Published : 06 Jul 2025, 12:26 PM
১৪০ ছাড়ানো বিধ্বংসী ইনিংস। রেকর্ডের পর রেকর্ড। কিশোর এক ক্রিকেটারের জন্য এসব তো স্বপ্নের মতো ব্যাপার। কিন্তু বৈভাব সুরিয়াভানশি যেন অন্য ধাতে গড়া। রেকর্ডময় ইনিংস শেষেও তার আক্ষেপ, কেন আরও বড় হলো না ইনিংস! পরের ম্যাচেই তিনি পুষিয়ে দিতে চান ডাবল সেঞ্চুরি করে।
ভারত অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে ইংল্যান্ড অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বিপক্ষে শনিবার ৭৮ বলে ১৪৩ রানের ইনিংস খেলেন সুরিয়াভানশি।
ইনিংসটির পথে সেঞ্চুরি স্পর্শ করেন তিনি ৫২ বলে। যুব ওয়ানডের ইতিহাসে যা দ্রুততম শতক।
১৪ বছর ১০০ দিন বয়সে ইনিংসটি খেলেন তিনি। যুব ওয়ানডে ইতিহাসে এত কম বয়সে শতরান নেই আর কারও। পেছনে পড়ে যায় বাংলাদেশের নাজমুল হোসেন শান্তর ১৪ বছর ২৪১ দিন বয়সে করা সেঞ্চুরি।
ইনিংসটিতে ১৩ চারের সঙ্গে ১০টি ছক্কা মারেন সুরিয়াভানশি। যুব ওয়ানডেতে যা ভারতের হয়ে রেকর্ড। এখানে পেরিয়ে যান তিনি নিজেকেই। আগের ম্যাচেই ৩১ বলে ৮৬ রানের ইনিংসের পথে ছক্কা মেরেছিলেন ৯টি।
ম্যাচের পর সুরিয়াভানশি বললেন, রেকর্ডের কথা তার অজানা ছিল ব্যাটিংয়ের সময়।
“শতক করার পর আমার জানা ছিল না যে রেকর্ড গড়েছি। আমাদের ম্যানেজার আঙ্কিত স্যার পরে আমাকে বলেছেন যে আজকে আমি রেকর্ড গড়েছি।”
রেকর্ডগড়া কীর্তির পরও আকাশে উড়ছেন না সুরিয়াভানশি। তার প্রতিক্রিয়ায় নেই উচ্ছ্বাসের জোয়ার।
“উদযাপনের তেমন কিছু নেই। প্রতি ম্যাচ যেরকম স্বাভাবিক থাকে, সেরকমই। আজকে স্রেফ একটু খুশি যে দলের জন্য ভালো কিছু করতে পেরেছি। বাড়িতে কথা বলব, বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলব।”
উচ্ছ্বাসের চেয়ে বরং নিজের ওপর অসন্তুষ্টিই যেন বেশি তার। ১৪৩ রান করলেও যখন তিনি আউট হয়েছেন, ইনিংসের তখন স্রেফ ২৮তম ওভার চলছে। বড় ইনিংসের পরও বাঁহাতি ব্যাটসম্যানকে পোড়াচ্ছে এত দ্রুত আউট হওয়া।
“আমার মাথায় ছিল যে, আরও লম্বা করতে পারতাম। কারণ, সময় ছিল হাতে। তখনও ২০ ওভারের বেশি বাকি ছিল। কাজেই আরও লম্বা করতে পারতাম ইনিংস।”
“একটি শট ছিল, যেটায় নিজের শতভাগ দিতে পারিনি। এজন্য আউট হয়ে গিয়েছি। নইলে আরও লম্বা ইনিংসের চেষ্টা করতে পারতাম।”
পরের ম্যাচে সেই আক্ষেপ ঘুচিয়ে দিতে চান সুরিয়াভানশি। যুব ওয়ানডেতে ভারতের রেকর্ড ২০০২ সালে করা আম্বাতি রায়ডুর ১৭৭। যুব ওয়ানডেতে এখনও পর্যন্ত ডাবল সেঞ্চুরির নজির নেই কোনো। শ্রীলঙ্কার হাশিথা বোয়াগোডার ১৯১ রানই রেকর্ড।
