Published : 20 May 2025, 02:49 PM
সারফারাজ খানই তো? ধন্দে পড়ে যতে পারেন অনেকেই। প্রতিভার ঝলক দেখিয়ে ভারতীয় ক্রিকেটে পরিচিতি পেয়েছেন তিনি অনেক আগেই। এখন তো ছয়টি টেস্টও খেলে ফেলেছেন। তার পরও তাকে দেখলে চিনতে একটু সময় লাগতে পারে অনেকের। ওজন ঝরিয়ে যে অন্য এক মানুষে পরিণত হয়েছে ২৭ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যান!
সারফারাজের এই ফিটনেস অভিযানের সঙ্গী গোটা পরিবার। বাড়ির সবার ভাত-রুটি খাওয়া বন্ধ। তার বাবা ও কোচ নাওশাদ খানের ওজন কমেছে ১২ কেজি! হিন্দুস্তান টাইমসকে সেই গল্প শুনিয়েছেন নাওশাদ।
ভারতের বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে তোলপাড় তুলে পরে ঘরোয়া ক্রিকেটে রানের জোয়ার বইয়ে দিয়ে অপেক্ষার অনেক পালা ও যন্ত্রণাভঙ্গের বেদনা সয়ে অবশেষে গত বছর টেস্ট ক্রিকেটে পা রাখেন সারফাররাজ। অভিষেক টেস্টে রাজকোটে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ইনিংসেই করেন আগ্রাসী ফিফটি।
ফিফটি করে ক্যারিয়ারের তৃতীয় টেস্টেও। চতুর্থ টেস্টে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরির স্বাদ পেয়ে সেটিকে নিয়ে যান দেড়শতে। তবে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ওই সিরিজের পরের দুই টেস্টে ভালো করতে পারেননি। পরে অস্ট্রেলিয়ায় বোর্ডার-গাভাস্কার সিরিজের দলে থাকলেও কোনো ম্যাচে খেলার সুযোগ পাননি।
আগামী মাসেই ভারতের মহাগুরুত্বপূর্ণ ইংল্যান্ড সফর। রোহিত শার্ম, ভিরাট কোহলির বিদায়ের পর ভারতের ব্যাটিং লাইন আপে জায়গাও তৈরি হয়েছে। তবে সেই জায়গা নেওয়ার জন্য ভারতীয় ক্রিকেটে প্রতিভার তো অভাব নেই! অনেকেই মুখিয়ে আছেন একটু সুযোগের জন্য।
তাদের অগ্রভাগেই থাকবেন সারফারাজ। সুযোগই হয়তো মিলবে তার। কিন্তু ইংল্যান্ডের কন্ডিশনে সুযোগ কাজে লাগানো হবে বড় চ্যালেঞ্জ। সেটির জন্যই নিজেকে তৈরি করছেন তিনি। আইপিএলে তার সুযোগ হয়নি। সময়টা কাজে লাগাচ্ছেন নিজেকে ঘষেমেজে আরও শাণিত করে তুলতে।
তার প্রতিভা নিয়ে যেমন আলোচনা হয় অনেক, তেমনি বাড়তি ওজন ও ফিটনেস নিয়ে প্রশ্নও উঠেছে নানা সময়ে। সেটিই এখন ঝেরে ফেলার পালা চলছে।
ক্রিকেট কোচ নাওশাদ খান কতটা ত্যাগ আর পরিশ্রম দিয়ে দুই সন্তান সারফারাজ খান ও মুশির খানকে গড়ে তুলেছেন, তা ভারতীয় ক্রিকেটের রোমাঞ্চকর এক গল্প। এবার সারফারাজের এখনকার চ্যালেঞ্জ জয়ের অভিযানেও সঙ্গী সেই বাবা, পাশাপাশি গোটা পরিবারও।
নাওশাদ খান জানালেন, বাড়ির সবাই ত্যাগ স্বীকার করছেন সারফারাজের জন্য।
“আমাদের ডায়েট নিয়ন্ত্রণ করেছি আমরা। গত এক-দেড় মাসে বাড়িতে রুটি বা ভাত খাইনি আমরা। আমরা ব্রকোলি খাই, শশা, গাজর, সালাদ ও সবুজ সবজি খাই। এসবের সঙ্গে পোড়া মাছ, পোড়া মুরগি, সেদ্ধ মুরগি, সেদ্ধ ডিম, এসব খাই। গ্রিন টি ও গ্রিন কফিও পান করছি আমরা।”
