Published : 18 Mar 2025, 01:31 PM
অফ স্টাম্পের বাইরের ডেলিভারি লং অন দিয়ে উড়িয়ে মারলেন আব্দুল গাফফার সাকলাইন। ফলো থ্রু-তে বলের দিকে তাকিয়ে রইলেন তাসকিন আহমেদ। বল সীমানার ওপারে যেতেই সাকলাইনকে জড়িয়ে ধরলেন নন-স্ট্রাইকে থাকা এনামুল হক। তাসকিনের চোখেমুখে তখন রাজ্যের অন্ধকার। রান খরচের অনাকাঙ্ক্ষিত রেকর্ডে যে উঠে গেল অভিজ্ঞ পেসারের নাম!
সেটি ছিল তাসকিনের শেষ ওভারের শেষ বল। ওই ওভারে আগেই আরও একটি করে চার-ছক্কা হজম করে রান দেওয়ার সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ২৯ বছর বয়সী পেসার। সব মিলিয়ে ৩ উইকেটের জন্য ১০ ওভারে তার খরচ ১০৭ রান।
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ তো বটেই, দেশের লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটেই এটি সবচেয়ে খরুচে বোলিংয়ের রেকর্ড।
তাসকিনের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বাজে বোলিংয়ের দিন দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে ১৪৯ রানের ইনিংস খেলেন এনামুল হক। লিস্ট ‘এ’ ক্যারিয়ারের ২১তম সেঞ্চুরির ইনিংসে ১৪৩ বলে ১২ চারের সঙ্গে ৪টি ছক্কা মারেন অভিজ্ঞ ওপেনার।
বিকেএসপিতে মঙ্গলবার গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের লড়াইয়ের ঘটনা এসব। দেদার রান বিলিয়ে বিব্রতকর রেকর্ডে নাম লেখান মোহামেডানের তাসকিন। একইসঙ্গে অনাকাঙ্ক্ষিত এই রেকর্ড থেকে মুক্তি পান ইকবাল হোসেন ইমন ও শাহাদাত হোসেন।
গত বছরের লিগে স্বীকৃত ক্রিকেটে নিজের অভিষেক ম্যাচে ৯ ওভারে ১০৪ রান দিয়েছিলেন গাজী টায়ার্স ক্রিকেট একাডেমির হয়ে খেলতে নামা ইকবাল। ২০১১ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা ‘এ’ দলের বিপক্ষে শাহাদাত ১০ ওভারে খরচ করেছিলেন ১০৪ রান।
লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে বাংলাদেশের আর কোনো বোলার একশর বেশি রান খরচ করেননি। চলতি লিগে শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাবের বিপক্ষে ৯ ওভারে ৯৯ রান দিয়েছিলেন পারটেক্স স্পোর্টিং ক্লাবের মুক্তার আলি।
সব মিলিয়ে এই সংস্করণে রান খরচের রেকর্ডটি বাস ডে লেডের। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২০২৩ বিশ্বকাপে ১০ ওভারে ১১৫ রান দিয়েছিলেন নেদারল্যান্ডসের পেস অলরাউন্ডার।
গাজীর গ্রুপে এই ম্যাচে শুরু থেকেই খরুচে ছিলেন তাসকিন। দ্বিতীয় ওভারে তার বলে ৩টি চার মারেন গাজী গ্রুপের ওপেনার সাদিকুর রহমান। পরের ওভারে ছক্কা মারেন এনামুল। ওই ওভার থেকে আসে ১৬ রান।
সপ্তদশ ওভারে মেহেদী হাসান মিরাজের বল ছক্কায় উড়িয়ে ৫৪ বলে ফিফটি করেন এনামুল। এরপর অনেকটাই খোলসে ঢুকে পড়েন তিনি। পরের ৪৬ রান করতে আরও ৬৮ বল লেগে যায় ৩২ বছর বয়সী ব্যাটসম্যানের।
একপর্যায়ে ১০০ বলে ৯২ রানে ছিলেন এনামুল। সেখান থেকে সেঞ্চুরি ছুঁতে আরও ২২ বল খেলেন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান।
তিন অঙ্ক ছোঁয়ার পর অবশ্য রানের গতি বাড়ান তিনি। পরের ২১ বলে ৬ চার ও ২ ছক্কায় ৪৯ রান করেন গাজী গ্রুপ অধিনায়ক।
প্রথম ৮ ওভারে ৬২ রান খরচ করা তাসকিনকে ৪৬তম ওভারে আবার আক্রমণে আনেন তামিম ইকবাল। তাকে দুই চারের পর ছক্কা মারেন তোফায়েল আহমেদ। পরে স্ট্রাইক পেয়ে শেষ বলে চার-ছক্কা মারেন এনামুল।
তাসকিনের শেষ ওভারেও একটি করে চার-ছক্কা মারেন তোফায়েল। চতুর্থ বলে তাকে আউট করতে পারেন তাসকিন। কিন্তু শেষ দুই বলে ৮ রান নিয়ে রেকর্ডে তার নাম তুলে দেন সাকলাইন। শেষ দুই ওভারে তাসকিনের খরচ ৪৫ রান।
শেষ দিকে তাণ্ডব চালিয়ে ৫ চার ও ৪ ছক্কায় ২৯ বলে ৬৩ রানের ইনিংস খেলেন তোফায়েল। গত জাতীয় ক্রিকেট লিগে সিলেট বিভাগের শিরোপা জয়ে অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে নজর কেড়েছিলেন তিনি।
চতুর্থ উইকেটে এনামুল ও তোফায়েল মিলে গড়ে তোলেন মাত্র ৪৩ বলে ৯৮ রানের জুটি।
৫০ ওভারের ক্রিকেটে সাধারণত সব দলের চেষ্টা থাকে প্রথম ৩০ ওভারের সমান রান বাকি ২০ ওভারেও নেওয়া। এর চেয়েও বেশি নিয়েছে গাজী গ্রুপ। প্রথম ৩০ ওভারে ১৫৬ করা দলটি পরের ২০ ওভারে করে ১৮০ রান।
এনামুলের দেড়শ ছুঁইছুঁই ইনিংসের সঙ্গে তোফায়েলের ঝড়ো ফিফটি ও সাদিকুরের ৬০ রানের সৌজন্যে ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ৩৩৬ রান করে গাজী গ্রুপ।
খরুচে বোলিংয়ে ১০ ওভারে ৭৭ রান দেন সাইফ উদ্দিন। মিরাজের ১০ ওভারে খরচ ৬৬ রান।