সুরিয়াভানশির ভাবনায় অবশ্য রেকর্ড নেই। তিনি ডাবল সেঞ্চুরি করতে চান দলকে আরও ভালো কিছু উপহার দেওয়ার তাড়নায়।
“পরের ম্যাচে চেষ্টা করব যেন দুইশ করতে পারি। পরেরবার এটাই চেষ্টা থাকবে যেন পুরো ৫০ ওভার খেলতে পারি। আমি যত রান করব, দলের ততই লাভ হবে। আমার চেষ্টা থাকবে পুরো সময় মাঠে থাকবে। সেদিকেই থাকবে মনোযোগ।”
প্রেরণা পাচ্ছেন তিনি ভারতের টেস্ট অধিনায়ককে দেখে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষেই এজবাস্টন টেস্টের প্রথম ইনিংসে ২৬৯ রানের ইনিংস খেলেছেন শুবমান গিল। পরে তো দ্বিতীয় ইনিংসে আরও ১৬১ রান করে রেকর্ড বইয়ে সুনামি বইয়ে দিয়েছেন তিনি।
গিলের মতোই লম্বা ইনিংস খেলতে চান সুরিয়াভানশি।
“তার (গিল) কাছ থেকে অনেক প্রেরণা পেয়েছি। কারণ খেলাটি দেখেছি। একশ ও দুইশ করার পরও উনি খেলা ছাড়েননি, দলকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন।”
গত সেপ্টেম্বরে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে যুব টেস্টে ৫৮ বলে সেঞ্চুরি করেছিলেন সুরিয়াভানশি, যুব টেস্টে যা দ্বিতীয় দ্রুততম সেঞ্চুরি। পরে তিনি ঝড় তোলেন আইপিএলের নিলামে। ৩০ লাখ রুপির ভিত্তিমূল্যের কিশোরকে ১ কোটি ১০ লাখ রুপিতে দলে নেয় রাজস্থান রয়্যালস।
পরে তো মাঠে নেমে তাক লাগিয়ে দেন সুরিয়াভানশি। অভিষেকে প্রথম বলে ছক্কা দিয়ে শুরু। পরে আরেক ম্যাচে সেঞ্চুরি করেন ৩৫ বলে। ম্যাচের পর ম্যাচ চোখধাঁধানো ব্যাটিংয়ে সাড়া ফেলে দেন ক্রিকেট বিশ্বে। হয়ে ওঠেন ভারতীয় ক্রিকেটের নতুন সেননেশন।
সেই ধারা চলছে ইংল্যান্ডে এই যুব ওয়ানডে সিরিজেও। চার ইনিংসে ৮০.৫০ গড়ে ৩২২ রান করেছেন তিনি প্রায় দুইশ স্ট্রাইক রেটে।
উস্টারে শনিবারের ম্যাচে সুরিয়াভানশির পাশাপাশি বিহান মালহোত্রার ১২১ বলে ১২৯ রানের ইনিংসে ৫০ ওভারে ৩৬৩ রান তোলে ভারত। রান তাড়ায় ইংল্যান্ড করতে পারে ৩০৮ রান। ইংলিশ গ্রেট অ্যান্ড্রু ফ্লিন্টফের ছেলে রকি ফ্লিন্টফের ব্যাট থেকে আসে ৯১ বলে ১০৭। প্রতিভাবান এই ক্রিকেটারকে নিয়েও ইংল্যান্ডে চলছে বেশ আলোচনা। গত জুলাইয়ে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে যুব টেস্টে শতরান করেছিলেন তিনি ১৬ বছর বয়সে।
ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচ উস্টারেই সোমবার। এরপর দুই ম্যাচের যুব টেস্ট সিরিজ খেলবে এই দুই দল।