Published : 30 Jul 2024, 11:45 PM
কোটা সংস্কারের আন্দোলনের মধ্যে সহিংসতায় মামলা ও গ্রেপ্তারের ঘটনায় ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছে আন্দোলনকারীদের একাংশ।
বুধবার সারাদেশে নতুন এ কর্মসূচি পালনের কথা ঘোষণা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হোয়াটসঅ্যাপে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন তিনি, যাতে ৯ দফা দাবি তুলে ধরা হয়।
মূল দাবি মেনে নেওয়ার পরও কেন আন্দোলন, এ বিষয়ে জানতে পরে আব্দুল হান্নান মাসুদকে ফোন করা হলে তার নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “সারা দেশে ছাত্র-জনতার ওপর চালানো গণহত্যা, গণগ্রেপ্তার, হামলা, মামলা, গুমের প্রতিবাদে এবং জাতিসংঘের তদন্তপূর্বক বিচারের দাবিতে ও ছাত্রসমাজের নয় দফা দাবি আদায়ে সকল আদালত, ক্যাম্পাস এবং রাজপথে আগামীকাল মার্চ ফর জাস্টিস কর্মসূচি পালন করা হবে।”
এর আগে কোটা সংস্কারের মূল দাবি পূরণ হওয়ায় গত রোববার ডিবি হেফাজতে থাকা অবস্থায় ভিডিও বার্তায় সব কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামসহ ছয় সমন্বয়ক।
এ ঘোষণা প্রত্যাখান করে বাইরে থাকা সমন্বয়ক ও সহ-সমন্বয়করা পরে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
নাহিদসহ বৈষম্যবিরোধী ছয় সমন্বয়ক বর্তমানে ডিবি হেফাজতে রয়েছেন। ‘নিরাপত্তাজনিত কারণে’ গোয়েন্দারা তাদের হেফাজতে রেখেছেন বলে সরকারের তরফ থেকে এর আগে বলা হয়।
তাদের অনুপস্থিতিতেই সোমবার বিক্ষোভ সমাবেশ এবং মঙ্গলবার চোখে-মুখে লাল কাপড় বেঁধে অনলাইনে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেন আন্দোলনকারীরা।
হাই কোর্টের রায়ের পর জুলাইয়ের শুরু থেকে কোটা বাতিলের আন্দোলন শুরু হলেও পরে তা কোটা সংস্কারের এক দফা দাবিতে রূপ নেয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ছাড়িয়ে তা ছড়িয়ে পড়ে আরও অনেক স্থানে। পরে শিক্ষার্থী ও আন্দোলনকারীদের বিভিন্ন কর্মসূচিকে ঘিরে একপর্যায়ে তা সহিংসতায় গড়ায়।
আন্দোলন-সহিংসতার মধ্যেই গত ২১ জুলাই কোটা সংস্কার করে মেধাভিত্তিক ৯৩%, মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনার সন্তানদের জন্য ৫%, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য ১% ও শারীরিক প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ১% শতাংশ নির্ধারণ করা হয়।
আন্দোলনকে ঘিরে সংঘাতের মধ্যে এক সপ্তাহে দুই শতাধিক মানুষের মৃত্যুর খবর আসে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে। বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১৯ জুলাই রাত ১২টা থেকে দেশজুড়ে কারফিউ শুরু হয়। এখন দিনের বেশির ভাগ সময় কারফিউ শিথিল থাকছে, সরকারি-বেসরকারি অফিস শুরু হয়েছে।
মঙ্গলবার নতুন কর্মসূচি তুলে ধরে আন্দোলনকারীদের ‘অন্যতম সমন্বয়ক’ আব্দুল হান্নান মাসুদ বিজ্ঞপ্তিতে অভিযোগ করেন, “আন্দোলন দমনের জন্য শাসকদের নির্দেশে সাধারণ ছাত্র ও আন্দোলনের সমন্বয়ক এবং বিরোধী রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে যেভাবে গণগ্রেপ্তার চালানো হচ্ছে, সেটা রীতিমত দেশের সংবিধানবিরোধী ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।
“গত ১২ দিন ১০ হাজারেরও অধিক নিরপরাধ মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রাতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে কোনো শিক্ষার্থী আছে কিনা। থাকলে সঙ্গে সঙ্গে মোবাইল চেক ও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।”
সংবাদমাধ্যমকে উদ্ধৃত করে বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়, “বিনা অপরাধে গ্রেপ্তার করে মোটা অংকের টাকা দিলেই ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। বিরল এক স্বাধীন দেশের নাগরিক। পৃথিবীতে এমন দেশ খুঁজে পাওয়া সত্যিই দুষ্কর।
“গত কয়েকদিন ঢাকা শহরেই ২ লাখের অধিক মানুষের নামে-বেনামে মামলা দেওয়া হয়েছে (ডেইলি স্টার)। শিক্ষার্থী পরিচয় দেখে দেখে হয়রানি, বিনা অপরাধে গ্রেপ্তার, গ্রেপ্তার বাণিজ্য ইত্যাদি এখন আমার স্বাধীন দেশের নৈমিত্তিক ঘটনা। নিজ দেশেই যেন পরবাসী আমজনতা।”
বিজ্ঞপ্তিতে অভিযোগ করা হয়, “আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এমন বিপর্যয়েও সরকার ব্যস্ত বিরোধীদলের ওপর দোষ চাপানোর প্রোপাগান্ডায়। চার বিভাগীয় তদন্তের নামে প্রহসন ও আন্দোলনে সম্পৃক্ত শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ট্যাগ দিয়ে নির্যাতন, গুম, রিমান্ড যেন প্রতিদিনের ঘটনা।”