Published : 11 Apr 2023, 08:20 PM
‘প্রিমিয়ার লিগে এবার ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে খেলা হচ্ছে, বোলারদের তেমন কিছু করার নাই’- ফতুল্লায় মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব ও ব্রাদার্স ইউনিয়নের ম্যাচ চলাকালে বলছিলেন হাবিবুল বাশার। জাতীয় দলের নির্বাচকের এমন মন্তব্যের দিনেই দুই মাঠে ব্যাটসম্যানদের ওপর ছড়ি ঘোরালেন বোলাররা।
ফতুল্লায় জেইক লিন্টটের বাঁহাতি লেগ স্পিনে নাজেহাল হয়েছে ব্রাদার্স। মোহামেডান পেয়েছে টানা চতুর্থ জয়। বিকেএসপিতে বাঁহাতি স্পিনে শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাবকে কুপোকাত করেছেন রায়হান উদ্দিন। নবাগত ঢাকা লেপার্ডস পেয়েছে চলতি লিগে প্রথম জয়ের স্বাদ।
এবারের লিগের সেরা বোলিংয়ে ৩০ রানে ৬ উইকেট নিয়েছেন রায়হান। যা লিস্ট ‘এ’ ক্যারিয়ারে তার সেরা বোলিং। লিন্টটও নিজের ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করেছেন, নিয়েছেন ৩৭ রানে ৫ উইকেট। দুজনই নিজ নিজ ম্যাচে জিতেছেন সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার।
ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলি স্টেডিয়ামে ১৯০ রানের মাঝারি পুঁজি নিয়েও ১০ রানে জিতেছে মোহামেডান। ইনিংসের ১৭ বল বাকি থাকতে অলআউট হয়ে গেছে ব্রাদার্স।
নয় ম্যাচে চার জয় ও এক পরিত্যক্ত ম্যাচের সৌজন্যে ৯ পয়েন্ট টেবিলের ছয় নম্বরে মোহামেডান। সমান ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে আটে ব্রাদার্স।
রান তাড়ায় ব্রাদার্সকে শুরুতে ধাক্কা দেন সাকিব আল হাসান। নিজের দ্বিতীয় ওভারে তানজিদ হাসানের পর চতুর্থ ওভারে সাব্বির হোসেনকে ড্রেসিং রুমে ফেরান মোহামেডানের তারকা অলরাউন্ডার।
চাপ সামলে দ্বিতীয় উইকেটে ৭১ রান যোগ করেন আনিসুল ইসলাম ও জাহিদুজ্জামান। সাবলীল ব্যাটিংয়ে দলকে জয়ের পথেই রেখেছিলেন দুজন। তখনই দৃশ্যপটে আবির্ভাব লিন্টটের।
২০তম ওভারে লিন্টটকে ছক্কা মারতে গিয়ে ওয়াইড লং অনে ইমরুল কায়েসের হাতে ধরা পড়েন আনিসুল। ১ চার ও ৩ ছয়ে ৪৭ বলে করেন ৪০ রান।
পরের ওভারে তিন উইকেট নিয়ে ব্রাদার্সের মিডল অর্ডার ধসিয়ে দেন লিন্টট। ২ চার ও ৩ ছয়ে ৪১ রান করেন জাহিদুজ্জামান। খালি হাতেই ফেরেন আরাফাত সানি জুনিয়র ও নাদিফ চৌধুরি।
এরপর ব্রাদার্সকে এগিয়ে নেন মিনহাজুল আবেদিন। কিন্তু জয়ের জন্য ২১ রান বাকি থাকতে ৩৬ রানে আউট হন তিনি। আব্দুল গাফফারকে আউট করে মোহামেডানের জয় নিশ্চিত করেন মেহেদি হাসান মিরাজ।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে হতাশ করে মোহামেডানের টপঅর্ডার। চার নম্বরে নেমে রান আউটে কাটা পড়েন মিরাজ।
পঞ্চম উইকেটে ইনিংসের সর্বোচ্চ ৫৩ রানের জুটি গড়েন সাকিব ও মাহমুদউল্লাহ। আনিসুলের শর্ট বল পুল করতে গিয়ে হাওয়ায় ভাসিয়ে কট বিহাইন্ড হন ৪৫ বলে ৩৭ রান করা সাকিব।
