Published : 06 Apr 2025, 06:43 PM
দলের বিপদে একাই লড়লেন শামীম হোসেন। চমৎকার ব্যাটিংয়ে জাগালেন তিন অঙ্কের সম্ভাবনা। তবে পূর্ণতা দিতে পারলেন না বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। বাকিদের ব্যর্থতায় প্রাইম ব্যাংকের সংগ্রহও বেশি বড় হলো না। সেই রান তাড়ায় মোহামেডান স্পোর্টং ক্লাবের শুরুটাও হলো নড়বড়ে। তবে মেহেদী হাসান মিরাজ ও তাওহিদ হৃদয়ের ব্যাটে শেষ পর্যন্ত বড় জয়ই পেল তারা।
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে রোববার প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবকে ৫ উইকেটে হারায় মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা শামীমের ৮৯ রানের ঝড়ো ইনিংসের পরও ১৭৪ রানের বেশি করতে পারেনি প্রাইম ব্যাংক। ১২০ বল বাকি থাকতেই জিতে যায় মোহামেডান।
আরেক ম্যাচে শেষ ওভারের নাটকীয়তায় ধানমন্ডি স্পোর্টস ক্লাবের বিপক্ষে ২ উইকেটে জেতে নবাগত গুলশান ক্রিকেট ক্লাব। ২৫৯ রানের লক্ষ্যে ২ বল বাকি থাকতে ছুঁয়ে ফেলে তারা।
শামীমের ঝড় থামিয়ে মোহামেডানের ‘হ্যাটট্রিক’
মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টানা তৃতীয় জয় পায় মোহামেডান। ৯ ম্যাচে ১৪ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে তারা। সমান ম্যাচে পাঁচ জয়ে পাঁচ নম্বরে প্রাইম ব্যাংক।
বল হাতে ১ উইকেটের পর ব্যাটিংয়ে ৬৭ রানের ইনিংস খেলেন মিরাজ। এছাড়া হৃদয়ের ব্যাট থেকে ৫৫ বলে ৫৭ রান।
রান তাড়ায় মোহামেডানের শুরুটা তেমন ভালো ছিল না। চল্লিশের আগে ড্রেসিং রুমে ফিরে যান তিন ব্যাটসম্যান। পাঁচ নম্বরে নেমে মাহমুদউল্লাহও বেশিক্ষণ ক্রিজে থাকতে পারেননি। ২২ বলে ৭ রান করে ফেরেন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম ছিলেন না এই ম্যাচে।
পঞ্চম উইকেটে জুটি বেধে দলকে পথে ফেরান হৃদয় ও মিরাজ। দারুণ ব্যাটিংয়ে দুজন মিলে যোগ করেন ৯১ রান। ৫২ বলে পঞ্চাশ ছুঁয়ে আর টিকতে পারেননি হৃদয়। হাসান মাহমুদের বলে বোল্ড হন তিনি।
পরে আরিফুল ইসলামের সঙ্গে মিলে ম্যাচ জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন মিরাজ। ৫৫ বলের ইনিংসে ৭ চারের সঙ্গে ২টি ছক্কা মারেন অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার।
ম্যাচের প্রথমভাগে শুরুটা দুর্দান্ত করেন মোহাম্মদ নাঈম শেখ। আবু হায়দারের প্রথম বলে চার মারেন তিনি। পরের বল ওড়ান ছক্কায়। ওই ওভারে আরও দুটি বাউন্ডারিসহ আসে ১৮ রান। তবে নাঈমকে বেশি দূর যেতে দেননি ইবাদত হোসেন।
জাকির হাসান, ইরফান শুক্কুরও হতাশ করেন। মাত্র ৬৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলে প্রাইম ব্যাংক।
ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে রিশাদ হোসেনকে নিয়ে পাল্টা আক্রমণের চেষ্টা করেন শামীম। আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে মাত্র ৩২ বলে ফিফটি করেন দারুণ ছন্দে থাকা ২৪ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান। চলতি লিগে সাত ইনিংসে এটি তার চতুর্থ ফিফটি।
অন্য প্রান্তে রিশাদ বেশিক্ষণ সঙ্গ দিতে পারেননি। তাতে দমে যাননি শামীম। পঞ্চাশ ছুঁয়ে দলের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে এগোতে থাকেন তিনি। মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিনের স্লোয়ার বাউন্সারে থার্ড ম্যানে ধরা পড়ে সমাপ্তি ঘটে তার দারুণ ইনিংসের। ১০ চারের সঙ্গে ইনিংসে ছক্কা ছিল ৪টি।