“আমরা অ্যাভোকাডোও খাই, বিভিন্ন ধরনের বিজও। তবে মূল ব্যাপার হলো, রুটি ও ভারত বন্ধ করে দিয়েছি। চিনি বন্ধ করে দিয়েছি। ময়দা ও বেকারি ধরনের খাবারও বন্ধ।”
সারফারাজের প্রিয় খাবার মাটন ও চিকেন বিরিয়ানি। বলার অপেক্ষা রাখে না, সেসবের সঙ্গে এখন পুরোপুরি আড়ি চলছে। সুফল কতটা মিলছে, শোনালেন নাওশাদ।
“দেড় মাসে তার (সারফারাজ) প্রায় ১০ কেজি কমেছে। ওজন আরও কমাতে কাজ করছে সে। আমিও ১২ কেজি কমিয়েছি আমার হাঁটুর সমস্যার জন্য। আমারও এতে লাভ হয়েছে। চিকিৎসকরা বলেছেন, আমার হাঁটুর রিপ্লেসমেন্ট লাগবে। এটার জন্য ওজন কমানো জরুরি ছিল।”
অনেক সময় ওজন বেশি কমালে তা ক্ষতিকরও হতে পারে ক্রিকেটারদের জন্য। কারষ, অনেক সময় শরীরের ভারসাম্য হারিয়ে তাল রাখতে পারেন না ক্রিকেটাররা। বড় একটি উদাহরণ ইনজামাম-উল-হক। ২০০৩ বিশ্বকাপে ওজন অনেক কমিয়ে ঝরঝরে হয়ে গিয়েও ব্যর্থ হয়েছিলেন পাকিস্তানি গ্রেট। ছয় ইনিংসে মোট রান ছিল তার ১৯! পরে মজা করে বহুবার বলেছেন, ’১৯ কেজি ওজন কমিয়ে স্রেফ ১৯ রান করতে পেরেছিলাম।’
সারফারাজের ক্ষেত্রে সেই ভারসাম্য রক্ষার ভাবনাও নিশ্চয়ই চলছে।
ফিটনেস তো প্রস্তুতির একটি দিক। ব্যাটিং ঝালাই করারও চলছে সমান তালে। ইংল্যান্ডের কন্ডিশনকে ভাবনায় রেখে গুরুত্ব পাচ্ছে সুইং বল সামলানো।
“ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে বাড়ি থেকে বের হই আমরা। ক্রস ময়দানে যাই আমরা, যেটা ১৫ কিলোমিটার দূরে। সোয়া ছয়টা, সাড়ে ছয়টার মধ্যে পৌঁছে যাই। এরপর গা গরম করে, রানিং, ফিল্ডিং করে ব্যাটিং অনুশীলন শুরু হয়। পুরো সকালের সেশনে লাল বলে ব্যাটিং অনুশীলন চলে। সাড়ে ১০টার দিকে বাড়িতে ফিরে নাশতা সেরে নিয়ে বিশ্রামের পালা।”
“বাড়িতে আমাদের কৃত্রিম টার্ফ আছে। পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিয়ে বিকেলে ব্যাটিং অনুশীলন শুরু হয়। সেখানে ৩০০ থেকে ৫০০ সুইং ডেলিভারি খেলে থাকি আমরা। ব্যাটিংয়ের পর সময় থাকলে জিমে যাওয়া হয়। বিকেলে কোনোদিন ব্যাটিং সেশন না থাকলে সরাসরি সাঁতার ও জিমে চলে যাই আমরা।”
এভাবেই চলছে সারফারাজের নিজেকে ভেঙেগড়ার পালা। ইংল্যান্ডে টেস্ট সফরের আগে ভারতীয় ‘এ’ দলের হয়ে খেলার সুযোগ পাবেন সারফারাজ। সেখানে যেমন প্রস্তুতি আরও ভালো করে নিতে পারবেন, তেমনি টেস্ট একাদশে জায়গার দাবিও জানাতে পারবেন পারফর্ম করে।
সারফরাজের ছোট ভাই ২০ বছর বয়সী মুশির খানের প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারের শুরুটাও হয়েছে দুর্দান্ত। ৯ ম্যাচ খেলে একটি ডাবল সেঞ্চুরি ও আরও দুটি সেঞ্চুরি করে ফেলেছেন তিনি। ব্যাটিং গড় ৫১.১৪। পাশাপাশি বাঁহাতি স্পিনে উইকেট নিয়েছেন ৮টি