মাহমুদউল্লাহ করেন টানা দ্বিতীয় ফিফটি। অষ্টম ব্যাটসম্যান ফেরার আগে ২ চার ও ১ ছয়ে ৬৮ বলে ৫৮ রান করেন অভিজ্ঞ তারকা।
শেষ দিকে লিন্টটের ২৮ রানের সৌজন্যে দুইশর কাছাকাছি পৌঁছায় মোহামেডানের স্কোর।
আনিসুল ও মোহর শেখ নেন তিনটি করে উইকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব: ৪৫.৪ ওভারে ১৯০ (ইমরুল ৭, মাহিদুল ১৪, সৌম্য ৯, মিরাজ ৭, সাকিব ৩৭, মাহমুদউল্লাহ ৫৮, শুভাগত ৪, লিন্টট ২৮, নাজমুল ০, মুশফিক ১*; মোহর ৭-০-৩৫-৩, আরাফাত ৮-১-৩১-০, গাফফার ১০-১-৪৪-০, রাহাতুল ৯.৪-০-৪৮-২, আনিসুল ৬-০-১৫-৩, সাব্বির ৫-০-১৩-১)
ব্রাদার্স ইউনিয়ন: ৪৭.১ ওভারে ১৮০ (তানজিদ ১০, আনিসুল ৪০, সাব্বির ১২, জাহিদুজ্জামান ৪১, মাইশুকুর ১৬, আরাফাত ০, নাদিফ ০, মিনহাজুল ৩৬, রাহাতুল ৪, গাফফার ১৩, মোহর ২*; সাকিব ১০-৩-৩০-২, মিরাজ ৭.১-০-৩৬-১, নাজমুল ১০-০-৩১-১, লিন্টট ১০-১-৩৭-৫, শুভাগত ৬-০-২৯-১, মুশফিক ৪-০-১৫-০)
ফল: মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব ১০ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: জ্যাক লিন্টট
রায়হানের ৬ উইকেটে লেপার্ডসের প্রথম জয়
প্রথম বিভাগ থেকে প্রিমিয়ার লিগে উন্নীত হয়ে হারের বৃত্তে বন্দী ছিল ঢাকা লেপার্ডস। নবম রাউন্ডের ম্যাচে রায়হানের হাত ধরে তারা পেল প্রথম জয়।
বিকেএসপির ৪ নম্বর মাঠে শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাবকে ৭৬ রানে হারিয়েছে লেপার্ডস। ২২৩ রানের লক্ষ্যে শাইনপুকুর গুটিয়ে গেছে ১৪৬ রানে।
প্রথম জয় পেলেও সবার নিচেই অবস্থান করছে লেপার্ডস। ৪ পয়েন্ট নিয়ে শাইনপুকুর ঠিক তাদের ওপরে।
লেপার্ডসকে দুইশ ছাড়ানো স্কোর এনে দেওয়ার কারিগর পিনাক ঘোষ ও সাব্বির হোসেন। লিগে নিজের তৃতীয় ফিফটিতে ৬৬ রান করেন পিনাক। বাঁহাতি ওপেনারের ৮১ বলের ইনিংসে ছিল ৯ চার ও ১ ছয়।
ছয় নম্বরে নেমে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন কিপার-ব্যাটসম্যান সাব্বির। ৫ চার ও ১ ছয়ে ৭০ বলে ৫৬ রান।
বল হাতে ফরহাদ রেজার শিকার ৩ উইকেট। জিসান আলম ও হাসান মুরাদ নেন ২টি করে উইকেট।
রান তাড়ায় খালি হাতে ফেরেন শাইনপুকুরের দুই ওপেনার মাহফিজুল ইসলাম ও জিসান। শুরুর এই ধাক্কা আর সামলে উঠতে পারেনি দলটি।
পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার পর আক্রমণে এসে তাদের ধসিয়ে দেন রায়হান। সর্বোচ্চ ৪৯ রান করেন তাহজিবুল ইসলাম। অমিত হাসানের ব্যাট থেকে আসে ৩৪ রান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ঢাকা লেপার্ডস: ৫০ ওভারে ২২২ (শোভন ১, পিনাক ৬৬, জাকিরুল ২৪, উমর ৭, আশিকুর ৫, সাব্বির ৫৬*, সোহরাওয়ার্দি ৭, মইন ৩৪, রায়হান ১১, আরিফুল ২, শাকিল ০; মেহেদি ৫-০-৩৬-১, ফরহাদ ৭-১-৪৭-৩, শুভাম ১০-০-৩২-০, মুরাদ ১০-১-২৬-২, নাবিল ১০-১-২৮-০, জিসান ৮-০-৪৪-২)
শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাব: ৩৮.২ ওভারে ১৪৬ (মাহফিজুল ০, জিসান ০, অমিত ৩৪, শুভাম ২৩, আইচ ১, তাহজিবুল ৪৯, সাজ্জাদুল ১১, ফরহাদ ৬, মেহেদি ৫, মুরাদ ৭, নাবিল ০*; আরিফুল ৭-০-২২-১, শাকিল ৬-১-২৩-১, সোহরাওয়ার্দি ৮-১-২৫-১, রায়হান ৭.২-১-৩০-৬, মইন ৭-১-২২-১, উমর ২-০-১৪-০, আশিকুর ১-০-৮-০)
ফল: ঢাকা লেপার্ডস ৭৬ রানে জয়ী
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: রায়হান উদ্দিন
সিটি ক্লাবের বিপক্ষে গাজী গ্রুপের অনায়াস জয়
মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিটি ক্লাবকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স। ২১৫ রানের লক্ষ্য ১৮ বল হাতে রেখেই ছুঁয়ে ফেলেছে আকবর আলির নেতৃত্বাধীন দলটি।
নয় ম্যাচে চার জয় ও এক পরিত্যক্ত ম্যাচের সৌজন্যে ৯ পয়েন্ট নিয়ে পাঁচ নম্বরে রয়েছে গাজী গ্রুপ। সিটি ক্লাব ৬ পয়েন্ট নিয়ে অবস্থান করছে নয়ে।
গাজী গ্রুপের অনায়াস জয়ের নায়ক সুমন খান। ৫০ রানে ৪ উইকেট নিয়েছেন ডানহাতি মিডিয়াম পেসার। তার হাতেই ওঠে ম্যাচ সেরার পুরস্কার।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে সিটি ক্লাবের শুরুটা তেমন ভালো হয়নি। অল্পেই ফিরে যান তৌফিক খান ও শাহরিয়ার কোমল।
চার নম্বরে নামা মাজ সাদাকাত পাল্টা আক্রমণের পথে হাঁটলেও বেশি দূর যেতে পারেননি। ৪ চার ও ১ ছয়ে ১৭ বলে করেন ২৫।
ওপেনার মইনুল ইসলাম খেলেন ৩৭ রানের ইনিংস। অধিনায়ক আসিফ আহমেদ ২ চার ও ৩ ছয়ে করেন ৯৭ বলে ৬০ রান।
সাত নম্বরে নামা আব্দুল্লাহ আল মামুন ২টি করে চার-ছয়ে ৪৭ রানের ইনিংস খেলে দলকে দুইশ পার করান।
রান তাড়ায় ঝড়ো শুরু করেন গাজী গ্রুপের ওপেনার হাবিবুর রহমান। তবে ইনিংস বড় করতে পারেননি। ৫ চারে ১১ বলে ফেরেন ২১ রানে।
দ্বিতীয় উইকেটে ৮৩ রান যোগ করেন ফরহাদ হোসেন ও মেহেদি মারুফ। মইনুলের বলে স্টাম্পিং হয়ে ২ রানের জন্য ফিফটি মিস করেন ফরহাদ। ৬৫ বলের ইনিংস সাজান ৫ চার ও ১ ছয়ে।
মেহেদি খেলেন অনেকটা টেস্ট মেজাজে। প্রায় তিন ঘণ্টা ক্রিজে থেকে ১১৯ বল মোকাবিলায় ৭ চারে করেন ৬৬ রান।
তবে চার নম্বরে নেমে সাবলীল ব্যাটিং করেন আকবর। ২ চার ও ৩ ছয়ে ৫৪ বলে ৫০ রানের ইনিংসে দলকে এনে দেন সহজ জয়।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
সিটি ক্লাব: ৫০ ওভারে ২১৪ (তৌফিক ০, মইনুল ৩৭, শাহরিয়ার ৪, মাজ ২৫, আসিফ আহমেদ ৬০, রাফসান ১, মামুন ৪৭, রবিউল ৪, রায়ান ৩, ইফরান ৯, আসিফ হাসান ১*; সুমন ১০-০-৫০-৪, কাজি অনিক ১০-২-৪৫-১, এনামুল ১০-২-২৮-২, রবি ৩-০-১৩-০, টিপু ১০-০-৪৮-২, মাহমুদুল ৭-১-২২-০)
গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স: ৪৭ ওভারে ২১৫/৫ (মেহেদি ৬৬, হাবিবুল ২১, ফরহাদ ৪৮, আকবর ৫০, রবি ১৮, মাহমুদুল ৩, মেহেরব ৩*; রবিউল ৯-০-৫৫-১, ইফরান ৬-০-২৮-২, আসিফ হাসান ১০-১-৩৮-১, মাজ ৯-১-৩৪-০, মইনুল ১০-২-৪৩-১, রাফসান ৩-০-১৬-০)
ফল: গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স ৫ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: সুমন খান