Published : 03 Jan 2024, 11:16 PM
স্বেচ্ছায় লিঙ্গ রূপান্তরকারীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্ডারগ্র্যাজুয়েট ভর্তি পরীক্ষার ‘ট্রান্সজেন্ডার/হিজড়া’ কোটায় ভর্তির সুযোগ পাবেন না বলে জানিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল।
তিনি জানিয়েছেন, নারী ও পুরুষ ছাড়া যারা জন্মগত ও প্রকৃতিগতভাবে অন্য লিঙ্গের, তারাই এ কোটায় ভর্তির সুযোগ পাবেন।
ভর্তি পরীক্ষায় ‘ট্রান্সজেন্ডার/হিজড়া’ কোটা থেকে ‘ট্রান্সজেন্ডার’ শব্দটি বাতিলের দাবিতে একদল শিক্ষার্থী আন্দোলন করছেন।
বুধবার রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে শিক্ষার্থীদের একটি দল অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, জন্মগতভাবে বা প্রাকৃতিকভাবে লিঙ্গবৈচিত্রের শিক্ষার্থীদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করার লক্ষ্যেই আমরা ভর্তি পরীক্ষায় কোটা ব্যবস্থা চালু করেছি।
“স্বেচ্ছায় সার্জারি কিংবা কৃত্রিমভাবে যারা লিঙ্গ পরিবর্তন করেছে, এই ধরনের কাউকে এই কোটায় এড্রেস করার সুযোগ নেই। ট্রান্সজেন্ডারের সংজ্ঞায় তাদেরকে ঢুকানোরও কোনো সুযোগ নাই। ট্রান্সজেন্ডার শব্দটি আমাদের অঞ্চলে হিজড়া শব্দের প্রতিশব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।”
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ৪৬তম বার্ষিক প্রতিবেদনের মাধ্যমে সরকারের কাছে হিজড়াদের উচ্চশিক্ষায় বিশেষ ব্যবস্থার সুপারিশ করে।
এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামে ভর্তিতে উচ্চশিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করতে হিজড়াদের জন্য ‘ট্রান্সজেন্ডার/হিজড়া’নামে একটি কোটা ব্যবস্থা চালু করে।
সম্প্রতি ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী ট্রান্সজেন্ডার শব্দটি নিয়ে আপত্তি তোলেন। কোটা থেকে ‘ট্রান্সজেন্ডার’ শব্দটি বাদ দেওয়ার দাবিতে মানববন্ধন ও উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপিও দিয়েছেন তারা।
বুধবার অবস্থান কর্মসূচিতে ‘ট্রান্সজেন্ডার’ শব্দটি বাদ না দিলে এ কর্মসূচির পাশাপাশি অনশন কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দেন শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, ট্রান্সজেন্ডার আর হিজড়া এক নয়। যারা স্বেচ্ছায় সার্জারির মাধ্যমে রূপান্তরিত হয়ে লিঙ্গ পরিবর্তন করে অথবা পরিপূর্ণ নারী বা পুরুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও বৈশিষ্ট্য থাকার পরও যারা নিজেকে বিপরীত লিঙ্গের পরিচয় দেন, তারাও নিজেদের ট্রান্সজেন্ডার বলে এই কোটার মাধ্যমে সুবিধা ভোগ করবেন। এতে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হবে। তাই এই কোটা থেকে ‘ট্রান্সজেন্ডার’ শব্দটি বাদ দিতে হবে।
অবস্থান কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী মুনতাসির আহমেদ মুয়াজ বলেন, হিজড়া কোটা নিয়ে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। আমাদের আপত্তি ট্রান্সজেন্ডার শব্দটি নিয়ে। আমাদের দাবি হল ভর্তি বিজ্ঞপ্তি থেকে ট্রান্সজেন্ডার শব্দটি বিলুপ্ত করে নতুন করে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দিতে হবে।
এ বিষয়ে উপাচার্য মাকসুদ কামাল বলেন, ওদের কথায় ট্রান্সজেন্ডার শব্দটি বাদ দেওয়া যাবে না। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞরা আছেন, তাদের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে এ শব্দটা ব্যবহার করা হয়েছে।
“শিক্ষার্থীরা আমাকে চিঠি দেওয়ার পর মানবাধিকার কমিশন থেকে আমাদেরকে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। তারা বলেছেন, ট্রান্সজেন্ডারের ভুল ব্যাখ্যার মাধ্যমে এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যেন কোনো ধরনের ভুল সিদ্ধান্ত না নেয়। বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশে অধিংকাংশ ক্ষেত্রে ঐতিহাসিকভাবে ট্রান্সজেন্ডার শব্দটি হিজড়া শব্দের প্রতিশব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।”
গত ২৭ ডিসেম্বর জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সভাকক্ষে আশার আলো সোসাইটি ও দুর্জয় নারী সংঘের আয়োজনে ‘ট্রান্সজেন্ডার ভিজিবিলিটি, রিপ্রেজেন্টেশন অ্যান্ড এমপাওয়ারমেন্ট’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
সেখানে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু শিক্ষার্থী ট্রান্সজেন্ডার কোটা বাতিলের দাবি করেছে। কমিশন মনে করে এ ধরনের কর্মকাণ্ড অমূলক এবং এক্ষেত্রে জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা প্রতীয়মান।
“হিজড়া জনগোষ্ঠী পিছিয়ে নেই, বরং তাদের পিছিয়ে রাখা হয়েছে। আমাদের সংবিধানে সবার সমান অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। কোনো জনগোষ্ঠীকে অধিকার থেকে বঞ্চিত করার কোনো সুযোগ নেই। হিজড়া জনগোষ্ঠীর প্রতি প্রচলিত বৈষম্য মর্মপিড়াদায়ক।”