Published : 07 Mar 2025, 07:46 PM
স্লোয়ার ইয়র্কার ডেলিভারি রক্ষণাত্মক খেলার চেষ্টায় ব্যর্থ আফিফ হোসেন। ব্যাটে লেগে আলতো করে বল স্পর্শ করল স্টাম্পে। পেছনে তাকিয়ে বেলস পড়তে দেখে হতাশায় ব্যাটে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেট দ্বিতীয় সেঞ্চুরি পেলেন না তিনি স্রেফ দুই রানের জন্য।
আফিফের অনুভূতিটুকু বোঝার কথা সাইফ হাসানের। তিনিও যে পুড়েছেন এ দিন একই যন্ত্রণায়! তার শতরান হয়নি পাঁচ রানের জন্য। তবে ম্যাচের প্রথমভাগে ভুল করেননি তাদের প্রতিপক্ষ ইয়াসির আলি চৌধুরি। সাত ছক্কায় তার ক্যারিয়ার সেরা ১৪৩ রানের সৌজন্যে যে উচ্চতায় পৌঁছে যায় ধানমন্ডি স্পোর্টস ক্লাবের স্কোর, সেটির নাগাল পায়নি লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জকে।
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে শুক্রবারের অন্য ম্যাচে তিন অঙ্কের সম্ভাবনা জাগিয়েও পূর্ণতা দিতে পারেননি অমিত হাসান ও সাদিকুর রহমান। অগ্রণী ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবকে হারিয়ে লিগে প্রথম জয় পায় গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স।
ধানমন্ডির দুইয়ে দুই
বিকেএসপির ৩ নম্বর মাঠে রূপগঞ্জকে ২৪ রানে হারায় ধানমন্ডি। ৩৩৩ রানের লক্ষ্যে ৩০৮ রানের বেশি করতে পারেনি রূপগঞ্জ।
সকার পরিবর্তনের পর শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব থেকে নাম পরিবর্তন করে ধানমন্ডি স্পোর্টস ক্লাবে রূপ নেওয়া দলটি জিতল লিগের প্রথম দুই ম্যাচেই। এখন লিগের একমাত্র অপরাজিত দলও তারাই।
ধানমন্ডির বড় পুঁজির কারিগর ইয়াসির। লিস্ট 'এ' ক্রিকেটে প্রায় ৬ বছর পর সেঞ্চুরি করে ১৪৩ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। ক্যারিয়ারের তৃতীয় শতরানের ইনিংসটি ৭টি করে চার-ছক্কায় সাজান তিনি।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে টপ-অর্ডারের ব্যর্থতায় চাপে পড়ে যায় ধানমন্ডি। চার নম্বরে নেমে দায়িত্ব নেন ইয়াসির। পঞ্চম উইকেট জুটিতে তাকে দারুণ সঙ্গ দেন মইন খান। দুজন মিলে ১১২ বলে যোগ করেন ১৪৬ রান। ৫ চার ও ২ ছক্কায় ৬৩ বলে ৬২ রান করেন মইন।
শেষ দিকে তাণ্ডব চালান জিয়াউর রহমান। ২ চারের সঙ্গে ৩ ছক্কায় মাত্র ১৮ বলে ৪০ রানের ইনিংস খেলেন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। ইয়াসিরের সঙ্গে তার জুটিতে আসে ৩২ বলে ৬৯ রান।
রূপগঞ্জের পক্ষে বল হাতে ৩ উইকেট নেন তানভির ইসলাম।
রান তাড়ায় মইনের স্পিনে কাবু হয়ে মাত্র ২৬ রানে ৩ উইকেট হারায় রূপগঞ্জ। পরে চতুর্থ উইকেটে প্রতিরোধ গড়েন আফিফ ও সাইফ। দুজন মিলে গড়ে তোলেন ১৭৪ বলে ১৭২ রানের জুটি।
তবে দুজনকে মেনে নিতে হয় একই পরিণতি। হাসান মুরাদের বলে ক্যাচ আউট হয়ে ফেরেন সাইফ। ১১২ বলে ৮ চার ও ৪ ছক্কায় তিনি করেন ৯৫ রান।
কিছুক্ষণ পর ৯৮ রানে বোল্ড আফিফ। ৯৬ বলের ইনিংসে ১০ চারের সঙ্গে ১টি ছক্কা মারেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।
পরে জাকের আলি, আকবর আলিরা হতাশ করলে ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় রূপগঞ্জ। দশম উইকেটে অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ৩১ বলে ৪৭ রান যোগ করে পরাজয়ের ব্যবধান কিছুটা কমান তানভির ও রেজাউর রহমান রাজা।
