়া হয়েছে।
"পদ্মা সেতুর ফলে দুই পাড়ের অনেক মানুষ কর্ম হারিয়েছে। তাদের কর্মে ফিরিয়ে আনতে দুই পাড়ের ক্ষতিগ্রস্ত ৪ হাজার ৭০০ জনকে আমরা প্রশিক্ষণ দিয়েছি। তারা বেশ ভাল করছেন। প্রশিক্ষণ নিয়ে পণ্য উৎপাদন করে তারা এখন ঢাকায় বিক্রি করছেন।"
পাশাপাশি যুব জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান নিশ্চিতে কর্মমুখী বিষয়ে বিশেষায়িত ডিপ্লোমা দিতে সাভারে 'শেখ হাসিনা যুব উন্নয়ন ইন্সটিটিউট' গড়ে তোলার কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী। যুব জনগোষ্ঠীর উৎপাদিত পণ্য বিক্রির জন্য যুব শপ, যুব কিচেন প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানান।
এর আগে ব্র্যাকের দক্ষতা প্রশিক্ষণ কার্যক্রম অ্যাডভান্সিং রিসোর্সের (স্টার) কার্যক্রম অনুষ্ঠানে তুলে ধরা হয়। সেখানে দেখানো হয়, এ কার্যক্রমের আওতায় সাত বছরে তিন লাখ ৯৩ হাজার মানুষকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। যাদের মধ্যে এক লাখ ৬৩ হাজার নারী, ৩৮৪ জন ‘ট্রান্সজেন্ডার’ এবং সাত হাজার ‘চ্যালেন্জড’ মানুষ রয়েছেন।
স্টার প্রোগ্রামের পরিচালক তাসমিয়া তাবাসসুম রহমান বলেন, “কর্মমুখী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যুব জনগোষ্ঠীকে স্বাবলম্বী করতে আমরা কাজ করছি। কাজ বাছাইয়ের ক্ষেত্রে লিঙ্গবৈষম্য দূরীকরণে এটি একটি মাইলফলক। এখানে মেয়েরা প্রথাগত পেশা থেকে বেরিয়ে মোবাইল ফোন সার্ভিসিংসহ অনেক লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং পেশায় নিজেদের নিয়োগ করেছে।”
ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ অনুষ্ঠানে বলেন, “সারাদেশে আমরা একটি অর্থনৈতিক চাঞ্চল্য দেখতে পাচ্ছি। যেখানে ঢাকার বাইরে অর্থনীতি বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই একেবারে স্থানীয় পর্যায়ে, স্থানীয় ব্যবসা অনুসারে প্রশিক্ষণগুলো দিচ্ছি। সাথে থাকছে ক্ষুদ্রঋণের ব্যবস্থা, যাতে তারা প্রশিক্ষণের পর কাজে নিয়োজিত হতে পারে।”
অন্যদের মধ্যে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর যুগ্মসচিব মু. নুরুজ্জামান শরীফ, সমন্বিত গ্রাম উন্নয়ন কর্মসূচির (সিভিডিপি) প্রকল্প পরিচালক মো. আলফাজ হোসেন, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব মো. ওমর ফারুক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।