Published : 22 Jun 2025, 11:51 PM
হেডিংলি টেস্টের তৃতীয় দিনে ব্যাটে-বলে লড়াই হলো দারুণ। সেঞ্চুরির দুয়ারে গিয়েও অল্পের জন্য আক্ষেপ নিয়ে ফিরলেন হ্যারি ব্রুক। চমৎকার বোলিংয়ে দেশের বাইরে আরেকবার পাঁচ উইকেটের স্বাদ পেলেন জাসপ্রিত বুমরাহ। প্রথম ইনিংসে ছোট্ট লিড পেল ভারত।
অ্যান্ডারসন-টেন্ডুলকার ট্রফির প্রথম টেস্টে রোববার ইংল্যান্ডকে ৪৬৫ রানে অলআউট করার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতের সংগ্রহ ২ উইকেটে ৯০ রান। প্রথম ইনিংসের ৬ রানের লিড মিলিয়ে ৯৬ রানে এগিয়ে আছে শুবমান গিলের দল।
একাধিকবার জীবন পেয়ে টেস্ট ক্যারিয়ারের নবম ও ঘরের মাঠে প্রথম সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়ে প্রথমবার ৯৯ রানে আউট হন ব্রুক। ২০১৭ সালে জনি বেয়ারস্টোর পর প্রথম ইংলিশ ব্যাটসম্যান হিসেবে এই তেতো অভিজ্ঞতা হলো তার।
শুরু থেকে দারুণ বোলিং করে বুমরাহর শিকার ৮৩ রানে ৫ উইকেট। ৪৬ টেস্টে ১৪ বার ইনিংসে পাঁচ উইকেটের স্বাদ পেলেন ৩১ বছর বয়সী পেসার। এর মধ্যে ১২ বারই দেশের বাইরে।
ভারতের হয়ে দেশের বাইরে টেস্টে সর্বোচ্চ ১২ বার পাঁচ উইকেট ছিল এতদিন কাপিল দেবের। সাবেক অলরাউন্ডারের পাশে বসলেন বুমরাহ।
ইংল্যান্ডে পাঁচ উইকেট পেলেন তিনি তিনবার। ভারতের হয়ে দেশটিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুবারের বেশি এই কীর্তি নেই আর কারো।
প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান ইয়াশাসভি জয়সওয়ালকে দ্বিতীয় ইনিংসে শুরুতেই হারায় ভারত। ব্রাইডন কার্সের দারুণ ডেলিভারিতে কিপারের গ্লাভসে ধরা পড়েন বাঁহাতি ওপেনার।
আরেক ওপেনার লোকেশ রাহুল দলকে এগিয়ে নেন সাই সুদার্শানকে সঙ্গে নিয়ে। অভিষেক ইনিংসে শূন্য রানে ফেরার পর এবার প্রথম বলে চার মেরে রানের দেখা পান সুদার্শান। জমে ওঠে দুজনের পঞ্চাশোর্ধ জুটি।
১০৬ বল স্থায়ী ৬৬ রানের এই জুটি ভাঙেন বেন স্টোকস। ৪৮ বলে ৩০ রান করে শর্ট মিডউইকেটে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন সুদার্শান।
বৃষ্টিতে একটু আগেভাগে খেলা শেষ হওয়ার সময় ৪৭ রানে খেলছিলেন রাহুল। তার সঙ্গী প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান গিল।
এর আগে ৩ উইকেটে ২০৯ রান নিয়ে তৃতীয় দিনের খেলা শুরু করে ইংল্যান্ড। আগের দিনের সেঞ্চুরিয়ান অলিভার পোপ বিদায় নেন দিনের তৃতীয় ওভারে। প্রাসিধ কৃষ্ণার অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ব্যাট চালিয়ে কিপারের গ্লাভসে ক্যাচ দেন তিনি। ১৩৭ বলে ১৪ চারে গড়া তার ১০৬ রানের ইনিংস।