৫ চার ও ২ ছক্কায় ৩৯ বলে ৪৯ রান করেন রাজা। তানভির করেন ১১ বলে ২০ রান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ধানমন্ডি স্পোর্টস ক্লাব: ৫০ ওভারে ৩৩২/৭ (আশিকুর ১৮, হাবিবুর ৫, ফজলে মাহমুদ ১৬, ইয়াসির ১৪৩*, সোহান ৩৩, মইন ৬২, জিয়াউর ৪০, এনামুল ০, মাসুম ১*; শরিফুল ১০-০-৭১-০, তানভির ১০-০-৫০-৩, রাজা ১০-০-৮৭-১, মেহেদি ১০-১-৪১-১, সাইফ ৫-০-১৮-০, সৌম্য ৫-০-৬২-২)
লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জ: ৫০ ওভারে ৩০৮/৯ (সাইফ ৯৫, তানজিদ ১৭, সৌম্য ০, মাহমুদুল ২, আফিফ ৯৮, জাকের ৩, আকবর ১৪, মেহেদি ০, রাজা ৪৯*, শরিফুল ১, তানভির ২০*; এনামুল ১০-৩-৪২-০, মাসুম ৮-০-৭২-৩, মইন ১০-১-৪০-৩, কামরুল ৯-০-৫৪-২, মুরাদ ১০-০-৭৫-১, জিয়াউর ৩-০-১৮-০)
ফল: ধানমন্ডি স্পোর্টস ক্লাব ২৪ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: ইয়াসির আলি চৌধুরি
গাজী গ্রুপের প্রথম জয়
মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অগ্রণী ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবকে ৪ উইকেটে হারায় গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স। ২১৭ রানের লক্ষ্যে ১৪ বল বাকি থাকতে ম্যাচ জিতে নেয় তারা।
অলরাউন্ড নৈপুণ্যে গাজী গ্রুপের নায়ক তোফায়েল আহমেদ। বোলিংয়ে ২ উইকেট নেওয়ার পর ব্যাট হাতে তিনি খেলেন ৫২ রানের ইনিংস।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই দুই ওপেনারকে হারায় অগ্রণী ব্যাংক। ইমরুল কায়েস ও অমিত হাসানের ৮৮ রানের জুটিতে প্রাথমিক ধাক্কা সামাল দেয় তারা।
প্রথম ম্যাচে ৯৪ রান করা ইমরুল এবার আউট হন ৫০ রান করে। ৬১ বলের ইনিংসে ৫ চারের সঙ্গে ২টি ছক্কা মারেন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান।
ইমরুল ফেরার পর দলকে আরও এগিয়ে নেন অমিত। ৬২ বলে ফিফটি করে তিন অঙ্কের দিকে যেতে থাকেন তিনি। কিন্তু তোফায়েলের বলে মিড অফে ধরা পড়ে স্বপ্নভঙ্গ হয় অমিতের। ১১ চারে ১১০ বলে করেন ৮৯ রান।
আর কেউ দায়িত্ব নিতে না পারায় বড় হয়নি অগ্রণী ব্যাংকের সংগ্রহ। গাজী গ্রুপের পক্ষে ৩ উইকেট নেন আব্দুল গাফফার সাকলাইন।
রান তাড়ায় দ্বিতীয় ওভারে ড্রেসিং রুমে ফেরেন এনামুল হক। প্রথম রাউন্ডের মতো এবারও রানের খাতা খুলতে পারেননি অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান।
দ্বিতীয় উইকেটে ১০৭ রানের জুটি গড়েন সাদিকুর ও তোফায়েল। ৮৯ রানে বোল্ড হন সাদিকুর। ৯৬ বলের ইনিংসে ১০ চারের সঙ্গে ২টি ছক্কা মারেন বাঁহাতি ওপেনার।
এরপর অনায়াসেই ম্যাচ জেতে গাজী গ্রুপ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
অগ্রণী ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব: ৪৬.২ ওভারে ২১৬ (ইমরানউজ্জামান ০, সাদমান ২, ইমরুল ৫০, অমিত ৮৯, তাইবুর ২৭, মার্শাল ১৮, শুভাগত ৮, নাঈম ৪, রবিউল ৮*, শহিদুল ২, রুয়েল ০; মুকিদুল ৯-০-৪৫-২, তোফায়েল ৬-০-২৪-২, পারভেজ ৯-০-৩৮-০, সাকলাইন ৬.২-০-৩৫-৩, হাশিম ১০-১-৪২-১, ওয়াসি ৫-০-২৮-০, শামসুর ১-০-৪-১)
গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স: ৪৭.৪ ওভারে ২২০/৬ (সাদিকুর ৮৯, এনামুল ০, তোফায়েল ৫২, শামসুর ৩৮, সালমান ৫, আমিনুল ১৩, পারভেজ ১৪*, গাফফার ০*; রুয়েল ৯.৪-০-৬০-২, রবিউল ৮.২-০-৩৩-২, শহিদুল ৫-০-৩৪-০, নাঈম ১০-১-৩৩-০, তাইবুর ১০-১-৪১-০, শুভাগত ৪.৪-০-১৭-১)
ফল: গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স ৪ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: তোফায়েল আহমেদ