প্রাইম ব্যাংকের লেজ মুড়িয়ে ৫ রানে ৪ উইকেট নেন তাইজুল ইসলাম। ইবাদতের শিকার ২৭ রানে ৩ উইকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব: ৩২.২ ওভারে ১৭৪ (নাঈম ১৮, মামুন ৭, শাহাদাত ১, জাকির ০, সাজ্জাদুল ১৯, ইরফান ১৯, শামীম ৮৯, রিশাদ ৩, খালেদ ৩, আরাফাত ২১, হাসান ৯*; আবু হায়দার ৭-০-৪০-১, ইবাদত ৭-১-২৭-৩, মিরাজ ৭-১-৪৮-১, সাইফ ৬-০-৩০-১, তাইজুল ৩.২-০-৫-৪, আরাফাত ২-০-২৩-০)
মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব: ৩০ ওভারে ১৭৭/৫ (রনি ০, আরাফাত ১৯, মাহিদুল ১০, হৃদয় ৫৭, মাহমুদউল্লাহ ৭, মিরাজ ৬৭*, আরিফুল ১১*; হাসান ৮-১-৩৩-৩, খালেদ ৫-১-৩৫-১, শামীম ২-০-১৪-১, আরাফাত ৪-০-১৩-০, রিশাদ ৭-০-৪৩-০, মামুন ৩-০-২৯-০, সাজ্জাদুল ১-০-৮-০)
ফল: মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব ৫ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: মেহেদী হাসান মিরাজ
নাটকীয় ম্যাচে জয়ে ফিরল গুলশান
শেষ ওভারে জয়ের জন্য গুলশানের প্রয়োজন ছিল ৬ রান। কামরুল ইসলাম রাব্বির প্রথম বলেই বড় শটের খোঁজে সীমানায় ধরা পড়ে যান ইলিয়াস সানি। পরের দুই বলে আসে দুটি সিঙ্গল। ম্যাচ জমে ওঠে বেশ। তবে তিন বলে চার রানের সমীকরণে ফাইন লেগ দিয়ে চার মেরে দেন নিহাদউজ্জামান। দারুণ জয়ে উচ্ছ্বাসে ভাসে গুলশান।
দুই ম্যাচ পর জয়ের দেখা পেল গুলশান। ৯ ম্যাচে ৫ জয় ও এক পরিত্যক্ত ম্যাচসহ ১১ পয়েন্ট নিয়ে চার নম্বরে উঠল তারা। সমান ম্যাচে ৬ পয়েন্ট পাওয়া ধানমন্ডির অবস্থান অষ্টম।
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ইতিবাচক শুরু করেন ধানমন্ডির ওপেনার হাবিবুর রহমান। বেশি দূর অবশ্য যেতে পারেননি। ৬ চারে ৩২ বলে ৩৬ রান করে ফেরেন তিনি।
দ্বিতীয় উইকেটে ৮২ রানের জুটি গড়েন ফজলে মাহমুদ ও ইয়াসির আলি চৌধুরি। ভালো শুরু করেও ইনিংস বড় করতে পারেননি ইয়াসির। নুরুল হাসান সোহানও বিশ ছুঁয়ে আউট হয়ে যান।
একপ্রান্ত ধরে রেখে ৯১ বলে ৬৫ রানের ইনিংস খেলেন ফজলে মাহমুদ। শেষ দিকে কামরুল ২৯ রান করলে আড়াইশ পেরোয় ধানমন্ডি।
রান তাড়ায় হতাশ করেন জাওয়াদ আবরার ও লিটন কুমার দাস। ৩ চারে ২৯ বলে ২৫ রান করেন লিটন। জাওয়াদের ব্যাট থেকে আসে ২২ রান। লম্বা সময় ক্রিজে থেকে ৩৯ রান করতে ৮৭ বল খেলেন আজিজুল হাকিম।
নিয়মিত উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় গুলশান। এমনিতে টপ-অর্ডার ব্যাটসম্যান হলেও এ দিন সাত নম্বরে নামেন খালিদ হাসান। ষষ্ঠ উইকেটে নাঈম ইসলামের সঙ্গে ৬৮ রানের জুটি গড়ে দলকে জয়ের পথে ফেরান বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। ৩৩ বলে ৪২ রান করেন তিনি।
পরে ইলিয়াসের সঙ্গে ৪৯ রানের জুটি গড়েন নাঈম ইসলাম। জয়ের খুব কাছে গিয়ে পরপর আউট হন নাঈম ও ইলিয়াস। ৬ চার ও ১ ছক্কায় ৬৭ বলে ৬৮ রানের ইনিংস খেলেন নাঈম। ইলিয়াসের ব্যাট থেকে আসে ২৩ রান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ধানমন্ডি স্পোর্টস ক্লাব: ৫০ ওভারে ২৫৮/৯ (হাবিবুর ৩২, সানজামুল ১৭, ফজলে মাহমুদ ৬৫, ইয়াসির ২৮, সোহান ২৪, মইন ২৩, জিয়াউর ১৬, এনামুল ০, কামরুল ২৯, মুরাদ ৬*, মারুফ ০*; মেহেদি ৯-০-৫৯-৩, নিহাদ ১০-১-৩৮-১, পায়েল ১০-১-৫৯-৩, ইলিয়াস ১০-০-৫৫-২, আজিজুল ৭-০-২৩-০, মইনুল ৪-০-১৭-০)
গুলশান ক্রিকেট ক্লাব: ৪৯.৪ ওভারে ২৫৯/৮ (জাওয়াদ ২২, আজিজুল ৩৯, লিটন ২৫, আলিফ ২৮, মেহেদি ২, নাঈম ৬৮, খালিদ ৪২, ইলিয়াস ২৩, মইনুল ১*, নিহাদ ৫*; মারুফ ৭-০-৪৪-১, এনামুল ১০-১-৪৪-২, কামরুল ৫.৪-০-৩৫-২, মুরাদ ১০-০-৫২-০, মইন ১০-০-৪২-২, সানজামুল ৭-০-৪১-১)
ফল: গুলশান ক্রিকেট ক্লাব ২ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: নাঈম ইসলাম