আগের দিন শূন্য রানে অপরাজিত ব্রুক ও স্টোকস প্রথম ঘন্টায় আর কোনো বিপদ হতে দেননি। পানি পানের বিরতির পর মোহাম্মদ সিরাজের বলে বাজে শটে কিপারকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন স্টোকস (৫২ বলে ২০)।
পঞ্চম উইকেটে ৮৮ বলে ৭৩ রানের জুটিতে দলকে এগিয়ে নেন ব্রুক ও জেমি স্মিথ। ওয়ানডে ঘরানার ব্যাটিংয়ে এগিয়ে চলা কিপার-ব্যাটসম্যান স্মিথকে (৫২ বলে ৪০) ফিরিয়ে দ্বিতীয় শিকার ধরেন প্রাসিধ।
আগের দিন শূন্য রানে ক্যাচ দিয়ে ‘নো’ বলের কল্যাণে বেঁচে যাওয়া ব্রুক এ দিন দুই দফায় জীবন পান ৪৬ ও ৮২ রানে, প্রথমবার কিপার রিশাভ পান্ত ও দ্বিতীয়বার জয়সওয়াল ক্যাচ নিতে ব্যর্থ হন।
সিরাজকে একই ওভারে ছক্কা ও চার মেরে নব্বইয়ের ঘরে পৌঁছে যান ব্রুক, প্রাসিধের বলে ২ রান নিয়ে পৌঁছান ৯৯-এ। এক বল পরই শর্ট ডেলিভারিতে হুক শট খেলে ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে ধরা পড়েন তিনি। যেন বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না ২৬ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান। ১১ চার ও ২ ছক্কায় গড়া তার ১১২ বলের ইনিংসটি।
হেডিংলিতে ৯৯ রানে আউট হওয়া তৃতীয় ব্যাটসম্যান ব্রুক। তার আগে এখানে এই তেতো অভিজ্ঞতা হয়েছিল পাকিস্তানের সেলিম মালিক (১৯৮৭) ও ইংল্যান্ডের মাইকেল আথারটনের (১৯৯৪)।
এরপর দ্রুত রান বাড়ান ক্রিস ওকস ও ব্রাইডন কার্স। প্রাসিধকে টানা দুটি ছক্কা মারেন ওকস। স্রেফ ৪৪ বলে ৫৫ রানের জুটি গড়েন তারা। কার্সকে (২৩ বলে ২২) ফিরিয়ে মাথাব্যথার কারণ হয়ে ওঠা জুটি ভাঙেন সিরাজ।
পরে টানা দুই ওভারে ওকস (৫৫ বলে ৩৮) ও জশ টংকে বোল্ড করে ইংলিশদের ইনিংস গুটিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি পাঁচ উইকেট পূর্ণ করেন বুমরাহ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: (তৃতীয় দিন শেষে)
ভারত ১ম ইনিংস: ৪৭১
ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: (আগের দিন ২০৯/৩) ১০০.৪ ওভারে ৪৬৫ (পোপ ১০৬, ব্রুক ৯৯, স্টোকস ২০, স্মিথ ৪০, ওকস ৩৮, কার্স ২২, টং ১১, বাশির ১*; বুমরাহ ২৪.৪-৫-৮৩-৫, সিরাজ ২৭-০-১২২-২, প্রাসিধ ২০-০-১২৮-৩, জাদেজা ২৩-৪-৬৮-০, শার্দুল ৬-০-৩৮-০)
ভারত ২য় ইনিংস: ২৩.৬ ওভারে ৯০/২ (জয়সওয়াল ৪, রাহুল ৪৭*, সুদার্শান ৩০, গিল ৬*; ওকস ৬-২-১৮-০, কার্স ৫-০-২৭-১, টং ৫-০-১৫-০, বাশির ২.৫-১-১১-০, স্টোকস ৫-১-১৮-১)